বঙ্গবন্ধু নিয়ে গবেষণার শেষ নেই। এখনও কত কিছুই অজানা রয়ে গেছে। বঙ্গবন্ধু যখন কলকাতায় ইসলামিয়া কলেজের ছাত্র ছিলেন তখন তার প্রিয় বন্ধু ছিলেন নীহার রঞ্জন চক্রবর্তী। মি. চক্রবর্তী বঙ্গবন্ধুর চার বছরের ছোটই হবেন। দুজনই পাশাপাশি কলেজের একই বর্ষের ছাত্র ছিলেন। আমরা জানি, বঙ্গবন্ধুর স্কুল-জীবনে তিন-চার বছরের একটা বিরতি ছিল শারীরিক অসুস্থতার কারণে। শেখ মুজিব যখন ইসলামিয়া কলেজের ছাত্র সংসদের সম্পাদক, কলেজের (এখনকার মওলানা আজাদ কলেজ) ছাত্র সংসদের বোর্ডে লেখা আছে সম্পাদক এম রহমান ও নীহার চক্রবর্তী তখন পাশের কলেজ স্কটিশ চার্জ কলেজের সম্পাদক। স্কটিশ চার্জ কলেজ খুব বিখ্যাত কলেজ; স্বামী বিবেকানন্দ, নেতাজী সুভাষ বসু এই কলেজের ছাত্র ছিলেন। ১৯৪৬-৪৭ শিক্ষাবর্ষে ইসলামিয়া কলেজের শেখ মুজিবুর রহমান সম্পাদক ও স্কটিশ কলেজের ছাত্র সংসদের সম্পাদক ছিলেন নীহার চক্রবর্তী। নীহার চক্রবর্তীর বয়স এখন ১০০ বছর। তার সাথে কথা বলার পর থেকে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে গবেষণা করার নতুনভাবে প্রেরণা পেয়েছি। মূলত বঙ্গবন্ধুর যে রেলের প্রতি গভীর আগ্রহ ছিল সে-ব্যাপারে বঙ্গবন্ধু কলকাতার ছাত্র-জীবনের বন্ধু নীহার চক্রবর্তী বিশদভাবে বর্ণনা করেছিলেন। মিলিয়ে দেখেছিলাম ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’তে বঙ্গবন্ধুর রেলভ্রমণ নিয়ে অনেকবার বর্ণনা এসেছে। সব মিলিয়ে লিখেছি ‘রেলভ্রমণে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান’। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৭ সালের ১ ফেব্রæয়ারি অমর একুশে গ্রন্থমেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ‘আমার দেখা নয়াচীন’ গ্রন্থটি উন্মোচন করেছিলেন। বইটা হাতে পাওয়ার পর থেকে টানা তিন দিন এই বই দুবার খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পড়েছি। ওই দুদিন অফিসে যাইনি। লিখে ফেলেছিলাম ‘বিশ্লেষণ : আমার দেখা নয়াচীন’। ২০১০ সালে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে গিয়ে জাতিসংঘের স্থায়ী মিশনে স্বাধীনতা-পরবর্তী বাংলাদেশ সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুস সামাদ আজাদের জাতিসংঘের মহাসচিব বরাবর স্বাক্ষরযুক্ত আবেদনপত্রটি দেখার পর এ-বিষয়ে একটা লেখার তাগিদ বোধ করেছিলাম। পরবর্তীতে বেশ ক’বছর পর লিখলাম ‘জাতিসংঘের সদস্যপদ লাভের ৪৬ বছর’। শ্রীমঙ্গলের চা-বাগানে গিয়েছি বেশ করেকবার, সেখানে চা-বাগানের পুরনো শ্রমিকদের সাথে বঙ্গবন্ধু-বিষয়ক গল্প শুনতে শুনতে ‘শ্রমজীবী মানুষের জীবনমান উন্নয়নে বঙ্গবন্ধুর অবদান’ লেখার সূত্র খুঁজে পাই।
সুভাষ সিংহ রায়, জন্ম ১৯৬৬ সালে, যশাের জেলায়, বিখ্যাত সিংহ রায় পরিবারে সাহিত্য, সংস্কৃতি ও বাগ্মিতা তার রক্তে। পেশায় ওষুধ বিজ্ঞানী, প্রবলভাবে রাজনীতি করেন, একসময় তুখােড় ছাত্রনেতা ছিলেন। লিখতে শুরু করেছেন বেশ আগে থেকেই, কলামিস্ট হিসেবে নানা পত্রিকায়। বাংলাদেশের বিতর্ক চর্চায় যে ক'জন নতুন ধারা সূচনা করেন সুভাষ অবশ্যই তাদের অন্যতম। সুভাষ আপদমস্তক প্রগতিশীল, মুক্তবুদ্ধি, মুক্তচিন্তার অধিকারী একজন মানুষ, যিনি ইস্পাতকে ইস্পাতই বলেন। সমাজ ও মানুষকে তিনি বিশ্লেষণ করেন পর্যবেক্ষণ ও অনুসন্ধানী দৃষ্টি দিয়ে খাপখােলা ধারালাে তলােয়ারের মতাে শাণিত শব্দাবলি, সত্য তবে বিদ্ধ করে হৃদয় নির্ভয় উক্তি তার, এজন্য তিনি লেখক হিসেবে একেবারেই অন্যরকম।