ফ্ল্যাপে লিখা কথা বাংলাদেশের বর্তমান অবক্ষয়ের রাজনীতির জগতে একটি আদর্শের নাম কর্ণেল (অব.) শওকত আলী। জাতীয় রাজনীতির ক্ষেত্রে সারা দেশে তিনি পরিচিতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঘনিষ্ঠ সহচর হিসেবে। ইতিহাসখ্যাত আগরতলা মামলার ২৬ নম্বর আসামি ছিলেন তিনি। অনন্যসাধারণ এই রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব সুস্থ ধারার গণতান্ত্রিক ধ্যান-ধারণায় বিশ্বাসী। আর দশজন রাজনীতিবিদের সঙ্গে মেলানো যায না তাকে। আইনশ্রাস্ত্র, দর্শন, বিশ্ব রাজনীতি, সামাজিক ইতিহাস, বিবর্তনের ইতিহাস, এমনকি মার্কসবাদ সম্পর্কেও রয়েছে তাঁর প্রভূত জ্ঞান। সাধারণ মানুষের প্রতি তাঁর রয়েছে অপরিসীম দরদ। আর এ বোধ থেকেই সত্তর দশকে যুক্ত হন সক্রিয় রাজনীতির সঙ্গে। প্রজ্ঞাবান এই মানুষটি ১৯৫৯ সালের ২৪ জানুয়ারি পাকিস্তানসেনাবাহিনীতে কমিশনপ্রাপ্ত হন। ক্যাপ্টেন পদে থাকাকালে ১৯৬৮ সালের ১০ জানুয়ারি ঐতিহাসিক আগরতলা মামলার ২৬ নম্বর অভিযুক্ত আসামী হিসাবে ১ নম্বর আসামী বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে গ্রেপ্তার হন। ১৯৬৮ সালে ব্যাপক গণ-আন্দোলনের মুখে পাকিস্তান সরকার মামলাটি প্রত্যাহার করে নিতে বাধ্য হয়। এরপর তাঁকে পাকিস্তান সেনাবাহিনী থেকে বাধ্যতামূলক অবসর প্রদান করা হয়।
বাঙালির গর্বিত অহংকার মহান মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখেন তিনি। প্রথমে তৎকালীন মাদারীপুর মহকুমার কমান্ডার নিযুক্ত হন। পরে ২ নম্বর সেক্টরের অধীনে ফরিদপুর কোম্পানি কমান্ডার এবং প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা নিযুক্ত হন। এর কিছুদিন পরে মুজিব নগরে বাংলাদেম সশস্ত্র বাহিনীর সদর দপ্তরে স্টাফ অফিসার হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে তিনি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। এসময় সামরিক বাহিনীর পুনগঠনে তিনি উদ্যোগী ভূমিকা রাখেন। ২৯ ডিসেম্বর ২০০৮ এর নির্বাচনে তিনি প্রতিপক্ষ বিএনপি’র প্রার্থীকে বিপুল ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করে চতুর্থবারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
স্বনামখ্যাত এই রাজনীতিবিদের জন্ম ১৯৩৭ সালের ২৭ জানুয়ারি নড়িয়া উপজেলার লোনসিং বাহের দিঘির পার গ্রামে। এ গ্রামেরই ব্যবসায়ী মরহুমা মুন্সি মোবারক আলীর সন্তান কর্ণেল (অব.) শওকত আলী। তিনি ১৯৫৩ সালে অংকে লেটারসহ প্রথম বিভাগে ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। এরপর ১৯৫৬ সালে প্রথম বিভাগে আই.এম, ১৯৫৮ সালে দ্বিতীয় শ্রেণীতে বি.কম এবং ১৯৫৯ সালে দ্বিতীয় শ্রেণীতে এল.এল.বি. পাশ করেন।
বর্তমানে তিনি বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকারের দায়িত্ব পালন করছেন।
সূচিপত্র * কারাগারের নিজস্ব ভাষা ও সম্বোধন * দূঃসহ স্মৃতি * মুক্তিযুদ্ধ এবং বন্দি-শিবির * বিষাদময় অপেক্ষা * ক্লাশ সমাজতন্ত্রের * রক্ষীবাহিনী সম্পর্কে বিভ্রান্তি ও জিয়াউর রহমানের ভাঁওতা * ফাইল, ডাইল আর গাইল * বঙ্গবন্ধু ও শফিউল্লাহ’র বিরুদ্ধে জিয়ার ষড়যন্ত্র * কারা সংস্কারের ৩৯ দফা * যে মিথ্যা অভিযোগে এই কারাভোগ * পুনশ্চ * টীকা
জন্ম ২৭ ফেব্রুয়ারি ১৯৩৭, শরীয়তপুর জেলার নড়িয়া উপজেলার লােনসিং বাহের দীঘির পাড় গ্রামে। এলএলবি ডিগ্রি অর্জন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। ২৪ জানুয়ারি ১৯৫৯ পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে কমিশন প্রাপ্ত হন। ক্যাপ্টেন পদে চাকরিরত অবস্থায় পাকিস্তানের মালির ক্যান্টনমেন্ট থেকে ১০ জানুয়ারি ১৯৬৮ গ্রেফতার হন এবং বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে আগরতলা মামলায় অভিযুক্ত হন। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশ নেন। স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে সেনাবাহিনীতে ফিরে যান। ১৫ আগস্ট ১৯৭৫ সপরিবারে বঙ্গবন্ধুর নির্মম হত্যাকাণ্ডের পর সেনাবাহিনী থেকে অকাল অবসর প্রাপ্ত হন। এরপর সময়ের বিরুদ্ধ স্রোতে আওয়ামী লীগে সক্রিয় হন । গড়ে তােলেন মুক্তিযােদ্ধা সংহতি পরিষদ। ১৯৭৯ সালে জাতীয় সংসদ সদস্য এবং আওয়ামী লীগ সংসদীয় দলের হুইপ নির্বাচিত হন। এরপর ১৯৯১, ১৯৯৬, ২০০১, ২০০৮ ও। ২০১৪ সালেও সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন । নবম জাতীয় সংসদে ডেপুটি স্পিকার হিসেবে এবং দশম জাতীয় সংসদে সরকারি প্রতিষ্ঠান কমিটির। সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। এক কন্যা ও দুই পুত্র সন্তানের জনক। তাঁর স্ত্রী মাজেদা শওকত আলীও একজন মুক্তিযােদ্ধা এবং নারীনেত্রী। প্রকাশিত গ্রন্থ: Armed Quest for Independence; কারাগারের ডায়েরি; সত্য মামলা আগরতলা; বাঙালির মুক্তি সংগ্রাম ও আমার কিছু কথা; গণপরিষদ থেকে নবম জাতীয় সংসদ।