"আরব্য রজনীর মহানায়ক" বইটির ভূমিকা থেকে নেয়াঃ আব্বাসীয় খলিফা হারুন আল রশিদকে বলা হয় কিংবদন্তির মহানায়ক। তাবৎ দুনিয়ার শিল্প-সাহিত্য ও সংস্কৃতিতে মহান এই শাসককে নিয়ে যত কর্ম হয়েছে তার কিয়ংদংশও মহাকালের অন্য কোনাে রাজা-বাদশাহ কিংবা সুলতান-সম্রাটকে নিয়ে হয়নি। তিনি হলেন আব্বাসীয় বংশের ৫ম খলিফা। তাঁর রাজত্বকাল ছিল ৭৮৬ খ্রিস্টাব্দের সেপ্টেম্বর মাস থেকে ৮০৯ সালের মার্চ মাস অবধি। অর্থাৎ মােট ২৩ বছর। তার রাজধানী বাগদাদ ছিল সমসাময়িক দুনিয়ার সবচেয়ে জাঁকজমকপূর্ণ, অভিজাত এবং জনবহুল আকর্ষণীয় নগরী। অন্যদিকে তাঁর রাজত্বের পরিধি এবং ব্যাপ্তি এতটাই বিশাল ও ব্যাপক ছিল যার নজিরও ইতিহাসে দ্বিতীয়টি নেই। রাজ্য সুশাসন ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা এবং প্রজাপালনে খলিফা হারুন আল রশিদের ব্যতিক্রমী এবং উদ্ভাবনী নীতিমালা প্রণয়ন এবং সেগুলাের সফল বাস্তবায়নের নাটকীয় সব পন্থার জন্য তিনি কিংবদন্তির মহানায়ক হয়ে আছেন। সারা দুনিয়ার নামকরা বিজ্ঞানী, সাহিত্যিক, দার্শনিক, ইতিহাসবিদ, ধর্মবেত্তা, সুফি সাধক, ব্যবসায়ী, পর্যটক এবং কূটনীতিবিদগণ তাঁর রাজধানীতে ভিড় করতেন এবং প্রয়ােজনে রাজ আনুকূল্য লাভ করতেন। প্রধান গ্রিক সাহিত্য এবং ল্যাটিন ভাষায় রচিত প্রায় বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া অমূল্য গ্রন্থরাজি উদ্ধার করে প্রয়ােজনীয় অনুবাদ এবং সংরক্ষণের জন্য পশ্চিমা দুনিয়া বাদশাহ। হারুন আল রশিদের নিকট সর্বদা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে। খলিফা আরুন আল রশিদের শাসনামলের ব্যবসা-বাণিজ্যের অন্তর্জাতিক, রাষ্ট্র ব্যবস্থার সর্বজনীনতা এবং মানবসভ্যতাকে এগিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে রাষ্ট্রনায়কদের জাদুকরি ভূমিকার যে উদাহরণ সৃষ্টি হয়েছে তা ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লিখিত থাকবে। জ্ঞান-বিজ্ঞানের চর্চা, ভালাে মানুষদের আশ্রয় প্রশ্রয় এবং দুষ্টের দমনে তিনি যে সফলতা দেখিয়েছেন তা কিয়ামত পর্যন্ত অনাগত দিনের শাসকদের জন্য অনুকরণীয় হয়ে থাকবে। রাজনীতির জটিল কার্যাবলি, রাষ্ট্র ব্যবস্থাপনা, যুদ্ধ-বিগ্রহ, কূটনীতি ইত্যাদি দৃশ্যমান কর্মের বাইরে তাঁর ছিল চমৎকার একটি পারিবারিক এবং একান্ত ব্যক্তিগত জীবন। মূলত তার ব্যক্তিগত রহস্যময় জীবনের ওপর ভিত্তি করেই রচিত হয়েছে পৃথিবী বিখ্যাত সাহিত্য কর্ম Arabian Nights বা আরব্য রজনী। আলােচ্য গ্রন্থে মূল ইতিহাস এবং এতিহাসিক চরিত্রগুলাে অবিকৃত রেখে গল্পকার বাদশাহ হারুন আল রশিদের ব্যক্তিগত জীবন, রাজকর্ম এবং সমসাময়িক রাজনীতির বিভিন্ন দিক ফুটিয়ে তােলা হয়েছে।
১৯৬৭ সালে ফরিদপুর জেলার সদরপুর উপজেলার অতি সাধারণ মুসলিম পরিবারে জন্ম। শিক্ষা ও কর্মজীবনের বিভিন্ন পর্যায়ে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে শুরু করে পৃথিবীর অনেক দেশ ভ্রমণের সুযোগ হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইনে স্নাতক সম্মানসহ স্নাতকোত্তর ডিগ্রি। একই বিষয়ে লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়ন। কর্মজীবন শুরু সাংবাদিকতা দিয়ে। আশি দশকের শেষদিকে দেশের কয়েকটি প্রথিতযশাদৈনিক, সাপ্তাহিক পত্রিকার বার্তা বিভাগ ও সম্পাদনা বিভাগে কাজ করার অভিজ্ঞতা দিয়ে পেশা পরিবর্তন। পরবর্তীকালে কয়েকটি বহুজাতিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে চাকরির সুবাদে আন্তর্জািতক ব্যবসার ধরন ও প্রকৃতির ওপর সম্যক ধারণা লাভ এবং ১৯৯১ সাল থেকে নিজের ব্যবসা শুরু। ব্যবসা-বাণিজ্যে সফলতা লাভের পাশাপাশি বিভিন্ন জনকল্যাণ কর্মকাণ্ড শুরু এবং সেই পথ ধরেই জাতীয় রাজনীতিতে প্ৰবেশ। পটুয়াখালী জেলার দশমিনা-গলাচিপা উপজেলাদ্বয় নিয়ে গঠিত সংসদীয় আসনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মনোনয়নে তিনি এমপি হন। ৯ম জাতীয় সংসদে। খোলামেলা বক্তব্য, সাবলীল উপস্থাপনা ও পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত ব্যতিক্রমী কলামের জন্যে ইতিমধ্যে তিনি বাংলাদেশের সর্বত্র ব্যাপকভাবে পরিচিতি লাভ করেছেন। তার বিভিন্ন লেখা ও বক্তব্য বহুবার জাতীয় ইসুতে টক অব দি কান্ট্রি-তে পরিণত হয়েছে। এসব কারণে গোলাম মাওলা রনি দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে অন্যতম আলোচিত ব্যক্তিত্ব। ব্যক্তিগত জীবনে বিবাহিত। পারিবারিক জীবনে দুই পুত্ৰ সন্তান ও এক কন্যা সন্তানের জনক। স্ত্রী কামরুন নাহার রুনু সাধারণ গৃহিণী।