দিন দিন হাসি আমাদের জীবন থেকে হারিয়ে যাচ্ছে! রোগ শোক প্রাকৃতিক দুর্যোগ আমাদের জীবনকে করে তুলেছে অস্থির। সাথে যুক্ত আছে প্রযুক্তি। প্রযুক্তির বিকাশের সাথে মানুষ যেন পাল্লা দিয়ে হাঁপিয়ে উঠছে দিন দিন। একটু নির্মল হাসি, একটু স্থিরতা, একটু নিজের দিকে ফেরার অবসর আমরা চাই প্রত্যেকেই। আমাদের গানে, কবিতায়, গল্পে জীবনের অনেক স্বপ্ন কল্পনার পাশাপাশি বাস্তবতারও একটা প্রতিবিম্ভ দেখতে পাই। মো. মাঈন উদ্দিনের লেখা ‘ফেঁসে গেলেন গেদু চাচা’ একটি রম্যগল্পের বই। রম্যগল্পের পাঠক মাত্রই জানেন যে রম্যগল্প পাঠ করলে কেমন অভিজ্ঞতা লাভ করা যায়। রম্যগল্প মানেই শুধু হাসি নয়, এর মধ্যে রয়েছে এক ধরণের সমাজ সচেতন বোধ। রয়েছে চিন্তার বীজ। বাস্তবতার আড়ালে যে ক্ষয়ে যাওয়া জীবনের আর্তনাদ তা বোঝা যায় রম্যরচনার পাঠের মধ্য দিয়ে। গেদু চাচা এই বইটির একটি অন্যতম চরিত্র। বলা যায় মাঈন উদ্দিনের সৃষ্ট নিজস্ব একটি চরিত্র। এই গেদু চাচার চরিত্রের মধ্য দিয়ে নানা অনিয়ম নানা সব মজার ঘটনাকে তুলে ধরেছেন মাঈন উদ্দিন। ‘কাছিম আলী চকচকে কাগজের ভেতর থেকে বের করে আনলেন একটি বই। তিনি পাতা ওল্টাতে ওল্টাতে নতুন বইয়ের গন্ধ শুঁকছেন। এদিকে মঞ্চের নিচে শান্তি সংঘের সদস্যরা দুয়োধ্বনি দিতে লাগল। তারা বলল, এ তো দেখছি উপন্যাস। নোবেল প্রাইস কোথায়? কাছিম আলী এবার হুংকার ছাড়লেন। বললেন, এই মিয়ারা, চেঁচামেচি থামাও। তোমরা বোঝটা কী শুনি? সংগ্রামের বছর আমি এন্টান্স পাস দিয়েছি। উপন্যাসের ইংরেজি কি জানো মিয়ারা? উপন্যাসের ইংরেজি হলো নোভেল। তার মানে কী দাঁড়াল, আমার ছেলে শান্তির জন্য উপন্যাস, মানে নোবেল পুরস্কার পেয়েছে। শান্তি সংঘের সদস্যদের ঘাড় এবার খাড়া হয়ে গেল। তারা ঘাড় খাড়া করে হাসতে হাসতে শান্তি সংঘে ফিরে গেল।’ রবীন্দ্রনাথের নোবেল প্রাপ্তির মধ্য দিয়ে বাঙালি প্রথম জেনেছে নোবেল পুরস্কার সম্পর্কে। এরপর অনেকেই এই নোবেল পাবার জন্য চেষ্টা তদবির করে আসছে। রাজনৈতিক নেতা, শিল্পী-সাহিত্যিক, অর্থনীতিবীদ, বিজ্ঞানী সবাই যে যার মতো চেষ্টা করে করে এ পুরস্কারের। ফলে এই নিয়ে আমাদের দেশে এই পুরস্কার নিয়ে আছে নানা হাসি ঠাট্টা। এ রম্যগল্পটি সেই বিষয়টিকে আরো মজাদার ভাবে তুলে ধরেছে। বিশটি রম্যগল্প সূচিবদ্ধ হয়েছে এ বইটিতে। প্রায় সবগুলো গল্পই দৈনিকের ফান ম্যাগাজিনগুলোতে প্রকাশিত হয়েছে। বইটি পাঠে সব বয়সী পাঠকই আনন্দ পাবে।