চীনের উহানে ২০১৯ সালের ডিসেম্বর কোভিড-১৯ এর প্রাদুর্ভাবের কথা প্রথম জানা যায়, যা পুরো বিশ্বকে বদলে দিয়েছে। মানুষ অনেক কিছুতে অভ্যস্ত হতে শিখেছে, যা অতীতে মানুষ অভ্যস্ত ছিল না। মাত্র এক মাসের ব্যবধানে ৩০ জানুয়ারি (২০২০) বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সতর্কবাণী উচ্চারণ করে এবং আন্তর্জাতিক উদ্যোগের কথা জানায়। ১১ মার্চ (২০২০) ‘হু’ কোভিড-১৯ কে মহামারি হিসেবে ঘোষণা করে। এই মহামারিটি খুব দ্রুতই ছড়িয়ে পড়ে এবং বছর শেষে (২০২০) বিশ্বব্যাপী মোট মৃত্যুর সংখ্যা ছিল ১৮,২৮,২৪৩ জন। আর আক্রান্ত ৮,৩৯,৩৪,১৬৫ জন। ২৮ ফেব্রুয়ারি (২০২১) পর্যন্ত বিশ্বব্যাপী করোনা ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ১১,৪৪,৩৮,৩৬০ জন, আর মৃত্যুর সংখ্যা ২৫,৩৮,৬৯১ জন। কোভিড-১৯ সারা বিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনায় যে ত্রুটি রয়েছে, তা আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে। এই স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনাতেও যে বৈষম্য তৈরি হয়েছে, তাও আমাদের জানাচ্ছে ইউএনডিপি। উন্নত বিশ্ব প্রতি ১০ হাজার মানুষের জন্য রয়েছে ৫৫ হাসপাতাল শয্যা (হাসপাতাল বেড), ৩০ জন ডাক্তার, আর ৮১ জন নার্স। আর উন্নয়নশীল বিশ্বে? সেখানে ১০ হাজার লোকের জন্য রয়েছে ৭টি হাসপাতাল বেড, ২.৫ জন ডাক্তার, আর ৬ জন নার্স। তাই করোনা ভাইরাস দেখিয়ে দিল স্বাস্থ্যসেবার দিকে কেন বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। তারপরও আফ্রিকার দরিদ্রতম দেশগুলোতে করোনা ভাইরাস বড়ো আঘাত হানতে পারেনি। বিশেষজ্ঞদের অভিমত করোনা পরবর্তী বিশ্ব আর আগের জায়গায় ফিরে আসবে না। ১৯১৮ সালের মহামারির পর (যাতে মারা গিয়েছিল ৫ কোটি মানুষ) ওই সময়কার বিশ্ব যেভাবে বদলে গিয়েছিল ও একটা পরিবর্তন এসেছিল, ২০২০ সালের মহামারির পর বিশ্ব ঠিক তেমনই একটি পরিবর্তন লক্ষ করতে যাচ্ছে। শুধুমাত্র অর্থনৈতিক ক্ষেত্রেই পরিবর্তন আসবে, তা নয়, বরং বাণিজ্য, স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা, তথ্যপ্রযুক্তি, ভ্রমণ, স্থানীয় সরকার ব্যবস্থাপনা, কর্মক্ষেত্র, বয়স্ক সেবা, সোশ্যাল নেটওয়ার্ক এ পরিবর্তন আসবে। ইন্টারনেট বদলে দেবে সমাজের গতিধারা। নন-স্টেট অ্যাক্টরদের তৎপরতা বাড়বে। গ্রিন এনার্জির দিকে মানুষ বেশি করে নির্ভরশীল হবে। উন্নয়নশীল দেশগুলো আরো বেশি করে নিজেদের মধ্যে সম্পর্ক বাড়াতে তৎপর হবে এবং সাউথ-সাউথ সম্পর্ক বৃদ্ধি পাবে। বৈশ্বিক ব্যবস্থায় পরিবর্তন আসবে। যুক্তরাষ্ট্রের একক কর্তৃত্ব করার প্রবণতা হ্রাস পাবে। চীন অন্যতম শক্তি হিসেবে বিশ্ব আসরে হাজির হবে। একুশ শতকের দ্বিতীয় দশক প্রত্যক্ষ করতে যাচ্ছে নতুন এক বিশ্বকে। করোনা মহামারি সবকিছুই বদলে দিয়েছে। শুধুমাত্র স্বাস্থ্যব্যবস্থাই নয়, বরং উগ্র জাতীয়তাবাদ, অর্থনৈতিক বিপর্যয়, চীনের নয়া উত্থান, উন্নয়নশীল দেশগুলোর ‘টিকা জাতীয়তাবাদের’ অশুভ প্রভাব থেকে বেরিয়ে যাওয়ার প্রচেষ্টা, সব মিলিয়ে নতুন এক পৃথিবীর যে জন্ম হতে যাচ্ছে, একুশ শতকের একটা বড়ো সময় এই বিষয়গুলোকে ঘিরেই আবর্তিত হবে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান এবং অধ্যাপক ড. তারেক শামসুর রেহমান এর বই সমূহ আন্তর্জাতিক রাজনীতি ও কূটনীতির চমৎকার বিশ্লেষণী পাঠ। ‘বিশ্ব রাজনীতির ১০০ বছর’ তার সবচেয়ে জনপ্রিয় বই। আন্তর্জাতিক সম্পর্ক, বিভিন্ন দেশের পররাষ্ট্রনীতি, বিশ্ব রাজনীতিতে পরাশক্তিগুলোর স্বার্থ ও দ্বন্দ্ব, ভূ-রাজনীতির অতীত ও বর্তমান- এসব বিষয়ে তার বিশ্লেষণাত্মক লেখার তুলনা নেই। বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সাবেক এ সদস্য গত দুই দশকে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক, বিভিন্ন দেশের পররাষ্ট্রনীতি, কূটনীতি ও বৈদেশিক সম্পর্কের বিভিন্ন দিক নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ সব গবেষণা করেছেন। এসব গবেষণার ভিত্তিতে এ সকল বিষয়ে চমৎকার তথ্যবহুল কিছু বইও রচনা করেছেন তিনি। এছাড়াও তুলনামূলক রাজনীতি নিয়েও দীর্ঘদিন গবেষণা করেছেন, লিখেছেন বইও। তার লেখালেখি কেবল বইয়ের ভেতরেই সীমাবদ্ধ নয়। বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা আর অন্যান্য কাজের পাশাপাশি তিনি নিয়মিতই গুরুত্বপূর্ণ দেশীয় ও আন্তর্জাতিক প্রসঙ্গে জাতীয় দৈনিকগুলোতে কলাম লেখেন। গবেষণার কাজে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ভ্রমণ করে বেড়ানো তারেক শামসুর রেহমানের অভিজ্ঞতার ঝুলিও তাই সমৃদ্ধ, রয়েছে আন্তর্জাতিক নামডাকও। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্টের আইভিপি ফেলো। ড. তারেক শামসুর রেহমান এর বই সমগ্র একদিকে যেমন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের জন্য মৌলিক পাঠ, অন্যদিকে বিশ্ব রাজনীতি ও কূটকৌশল সম্পর্কে জানতে আগ্রহীদের জন্যও উপযোগী। ‘আন্তর্জাতিক রাজনীতি কোষ’, ‘মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতি’, ‘বাংলাদেশের নিরাপত্তা ভাবনা’, ‘নয়া বিশ্বব্যবস্থা ও সমকালীন আন্তর্জাতিক রাজনীতি’, ‘বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি’, ‘দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার রাজনীতি’, ‘বাংলাদেশের পূর্বমুখী রাজনীতি’, ‘রাজনীতি ২০০৯’, ‘নির্বাচিত প্রবন্ধ সংকলন’, ইত্যাদি তার পাঠকপ্রিয় বইগুলোর মাঝে উল্লেখযোগ্য।