‘সফলতা অর্জনে কোরআন-হাদিসের নির্বাচিত হাজার বাণী’ বইটি মূলত মানব জীবনে সফলতা অর্জনের পথ প্রদর্শক হিসেবে রচিত হয়েছে। ধর্ম-বর্ণ-গোত্র নির্বিশেষে যে কেউ এ বইটি অধ্যয়ন করলে এবং সেমতে জীবন পরিচালনা করলে অবশ্যই সফলতার চূড়ায় উঠা সম্ভব—এ ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই। বইটিতে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ ঐশী গ্রন্থ আল-কোরআনের পাঁচ শতাধিক আয়াত এবং মহামানব বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ মুস্তাফা (সা.)-এর পাঁচ শতাধিক হাদিস উপস্থাপন করা হয়েছে। আল কোরআন হচ্ছে রোজ কেয়ামত পর্যন্ত সমগ্র মানব জাতির জন্য একটি সম্পূর্ণ জীবন বিধান। অপরদিকে একজন খাঁটি মুসলমান হওয়ার জন্য মহানবী মুহাম্মদ (সা.)-এর হাদীসসমূহ মানব জীবনে বাস্তবায়ন করা অত্যন্ত জরুরী।
সবাই সফল হতে চান। সফলতা অর্জন করার স্পৃহা প্রতিটি মানুষের একটি সহজাত প্রবৃত্তি। ধর্ম-বর্ণ-জাতি নির্বিশেষে সব মানুষের জীবনে একটি স্বপ্ন—আর তা হলো জীবনে সফল হওয়া। তবে সফলতার সংজ্ঞা যাই হোক না কেন, সব মানুষ কিন্তু একই বিষয়ে সফল হতে চান না। ধর্ম-বর্ণ-জাতি ভেদে স্থান-কাল-পাত্র ভেদে একেকজন একেকভাবে সফল হতে চান। কেউ জীবনে প্রচুর ধন-সম্পদ-প্রাচুর্যের মালিক হওয়াকেই সফলতা মনে করেন। আবার কেউ উচ্চশিক্ষা অর্জনকে সফলতা মনে করে থাকেন। আবার কেউ সহজ-সরল-নিষ্কণ্টক জীবন যাপনকেই সফলতা মনে করেন। অন্যদিকে রয়েছে— কেউ ইহকালে সফল হতে চান, পরকালের প্রতি তার কোন মোহ নেই; আবার কেউ ইহকালে কিছু পাক আর না পাক তাতে তেমন দুঃখ নেই তবে পরকালের সফলতা অবশ্যই চান।
আমরা যারা নিজেদেরকে মুসলমান দাবি করি তাদের অবশ্যই মনে রাখতে হবে আমাদের প্রতিটি কাজ যেনো কোরআন-সুন্নাহ মোতাবেক হয়। তা না হলে আমাদের ইহকালীন কাজকর্ম অবিশ্বাসীদের মতো কিছুটা আপাত সফল মনে হলেও পরিণামে পরকালে তা আমাদের জন্য ধ্বংসের কারণ হয়ে দাঁড়াবে। ভুলে গেলে চলবে না যে, শুধু ইহকালে সফল হলেই চলবে না—পরকালেও সফল হতে হবে। আর পরকালের সফলতা মানেই হলো—জান্নাতে যাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করা। পরকালে সফল হতে হলে আমাদের প্রতিটি কাজ হতে হবে প্রিয়নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর অনুকরণে। অর্থাৎ, কোরআনের আইন অক্ষরে অক্ষরে পালন করতে হবে এবং রাসূল (সা.)-এর হাদীসমতো জীবন-যাপন প্রক্রিয়া হতে হবে। পবিত্র কোরআনে ছয় হাজার ছয় শ’ ছেষট্টিটি আয়াত রয়েছে—যার সবগুলোই আমাদের জানা ও মানা দরকার এবং মহানবী (সা.)-এর হাজারো হাদীস রয়েছে—যার সবগুলোই আমাদের জানা ও মানা দরকার। তবে এর ভেতর থেকে মানবজীবনে প্রতিনিয়ত পদে পদে প্রয়োজনীয় বিষয়ের দিকে লক্ষ্য রেখে পবিত্র কোরআনের পাঁচ শতাধিক নির্বাচিত আয়াত এবং রাসূল (সা.)-এর পাঁচ শতাধিক হাদীস নিয়ে এ বইটি সম্পাদনা করা হয়েছে—যাতে করে পাঠকসমাজ এ বইটি পড়ে ব্যক্তিগত জীবনে পদে পদে উপকৃত হতে পারেন। তবে সময়-সুযোগ করে পবিত্র কোরআনের সবগুলো আয়াত ও রাসূল (সা.)-এর সবগুলো হাদীস পড়ে নিয়ে জীবনে অনুসরণ করাই প্রকৃত মুমীনের বৈশিষ্ট। ‘সফলতা অর্জনে কোরআন-হাদিসের নির্বাচিত হাজার বাণী’ বইটি অধ্যয়ন করে সেমতে জীবনাচার গড়ে তুলতে পারলে আশারাখি ধর্ম-বর্ণ-গোত্র নির্বিশেষে যে কোন মানুষ অবশ্যই সফল জীবনের অধিকারী হবেন। সফল হবেন ইহকাল এবং পরকালের জীবনে। বইটি পড়ে যদি পাঠকদের জীবনে সামান্য সফলতাও অর্জিত হয় তাহলে আমি আমার এ প্রচেষ্টা সার্থক হয়েছে বলে মনে করবো।
বিশ্বব্যাপী মানুষের মাঝে নানা মত ও পথ রয়েছে। কেউ কেউ পরকালে বিশ্বাসী নয়, কেউবা ভ্রান্ত ধর্ম পালন করছে, আবার কেউ কেউ মনে করে ভালো কাজই ইবাদত—অতিরিক্ত কোন ইবাদত প্রয়োজন নেই। কিন্তু একমাত্র সত্যধর্ম ইসলামেই রয়েছে মানবজীবনের প্রকৃত মুক্তির পথ। ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের প্রতিটি কাজে-কথায়-আচারে রয়েছে হালাল-হারামের বিধি-নিষেধ—যা যথাযথ ও সুচারুরূপে পালন করলে প্রতিটি কাজেই হওয়া যাবে সফল। দুনিয়াতে তিনি হবেন একজন সুখী মানুষ এবং পরকালেও হবেন কামিয়াব।