মানুষ আসলে কীসে সম্মানবোধ করে? অর্থে, শিক্ষায় নাকি নানা রকম সামজিক ক্ষমতা লাভে? এটা ব্যক্তিবিশেষ নির্ভর করে। কিন্তু প্রকৃত সম্মান নিজেকে নিজে সম্মান করা। নিজেকে যে নিজে সম্মান করতে পারে না সে অন্যদেরও সম্মান করতে পারে না। আমাদের চারপাশে প্রচুর মানুষ রয়েছে যারা নানা ধরণের মানসিক সমস্যায় আছেন। এ সমস্যাগুলো কাউকে হয়তো খুলেও বলতে পারে না। কর্মক্ষেত্রে, পরিবারে, স্কুল কলেজে তৈরি হয় নানা সমস্যা। সেই সমস্যাগুলোই মানসিকভাবে পীড়ন তৈরি করে। এতে করে যেমন মানসিক সমস্যা সৃষ্টি হয় তেমনি বাড়তে থাকে শারীরিক সমস্যাও। এ বিষয় বাংলায় তেমন কোনো বইও নেই। ইংরেজি ভাষায় এ বিষয়ের কিছু বই পাওয়া যায়। মেডিক্যাল সাইন্সের অন্যতম একটি বিষয় মানসিক স্বাস্থ্য। মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে আমাদের সমাজে রয়েছে নানা ধরণের কুসংস্কার। ফলে সঠিক জ্ঞানও পাওয়া যায় না। ড. মাসুম আহমেদ পাটওয়ারী এমন একটি তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় নিয়ে লিখেছেন এ বইটি। লেখক লিখেছেন- ‘আত্মপ্রত্যয়, আত্মসম্মান, আত্মমর্যাদা, আত্মমর্যাদাবোধ, আত্মবিশ্বাস, আত্মমূল্যায়ন, আত্মগ্রহণযোগ্যতা, আত্মোপলব্ধি, আত্মানুভূতি, আত্মতৃপ্তি, আত্মতুষ্টি, আত্মাদর এই সবগুলো শব্দ ঘিরেই আবর্তিত সেলফ-এস্টিম। প্রত্যেকটি শব্দের পৃথক অর্থ বিদ্যমান। যদিও খুব কাছাকাছি, কিন্তু খুব সূক্ষ্ন পার্থক্য রয়ে গেছে। সেলফ-এস্টিম অনুশীলন করার পাশাপাশি সেলফ-এস্টিমকে একই সাথে কাজে লাগানো প্রয়োজন। সতর্কভাবে খেয়াল রাখা প্রয়োজন সেলফ-কনফিডেন্স আর সেলফ-এস্টিম এক বিষয় না। আর এই পার্থক্য যদি বুঝতে পারা যায়, তবে সহজ হয়ে যাবে সেলফ-এস্টিম বুঝে যাওয়া। আর ঠিক তখন থেকেই নিজের মাঝে তা ধারণ করে বলে অনুভব করবে।’ এমনই বিশ্লেষণধর্মী এই বইটি একটি মজার বিষয় হচ্ছে যে, এটি পড়তে পড়তে মনে হবে আপনি একটি উপন্যাস পড়ছেন। লেখার মুন্সীয়ানা অনেক জটিল জটিল বিষয়কে সহজ করে দিয়েছে। আমাদের দেশে এখনো সেই অর্থে কাউন্সেলিং সিস্টেম গড়ে ওঠেনি। ফলে এ কথা বলা যায় যে, বইটি একজন কাউন্সিলরের ভূমিকা রাখতে পারে। আট পর্বে বিভক্ত এ বইটির একটি উল্লেখযোগ্য পর্ব চার। এ পর্বে লেখক ব্যর্থতার থেকে সফলতার হার, ব্যক্তি মূল্য, স্বতন্ত্র আত্মতৃপ্তি, আত্মসম্মানবোধ বনাম আত্মমগ্নতা/আত্মমুগ্ধতা, সেলফ-এস্টিম এবং বুলিং, সুস্থতা উন্নতির পন্থা, আবেগ এবং আবেগের প্রতিক্রিয়ার সতর্ক সচেতনতা, খুঁজে দেখুন এবং চিহ্নিত করুন, ইতিবাচকভাবে অনুভূতি প্রকাশ করা, যখন কোনো কিছু আপনাকে বিরক্ত করছে তা চিহ্নিত, প্রতিক্রিয়া দেখানোর পূর্বে চিন্তা করা, যেকোনো ধরনের মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ, হয়তো অন্যদের সাথে যোগাযোগ রাখা, ভারসাম্য বজায় রাখার চেষ্টা, শারীরিক স্বাস্থ্যের যত্ন নেওয়া ইত্যাদি বিষয় নিয়ে বিশদ আলোচনা করেছেন। আত্মনুসন্ধান ও মানসিক শক্তির উদ্ভোধনে এ বইটি তুলনাহীন।
জন্ম, বেড়ে উঠা এবং স্বপ্ন দেখার শুরু কুমিল্লায়। কুমিল্লা জিলা স্কুল এবং ভিক্টোরিয়া কলেজ হয়ে স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে। তিনি ইংল্যান্ড এর টিসাইড ইউনিভার্সিটির স্কুল অব সাইন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং থেকে পিএইচ.ডি অর্জন করেন। একই স্কুলে এনভায়রনমেন্টাল সাইন্স এবং রিসার্চ মেথডোলোজি বিষয়ে শিক্ষকতার পাশাপাশি গবেষণায় নিয়োজিত হন। সরকারি, এনজিও, কর্পোরেট প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা, গবেষণায় অতিবাহিত মাসুম আহ্মেদ পাটওয়ারী’র কর্মময় জীবন। বাংলাদেশের ঝুঁকিপূর্ণ মেডিকেল বর্জ্যরে আধুনিক ব্যবস্থাপনায় রয়েছে তার গুরুত্বপূর্ণ অবদান। তার লেখা বিজ্ঞানভিত্তিক বিভিন্ন গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছে বিশ্বের নামকরা প্রথম সারির জার্নালে। তিনি বর্তমানে কাজ করছেন ক্যালিফোর্নিয়া স্টেইট গভর্মেন্ট-এর পরিবহন বিভাগে, পরিবেশ পরিকল্পনাবিদ হিসেবে। মাসুম আহ্মেদ পাটওয়ারী পেশাদার লেখক নন। তবে বৈচিত্র্যময় কর্মজীবন এবং গবেষণার ধারাবাহিকতায় গবেষণা করেন মানবজীবনের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে। নিজ আগ্রহে গবেষণার প্রাপ্ত ফল বিশ্লেষণ করে গল্পের মতো করে উপস্থাপন করে লেখা তার বিশেষ বৈশিষ্ট্য। তার প্রকাশিত প্রত্যেকটি বই একেকটি নির্দিষ্ট গবেষণা-গল্প। ‘সম্মান আমাকেই আমি’ বইটি মাসুম আহ্মেদ পাটওয়ারী’র পঞ্চম প্রকাশিত গবেষণা-গল্প। তার অন্য প্রকাশিত গ্রন্থগুলো হচ্ছে- বার্ধক্যে বসবাস, একাত্তরের জিম্মি, প্রচ্ছন্ন কৈশোর, স্বপ্নকথা ।