দুনিয়ায় মানুষের কাছে ‘হায়াত’ বা ‘জীবন-কাল’-এর চেয়ে বেশি আগ্রহের বিষয় আর কি হতে পারে? সুখ-শান্তি, আরাম-আয়েশ, উন্নতি-সমৃদ্ধি, প্রভাব-প্রতিপত্তি সবই বেঁচে থাকার উপর নির্ভরশীল। দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর দিকে ধাবিত ব্যক্তি-মাত্রই অনুভব করেন, হায়াতের কী মূল্য! আমরা সচরাচর দেখি, অসুস্থ্যতার মাত্রাভেদে চিকিৎসাবিজ্ঞানের আন্দাজে মৃত্যুর আগাম সতর্কবার্তাপ্রাপ্ত ব্যক্তি কিভাবে সহসাই বদলে যান! দুনিয়ার সব হিসাব-নিকাশ ভিন্ন রকম হয়ে যায় তার কাছে। অথচ ক্ষণিকের এই মুসাফিরী জিন্দেগীতে দুনিয়ার মোহ কিভাবে আমাদেরকে ভুলিয়ে দিচ্ছে অনন্ত পরকাল আর মহান রবের কাছে ফিরে যাওয়ার চিরন্তন সত্য। মানুষের সাফল্য-ব্যর্থতার জন্য ‘হায়াত’-এর সীমা কম-বেশি মূখ্য নয়। মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে নিয়ামত হিসেবে পাওয়া সুনির্ধারিত এ ‘জীবন-কাল’ তাক্কওয়া ও নেক-আমলের মাধ্যমে অতিবাহিত করে পরকালীন জীবনে আযাব থেকে মুক্তি ও জান্নাত লাভ-ই আসল কথা। উম্মতে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্য স্বল্প-হায়াতে অধিক নেক আমলের জন্য আল্লাহ তা‘আলা কতই-না বিশেষ ব্যবস্থা রেখেছেন! একটি রাত হাজার হাজার রাতের চাইতে উত্তম, এক রোযা’য় দশ থেকে সত্তর, আরো আরো… বেগায়রে হিছাব…, এক আরাফাহ’র দিনে জিন্দেগীর গুনাহ মাফ, মক্কার মসজিদুল হারামে এক নামাযে লক্ষগুণ (আল্লাহ আকবার)!! ষাট থেকে সত্তর বছরের সাধারণ বয়সসীমায় একজন মুত্তাকী-নেককার কতো লক্ষ-কোটি বছরের ইবাদাত আঞ্জাম দিতে পারেন, তার হিসাব কেবল রহমানুর রাহীম আল্লাহ রাব্বুল আলামীন-ই জানেন। সেই হিসাবের খাতা মিলানো আমাদের কাজ নয়; আমাদের কাজ শুধু সুযোগগুলোর সদ্ব্যবহার করে কাঙ্খিত নেকী অর্জনের মাধ্যমে হায়াতকে দীর্ঘায়িত করা। অত্রগ্রন্থখানি লেখকের অনেক সাধনার ফল, অনেক আবেগের নির্যাস। তিনি হায়াতের সীমাবদ্ধতাকে নেক আমলের মাধ্যমে উৎরিয়ে যাওয়ার রাস্তাগুলো দেখিয়ে দিয়েছেন ভ্রাতৃত্বের দরদী মন নিয়ে। অনুবাদকের সবর, অধ্যবসায় ও মেহনত এবং অনুবাদ-সম্পাদনায় শ্রদ্ধেয় ড. যাকারিয়া স্যারের একাগ্রতা- সব মিলে বইখানি অনেক সমৃদ্ধ ও আকষর্ণীয় হয়েছে, আলহামদুলিল্লাহ! পাঠকগণ এ থেকে অবশ্যই উপকৃত হবেন, ইনশাআল্লাহ।
ড. মুহাম্মাদ ইব্ন ইবরাহীম আন-নাঈম আরব-বিশ্বের প্রখ্যাত শায়খদের অন্যতম। তিনি একাধারে কুরআনুল কারীমের অতীশ্রুতিমধুর তেলাওয়াতকারী, দাঈ, ঈমাম ও খতীব। তিনি ১৩৭৮ হিজরী ১ রজব জন্মগ্রহণ করনে। ২০০১ ঈসায়ী মিসরের ইস্কান্দারিয়্যাহ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কৃষি বিষয়ে (Financing in the Agricultural Sector) পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করনে। ১৪২৮-৩২ হিজরী সৌদি আরবের আল আহসায় অবস্থিত কিং ফায়সাল বিশ্ববিদ্যালয়ে কৃষি বিষয়ের সহযোগী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান ছিলেন। পরবর্তীতে ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসার উদ্দেশ্যে জর্দানে অবস্থান করনে। ২০১৫ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি তিনি ইন্তিকাল করেন। ড. নাঈম আরবী ভাষায় বহু গ্রন্থ রচনা করে গেছেন। দুনিয়ার স্বল্পস্থায়ী জীবনে বহুমুখী নেকী অর্জনকারী আমলের মাধ্যমে অনন্ত আখিরাতের পাথেয় সংগ্রহ করার বিষয়টিই তার রচনাবলির মূল প্রতিপাদ্য।