রানা খুব সহজ-সরল ও সৎ একজন মানুষ। মানুষের উপকার করতে পারলে নিজেকে খুব ধন্য মনে করে সে। ধর্মের প্রতি ওই রকম মন না থাকলেও ওর বাবা অতি মাত্রায় ধার্মিক হওয়াতে তার ছােট বােনদের এবং ওরও ওই লেবাসই ধরে রাখতে হয়। সে নিজেকে এভাবে রাখতেই সুখী ভাবত। আধুনিক জীবন যাপন করতে না পারলেও সে তাে তার বাবা-মায়ের অবাধ্য হচ্ছে না। এই বয়সে সবাই ফেসবুক, নাটক, সিনেমা, পয়লা বৈশাখ, ১৪ ফেব্রুয়ারি, মেয়েদের সাথে ফোনে কিংবা অন্যান্য উপায়ে ডেটিং নিয়ে পড়ে থাকে। কিন্তু রানা ভালােবাসত ক্রিকেট খেলতে ও দেখতে, বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতে। ' তার টাউনের বাসার পাঁচ মিনিটের ব্যবধানের পথে দুটি সিনেমা হল ছিল । তাই সে ছােটবেলায় মাঝেমধ্যে রােমান্টিক সিনেমা দেখত পালিয়ে পালিয়ে। সে কলেজ জীবনে ইংরেজি বিভাগের ছাত্র হওয়া সত্ত্বেও বাবার ঐতিহ্যবাহী ধর্মীয় পােশাক পরত । কল্পনাকে সে বরাবরই প্রাধান্য দিত। সে কোনাে বিষয়ে যা দেখায় তার চেয়ে অনেক বেশি কল্পনাতে আঁকত। তার মনে অনেক আধুনিকতা স্পর্শ করলেও বাবার কারণে তাকে সম্পূর্ণ বিরত থাকতে হতাে। মাঝেমধ্যে করে ফেললেও তার বাবার কড়া শাসনে সে অনিয়ম থেকে বিরত থাকত। তার নানার বাড়ি ঐতিহ্যগতভাবে বাবার বাড়ির চেয়ে আধুনিক। এই আধুনিক থাকাতে সে তাদের প্রতি একটু দুর্বল হলেও বাবার বাড়ির সকলকে সমান চোখেই দেখত। নানাবাড়ির আধুনিকতা স্পর্শ না করতে পারে তার কারণে কোনাে অনুষ্ঠান এমনকি কোনাে আত্মীয় বাড়িতে বেড়াতে যাওয়াও পছন্দ করত না তার বাবা। তাই সে ছােটবেলা হতেই অতিমাত্রায় ভীরু এবং কল্পনাপ্রিয় হয়ে ওঠে। ওর মামাবাড়ির সবচেয়ে প্রিয় খালা এবং মামারা। তাই তাদের সাথে অনেক ফ্রি ছিল। বিশেষ করে ছােট দুই খালার সাথে সব কিছু শেয়ার করত। ছােটবেলা থেকে অতি শাসনে থাকার কারণে আধুনিক সমাজের একটু অনুপযােগী হয়েই উঠল রানা । সে মাদ্রাসায় আসার আগে প্রাইমারিতে বৃত্তি পায় । কিন্তু তার বাবা তাকে জোর করে মাদ্রাসায় পড়তে দেয়। যদিও তার বাবার ওয়াদা ছিল বৃত্তি পেলে স্কুলে পড়াবে। কিন্তু তা আর করেনি। সে যখন ক্লাস নাইনে পড়ে ঠিক তখন সে বিজ্ঞান বিভাগে পড়তে চাইলেও সেটা হয়নি। মাদ্রাসার গণ্ডি পেরিয়ে কলেজে ভর্তি হলাে। নতুন এক জীবন। এক জেল হতে মুক্তি । কিন্তু হাতিকে যেভাবে তিন হাত শিকল পরিয়ে বেঁধে রেখে দড়ি ছাড়াই সার্কাস প্রদর্শন করে, ঠিক সেভাবেই কলেজ লাইফে সার্কাসের হাতির মতাে