‘কপোত-কপোতী’Ñখুব শুনে আসা এক শব্দযুগল। উচ্চারণেই ভালোলাগার আবেশ-আবেগে মথিত হওয়ার উপক্রম। কপোত-কপোতী বয়সের তাড়না, বয়সের দাবি। জুটি বাঁধা এক জোড়া কবুতরের কথা আমরা ভাবতে পারি। সে এক সুখময় স্বর্গীয় দৃশ্য। কপোত-কপোতীর শুভ্র পালকের মতোই পবিত্রতা ধারণ করে আছে। ওই প্রেম মানবমনেও আসে স্বর্গ থেকে। এমন সব আবেগময় কথা পাঠক উপলব্ধি করতে পারবেন কবি ও কথাশিল্পী প্রদীপ কুমার কর্মকারের ‘কপোত-কপোতী’ উপন্যাসটি পড়ে। সুন্দর সুশোভিত প্রচ্ছদে; যাতে পড়েছে আল নোমানের তুলির আঁচড়Ñধবধবে সাদা অফসেট কাগজে ঝকঝকে ছাপায় ছয় ফর্মার বইটি প্রকাশ করেছে সাহিত্যদেশ প্রকাশন। ২০১৮ সালের বই মেলায় প্রকাশিত কপোত-কপোতী গদ্য সাহিত্যের ভাÐারকে সমৃদ্ধ করল। উপন্যাসজুড়ে বেশ কয়েক যুগল কপোত-কপোতী চরিত্রের উপস্থিতি রয়েছে। চ‚ড়ান্ত যুগল কপোত-কপোতী। উপন্যাসের কেন্দ্রীয় চরিত্র সুলেখা-শ্যামলকে নিয়ে কাহিনির পরিসমাপ্তি ঘটেছে। কপোত-কপোতীর মিলনাত্মক ক্যানভাস পাঠককে অনাবিল প্রশান্তি দেবে। উপন্যাসিকের বর্ণনাÑ ‘সুলেখা কোথায়? ওই তো। তাকাতেই দেখলেন অপরূপ এক প্রতীমা শ্বেতশুভ্র রূপ নিয়ে সামনে দÐায়মান। এত সুন্দর সে...আজ যদি শ্যামলের সাথে বিয়েতে রাজি হতেন তাহলে হয়তো তার জীবনে এমন দুর্ঘটনা ঘটত না। আর শ্যামলের জীবনটাও এমন হতো না...।’ অতঃপর শ্যামলের মাকে আমরা দেখি সুলেখাকে বুকে জড়িয়ে ধরতে। ভাগ্যবিড়ম্বিত সুলেখা বলল, ‘আমি বাঁচতে চাই না, বাঁচতে চাই না।’ কিন্তু কৌশলী ঔপন্যাসিক প্রদীপ কুমার কর্মকার কপোতী সুলেখাকে বাঁচিয়ে রেখেছিলেন উপন্যাসের আদর্শ চরিত্র মানবতাবাদী, দেশদরদি নায়ক কপোত শ্যামলের জন্য। ঔপন্যাসিক কপোত-কপোতীর স্বর্গীয় মিলনের চরম মুহূর্তেই পরম ছবি এঁকেছেন শেষ তিনটি বাক্যেÑ‘দরজায় কড়া নাড়তেই খুলে গেল দরজা। দেখল পরম শান্তিতে ঘুমাচ্ছে শ্যামল। সুলেখা ঝাঁপিয়ে পড়ল তার লোমশ বুকে।’ উপন্যাসের পাশর্^ নায়ক নীলকান্ত আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত হয়েও কৃষিকাজে মনোযোগী হয়। সে কৃষিতে জাতীয় পদক লাভ করে। তাকে দেখে যুবকেরা উদ্বুদ্ধ হয়। উপন্যাসে দেশের কৃষি-প্রাণিসম্পদ-মৎস্য উন্নয়নের এক উজ্জ্বল চিত্র ফুটিয়ে তুলেছেন ঔপন্যাসিক। কপোত-কপোতী উপন্যাসের নায়িকা সুলেখা দেখেছে দেশের চিকিৎসাকেন্দ্রের অনাচারী হালÑএখানে প্রশান্ত সাহেবের মতো কামুক ডাক্তাররা কীভাবে নারী ডাক্তারদের হেনস্তা করে। সুলেখা তাকে উচিত শিক্ষাই দিতে পেরেছে। নায়ক শ্যামল ডাক্তার। দরদি এক মহিলা তাকে হাসপাতাল করে দেয়। সেই হাসপাতাল নিয়ে সে পড়ে থাকে আর ভাগ্যবিড়ম্বিতাÑসামাজিক কুসংস্কার যাকে নিগৃহীত করেছিল সেই সুলেখা অবশেষে ডাক্তার হয়। ‘কপোত-কপোতী’ উপন্যাস মেয়েদের অপয়া ভাবা আর অপবাদ দেওয়ার বিরুদ্ধবাদী লেখা। এখানে সুলেখার বিয়ে হওয়ার কথা ছিল শ্যামলের সাথে। কিন্তু ছেলেপক্ষ মেয়ে দেখার যাত্রাপথে লঞ্চডুবির শিকার হয়। মারা যায় শ্যামলের বাবা। মা রুখে দাঁড়ায় এ বিয়ের বিরুদ্ধে। তার পরও উপন্যাসের শেষে আমরা দেখি, একজন নারী আরেকজন নারীর ওপর সদয় হলো। সামাজিক পটভ‚মিতে লেখা উপন্যাসটি তাই সুখপাঠ্য ও সার্থক হয়ে উঠেছে।
কবি প্রদীপ কুমার কর্মকার লেখালেখি করছেন দুই যুগেরও অধিককাল ধরে। প্রচারবিমূখ বলেই তিনি বই প্রকাশে আগ্রহী ছিলেন না। শুভাকাক্সিক্ষদের প্রেরণায় প্রথম কবিতার বই ‘উচ্ছ্বসিত নদী’ প্রকাশিত হয় অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০১৬-তে। ছোটগল্পের বই ‘এক ঝুড়ি গল্প’ প্রকাশিত হয় অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০১৭-তে। এবার প্রকাশিত হল উপন্যাস ‘কপোত কপোতি’। তার রচিত কবিতা, ছোটগল্প বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত হচ্ছে। অনেক গুণের অধিকারী এই লেখকের জন্ম ১৯৬০ সালের ১৩ মার্চ পটুয়াখালী সদর উপজেলার নতুন বাজার, চরপাড়ায়। পিতা শ্রী নরেন্দ্র লাল কর্মকার এবং মাতা শ্রীমতি যমুনা বালা কর্মকার। কবি প্রদীপ কুমার কর্মকার মূখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা (এক্টোপ্যারাসাইট শাখা) হিসেবে প্রাণিসম্পদ গবেষণা প্রতিষ্ঠান-ঢাকায় কর্মরত। একজন প্রকৃত পেশাজীবী ও সংগঠক হিসেবে তার খ্যাতি ও সুনাম রয়েছে। তিনি বাংলাদেশ বেতারের বিশেষ গ্রেডের শিল্পী। বর্তমানে বাংলাদেশ বেতার-ঢাকার নিয়মিত রবীন্দ্র সঙ্গীত শিল্পী। ১৯৮৩ সাল থেকে বাংলাদেশ বেতারের রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী হিসেবে খুলনা, চট্টগ্রাম, বরিশাল বেতারে সংগীত পরিবেশন করে আসছেন। এছাড়াও তিনি ‘কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন-বাংলাদেশ’ ভোলা জেলা শাখায় পরপর দুইবার সভাপতি নির্বাচিত হন। তিনি ‘বিসিএস লাইভস্টক অ্যাসোসিয়েশন’ এবং ‘বাংলাদেশ ভেটেরিনারি অ্যাসোসিয়েশন’র একজন সক্রিয় কর্মী। লেখালেখি, পেশাগত ও সামাজিক কল্যাণে তার সংশ্লিষ্টতা অনুকরণীয়।