অভিমত চারদিকের ঘটনাবলী প্রতিটি সচেতন মানুষকেই নাড়া দেয়। বর্তমান প্রেক্ষাপটে দেশের রাজনীতি, অর্থনীতি ও নাগরিক জীবনের বিভিন্ন সমস্যাও তাড়িত করে প্রতিনিয়ত। এসব নিয়ে গত এক-দেড় বছরে দেশের পত্রপত্রিকায় আমার যেসব লেখা ছাপা হয়েছে তা নিয়ে প্রকাশ হলো এ বইটি। অকপটে স্বীকার করতে চাই লেখালেখি আমার পেশা নয়, এমনকি নেশাও নয়। লেখালেখির প্রতি ঝোঁক থাকলেও এটিকে পেশা এমনকি নেশা হিসেবে উপভোগ করার জন্য যে সময় দরকার, তেমন ফুরসতের অভাব অকৃপণভাবে স্বীকার করতে চাই। তারপরও সচেতন নাগরিক হিসেবে চারদিকের সমস্যা এবং সমাধানের চিন্তা-ভাবনা থেকে কখনো কখনো কলম হাতে তুলে নিয়ে লেখার যে প্রচেষ্টা চালিয়েছি তার ফসল সময়ের কথা বইটি। এ বইয়ে প্রতিটি লেখা দেশের বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় ছাপার অক্ষরে প্রকাশিত হয়েছে। হয়তো আমার প্রতি সহƒদয় মনোভাবের কারণে পাঠকরা লেখাগুলো বই আকারে প্রকাশের তাগিদ দিয়েছেন। তাদের সেই তাগিদ তথা ভালোবাসা বইটি প্রকাশের সাহস জুগিয়েছে। বইটিতে স্থান পেয়েছে এ সময়ের আলোচিত সমস্যাগুলো। প্রতিদিন আমাদের নগরজীবন ও রাষ্ট্রীয় জীবনে যে সমস্যাগুলো মনের মধ্যে উঁকি দেয়, সে সমস্যাগুলো শরাঘাতে আহত করে তা তুলে ধরা হয়েছে বইটিতে। বইটিতে উল্লেখ করা হয়েছে বাংলাদেশের মানুষের সঙ্গে বর্তমান সরকারের করে যাওয়া অন্যায়, অবিচার, আর অনাচারের কথা। ক্ষমতাসীন জবরদখলকারীরা জনগণের ওপর চালাচ্ছে সীমাহীন জুলুম, জনগণকে শ্বাসরুদ্ধ করতে তাদের সব অধিকার কেড়ে নেওয়ার বিষয়টিও। সহিংসতা নয় শান্তি, স্বৈরতন্ত্র বা এক নায়কতন্ত্রের পথ পরিহার করে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার দাবিতে সংলাপের মাধ্যমে সমঝোতা করে সবার অংশগ্রহণে নির্বাচন চেয়ে জাতীয় পত্রিকায় প্রকাশিত একাধীক কলাম স্থান পেয়েছে বইটিতে। নেতাজী সুভাস চন্দ্র বসু বলেছিলেন, তোমরা আমাকে রক্ত দাও, আমি তোমাদের স্বাধীনতা দেব। আজকের যুগে দেশের উন্নতি সম্পর্কে বলা যায় তোমরা ইন্ধনশক্তির জোগান দাও এ দেশকে এগিয়ে নেওয়া সম্ভব হবে। আমাদের রয়েছে মেধাবী ও সস্তা জনশক্তি। উন্নতির চাবিকাঠি হতে পারে এ অনন্য সম্পদটি। কিন্তু বিদ্যুৎ ও গ্যাস তথা ইন্ধনশক্তির অভাবে দেশ কাক্সিক্ষত গতিতে এগুচ্ছে না। আমাদের দেশের সম্ভাবনা যে আকাশছোঁয়া তা গত একবছরে আগের বছরের চেয়ে ৪৩ শতাংশ বেশি রপ্তানি আয় তা প্রমাণ করেছে। বলা হচ্ছে, পোশাক রপ্তানি থেকে আগামী ১০ বছরে আমাদের আয় অন্তত তিনগুণ বাড়বে। এ জন্য দরকার বিদ্যুৎ ও গ্যাস। শিল্পায়নের অন্য ক্ষেত্রেও এর প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। আমাদের এই রাজধানী ঢাকা। ৪০০ বছর আগে এটি সুবে বাংলার রাজধানীর মর্যাদা লাভ করে। ৭০০ বছর আগে প্রতিষ্ঠিত ঢাকা এখন জনসংখ্যার বিচারে বিশ্বের অন্যতম মেগাসিটি। সোয়া কোটি মানুষের এ মহানগরীর জনসংখ্যা ক্যারেবীয় ডজন খানিক দেশের মোট জনসংখ্যার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি। অস্ট্রেলিয়া মহাদেশের জনসংখ্যার অর্ধেক। মেগাসিটি হিসেবে ঢাকা আমাদের মর্যাদার অনুষঙ্গ বলে পরিচিত। কিন্তু সমস্যায় আকীর্ণ এ মহানগরী ইতোমধ্যে জাতীয় লজ্জার স্মারক হিসেবে পরিচিতি লাভের হুমকি সৃষ্টি করছে। এ লজ্জা থেকে বেরিয়ে আসতে রাজধানী ঢাকাকে মানুষের বাসযোগ্য নগরীতে পরিণত করতে সবাইকে ব্রতী হতে হবে। বইটিতে স্থান পেয়েছে সংঘঠিত সম সাময়িক বিষয়ে ব্যক্তি হিসেবে আমার দৃষ্টিভঙ্গি। জাতীর বর্তমান সংকট নিরসনে আমার চিন্তাভাবনা সচেতন নাগরিকদের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টির সামান্য অবদান রাখলে বইটি প্রকাশ সার্থক হবে। পাঠকবৃন্দু বইটি কেমন হয়েছে তা একমাত্র আপনারাই বিবেচনা করতে পারবেন। আমি আবারো বলছি, সময়ের কথা বইটি একজন নাগরিকের প্রতিদিনের চিন্তা-ভাবনার স্মারক। বইটি আমাদের চিন্তার রাজ্যে পরিবর্তন আনতে না পারুক যদি অনুসন্ধিৎসা সৃষ্টি করতে পারে, তবে সেটিই হবে আমার বড় অর্জন। সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ।