“দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে হিটলারি অভিযান" বইটির ফ্ল্যাপ এর লেখাঃ হিটলার কোনাে বিপ্লবের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করেননি। কিন্তু রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা লাভের পর তিনি বিপ্লব ঘটালেন এবং সমস্ত কিছুর ওলটপালট ঘটাতে শুরু করলেন। কিন্তু এসকল কার্যক্রমও তিনি যথাসম্ভব ‘আইন-অনুসারে’ ঘটাতে চেয়েছিলেন । পটসডামে পার্লামেন্টের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের দুই দিন পর বার্লিনে রাইখস্ট্যাগের নিয়মমাফিক যে অধিবেশন অনুষ্ঠিত হলাে, তাতে হিটলার অসাধারণ ধূর্তবুদ্ধি সহকারে এমন একটি আইন পাস করিয়ে নিলেন যে, তাতে তিনি সংবিধান ও প্রেসিডেন্টকে ডিঙ্গিয়ে তাঁর ইচ্ছামতাে রাজত্ব চালাতে ও কায়েম করতে পারেন। এই আইনের নাম হলাে-Enabling Law অর্থাৎ যে আইনের ক্ষমতা। বলে ‘জনগণের ও রাষ্ট্রের দুরবস্থা দূর করা যায় ।। হিটলারি রাজত্ব আরম্ভের এটাই ছিল মৌলিক আইন এবং তিনি। নানা প্রকার কৌশল খাটিয়ে ও ধাপ্পা দিয়ে রাইখস্ট্যাগে দুইতৃতীয়াংশ ভােটের জোরে এই বিলটি পাস করিয়ে নিলেন। ক্রমে সমগ্র জার্মানির উপর তিনি একচ্ছত্র শাসন ও ডিক্টেটরি প্রতিষ্ঠা। করলেন এই আইনের ভিত্তির উপর দাঁড়িয়ে। সুতরাং হিটলার নিজেকে সর্বশ্রেষ্ঠ জার্মান’ বলে দাবি করতে পারেন বৈকি? এরপর হিটলারের পথ একেবারেই খুলে গেল, এতদিন তিনি। ছিলেন চ্যান্সেলর বা প্রধানমন্ত্রী, এবার তিনি খােদ রাষ্ট্রপ্রধানের পদে বসলেন। বৃদ্ধ মার্শাল হিন্ডেনবুর্গের দিন ঘনিয়ে এসেছিল ২রা আগস্ট (১৯৩৪), ৮৭ বছর বয়সে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। আর দুপুর বারােটার সময়েই ঘােষণা করা হয়, আগের দিন ক্যাবিনেটের গৃহীত এক আইন অনুসারে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর পদ এক করা হলাে এবং এডলফ হিটলার রাষ্ট্রের প্রধান হিসেবে সমস্ত ক্ষমতার অধিকারী হলেন । তিনি সশস্ত্র বাহিনীর সর্বাধিনায়ক পদেও (কমান্ডার ইন চিফ অব দি আর্মড ফোর্সেস) বৃত হলেন। এভাবে হিন্ডেলবুর্গের শূন্য পদের জন্য কোনাে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলাে না। সুতরাং সংবিধান অগ্রাহ্য করেই হিটলারকে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পদে ‘মনােনীত করা হলাে। কিন্তু এই নিরঙ্কুশ ক্ষমতালাভের মধ্যেও যাতে কোথাও ছিদ্র না থাকে, এজন্য হিটলার সৈন্যবাহিনীর অফিসার ও সদস্যদের নিকট থেকে আনুগত্যের শপথ আদায় করে ছাড়লেন। এ শপথ জার্মানির নামে নয়, সংবিধানের নামেও নয়, ব্যক্তিগতভাবে কেবল হিটলারের নামে গ্রহণ করতে হবে ।
আনু মাহমুদ তরুণ অর্থনীতিবিদ, প্ৰবন্ধকার, কলাম লেখক ও গ্রন্থকার হিসেবে ইতোমধ্যে বেশ পরিচিতি অর্জন করে সুধী পাঠক সমাজে একটি স্থান আয়ত্ত করতে সক্ষম হয়েছেন। যদিও তিনি তার কর্মপরিসরে সরকারি কর্মকর্তা ও এ্যাডমিনেস্ট্রেটিভ সার্ভিসের সদস্য হিসেবে মোঃ মাহমুদুর রহমান নামেই সমধিক পরিচিত। বর্তমানে তিনি বাংলাদেশ সরকারের উপসচিব এবং জাতীয় গ্ৰন্থকেন্দ্রের পরিচালক হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। আনু মাহমুদ বেশ সময় ধরে লেখা-লেখির সাথে জড়িত রয়েছেন এবং অনেক চড়াই উৎরাই করে দীর্ঘ পথ পরিক্রমার মাধ্যমে পরিস্ফুটিত হয়েছেন গ্রন্থকারের বর্তমান অবস্থানে এবং সংগ্রহের ঝুলিতে অর্জন করেছেন আর্থ-সামাজিক সমস্যা সম্পর্কিতসহ বহু বিষয় ভিত্তিক গ্রন্থের সফলতা, যা ইতোমধ্যে পাঠক সমাজে বেশ সমাদৃতও হয়েছে। তাঁর লেখালেখির শুরু হয়েছে সেই ছাত্র অবস্থা থেকে, আর তা ক্ৰমান্বয়ে শিকড় গেড়ে পত্র পল্লবে শোভিত হয়ে শাখা বিস্তার করে বর্তমানে রূপ নিয়েছে কাণ্ডে, বৃক্ষে। কিন্তু তার প্রত্যাশা রয়েছে একে ব্যাপক প্রসার ঘটিয়ে এক বিরাট বটবৃক্ষের রূপ দেয়ার। লেখালেখির জগতে যেমন জড়িযে আছেন তেমনি আর্থ-সামাজিক সংগঠনের সাথে। তাঁর স্ত্রী আনোয়ারা মাহমুদ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক। তাদের দুই সন্তান চাঁদনি ও ইযু। তিনি বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ এবং সাবেক সংসদ সদস্য, জনাব মজিবর রহমান তালুকদারের দ্বিতীয় সন্তান।