"আমির তিমুরের দেশে" বইটির প্রথম ফ্ল্যাপ-এর লেখাঃ সচরাচর আমাদের যাত্রপথে পড়ে না এমন একটি দেশ উজবেকিস্তান। আমাদের ভ্রমণ তালিকায়ও সে দেশ নেই। অথচ ৩৩১ বছর ভারতবর্ষ শাসন করা মােগলরা এসেছিল উজবেকিস্তান থেকেই সেখানকার অধিবাসীদের ‘উজবুক’ বলে আমরা যতই আত্মশ্লাঘা অনুভব করি না কেন, আমাদেরকেই উজবুক বানিয়ে রেখেছিল উজবেকিস্তান থেকে আসা সাহসী যুদ্ধবাজরা। মােগলদের আগমন ও বিজয় কেবল সুদূরপ্রসারী প্রভাবই ফেলেনি, পাল্টে দিয়েছে ভারতবর্ষের ইতিহাস। মধ্য এশিয়ার চারিপাশে ভূমিবেষ্টিত দেশটি সম্পর্কে আমাদের সম্যক ধারণা না থাকলেও সেখানকার তিনটি প্রাচীন ও ঐতিহাসিক নগরী- তাসখন্দ, সমরকন্দ ও বুখারার নাম আমরা জানি। মধ্যযুগে এ অঞ্চলে ইসলামের অভূতপূর্ব বিকাশ ঘটেছিল, বিশেষ করে জোতির্বিদ্যা, দর্শন, চিত্রশিল্প ও কবিতার। দীর্ঘ পয়ষট্টি বছর সােভিয়েত শাসনে থাকা দেশটি আজ। শান্ত হলেও প্রত্যক্ষ করেছে ইতিহাসের কিছু নির্মম, রক্তাক্ত অধ্যায়। জল্লাদ চেঙ্গিস খানের বাহিনীর হাতে কচুকাটা হয়েছে উজবেকিস্তানের লক্ষ লক্ষ মানুষ। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে এ মাটি হারিয়েছে সাড়ে পাঁচ লক্ষ নিরীহ মানুষ ও সৈনিক। ইতিহাসের ঐসব নির্মমতা আজ সভ্য মানুষের গায়ে কাঁটা তােলে; আধুনিক উজবেকিস্তানে সেসব লঙ্কাকাণ্ডের চিহ্নমাত্র নেই। উজবেকিস্তানের ইতিহাসের সাথে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িয়ে আছে তৈমুর লঙের নাম, কেননা ক্ষুদ্র ও বিচ্ছিন্ন উপজাতিসমূহকে একত্রিত করে উজবেক জাতি সৃষ্টিতে তার ভূমিকা প্রত্যক্ষ। যুদ্ধবাজ এ শাসক আমাদের চোখে যতই নৃশংস ও বর্বর হােক না কেন, উজবেকদের চোখে সে নায়ক, রাজা বা আমির; উজবেকিস্তান তাই আমির তিমুরের দেশ। এই বিরলপদচিহ্নিত দেশটিতে ভ্রমণের সুযােগ এলাে। সেদেশে রাষ্ট্রদূত বন্ধু মসরূদ মান্নানের আমন্ত্রণে সঙ্গী হলাে লেখকের ছােট ভাই। এ বই তাই উৎসর্গ করা হলাে তাদের। ভ্রমণপিপাসু লেখকের এটি দ্বিতীয় ভ্রমণগ্রন্থ। তার প্রথম ভ্রমণকথা ‘বিলেতের দিনলিপি’ প্রকাশিত হয়েছে গত বইমেলায়। মূলত কবি কামরুল হাসানের ভেতরে এক সৌন্দর্যপিপাসু, দৃশ্যমুগ্ধ কিশাের বাস করে। ইতিহাসের আস্কারা আর ভূগােলের আতিথ্যে তার পা এখন ছুটে যেতে চায় গ্রহটির দশদিগন্তে। দেখা ও লেখাই হয়ে উঠেছে তার প্রধান প্রেষণা।
শৈশবেই পিতৃহীন কামরুল হাসানের জন্ম ২২শে ডিসেম্বর, ১৯৬১। শৈশব ও কৈশাের কাটে শরীয়তপুরে। মামাবাড়ির উদার ও শিক্ষাবান্ধব পরিবেশে তার বিকাশ। ছাত্রজীবনে মেধাবী কামরুল মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার মেধা তালিকায় স্থানলাভ করেছিলেন। চিকিৎসক হবার আকাঙ্ক্ষায় ভর্তি হয়েছিলেন ঢাকা মেডিকেল কলেজে নিতান্ত। আবেগতাড়িত হয়ে মেডিকেল পড়াশােনা ছেড়ে সরকারি বৃত্তি নিয়ে চলে যান ভারতে। সেখানকার বিখ্যাত আইআইটি খড়গপুরে অধ্যয়ন করেন বিমান প্রকৌশলবিদ্যায় । পরবর্তী পড়াশােনা ব্যবসায় প্রশাসনে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএ থেকে এমবিএ। এ ছাড়া তিনি যুক্তরাজ্যের দুটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। কর্মজীবনের শুরুতে যােগ দিয়েছিলেন বাংলাদেশ বিমানে, প্রকৌশল প্রশিক্ষক হিসেবে। বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেছেন প্রশিক্ষক ও প্রশিক্ষণ ব্যবস্থাপক হিসেবে। বহুবার চাকরি বদল করে উপলব্ধি করেন কর্পোরেট জগতে তিনি বেমানান। তখন যােগ দেন শিক্ষকতায়। ভ্রমণপিপাসু কামরুল হাসানের প্রথম ভ্রমণকথা বিলেতের দিনলিপি। উজবেকিস্তান ভ্রমণের উপর লিখেছেন আমির তিমুরের দেশে। জীবনসঙ্গী লুবনা হাসান ও বিশ্ববিদ্যালয়গামী চার সন্তান নিয়ে তার সংসার।