জাহানারা বুলা সমকালীন বাংলা কবিতার পরিচিত নাম। বিশেষ করে নতুন প্রযুক্তির যে আন্দোলন তার সাথে তিনি সমানতালে বিচরণশীল। ফেসবুক, ভার্চুয়াল প্রোগ্রাম, ইউটিউব ইত্যাদি মিডিয়া তাকে কাব্যমোদীদের কাছে সমাদরণীয় করে তুলেছে। তাঁর কবিতা অত্যন্ত সংবেদনশীল। ব্যক্তির অন্তরজ্বালা — ইঙ্গিতে আভাসে ইশারায় প্রতিভাত করার দারুণ ক্ষমতা তাঁর। আত্মজৈবনিক ঘূর্ণি, রাজনৈতিক ও বৈশ্বিক সঙ্কট তাঁকে হতাশাগ্রস্ত করে তুললেও যন্ত্রণাচক্র থেকে আত্ম-মুক্তির চিৎকার পাঠককে সম্মোহিত করে। আমি তাঁর কবিতা গভীরভাবে পড়ি ও আনন্দ পাই। আমি নন্দনতাত্তি¡ক জায়গা থেকে কবিতাকে দেখি। যদিও শিল্পের জন্য শিল্প — এ বক্তব্যে আমার বিশ্বাস নেই; বরং সমাজের প্রতি কবির যে স্বতস্ফ‚র্ত দায় তার প্রতি সমর্থন আছে। জাহানারা বুলার বর্তমান গ্রন্থেও নামকরণের মধ্যে লুকিয়ে আছে কবির অভিব্যক্তি। ‘দুঃখ বিলিয়ে দেউলিয়া আমি আজ শুধু সুখ নিয়ে বেঁচে থাকা বেঁচে থাকার ভান সে আমার।’ এই ‘ভান’ কবিতার মধ্যে কবির সততা। কোন সুখে তিনি নিমজ্জিত তা’ ইশারায় তিনি বুঝিয়েছেন। চমৎকার আত্মনিমজ্জন। গ্রন্থের প্রায় প্রতিটি কবিতা এভাবে আমাদের নতুন এক ভাবনার জগতে নিয়ে যায়। তিনি আধুনিক কিন্তু অরোমান্টিক নন। ডি এইচ লরেন্স প্রমুখ আধুনিকতাবাদীরা আবেগ ও রোমন্টিকতা বিসর্জন দিতে নারাজ। জাহানারা বুলার কবিতা তাদের আদর্শে উৎকীর্ণ। তার আছে সৎ কবির স্বীকারোক্তি আর প্রবল অভিমান। জীবন ও জগতকে স্পর্শ করতে চান নতুন ইমেজ দিয়ে। তার ক্যানভাস খুব দীর্ঘ না হলেও আটপৌরে জীবনকে তিনি নতুন রঙ ও রেখায় তীব্র করে তুলেছেন। তার আলোহীন অন্ধকারে জেগে থাকুক পাঠকের নির্ঘুম সময়। রেজাউদ্দিন স্টালিন
জন্ম ১২ নভেম্বর ১৯৬৩, নারায়ণগঞ্জ জেলায় | বাবা আবদুল কাদের মিয়া, মা নূরুন্নাহার বেগম। ডানা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে অনার্স এবং মাস্টার্স শেষ করে। সংসার জীবনে ব্যস্ত হয়ে পড়েন জাহানারা ঝুলা। তাঁর কর্মজীবনের অভিজ্ঞতা স্বল্প সময়ের। সংসার জীবনের পাশাপাশি তিনি কিছুদিন একটি বেসরকারি কলেজে শিক্ষকতা করেন। এরপর ছেলেমেয়ের উচ্চশিক্ষার জন্য চলে যান সুদূর কানাডায়। ছেলেমেয়ের লেখাপড়া শেষ হলে জাহানারা বুলা ঢাকায় ফিরে আসেন এবং বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল টিউটোরিয়াল (BIT) নামে উচ্চমানের একটি ইংরেজি মিডিয়াম স্কুলে বাংলার শিক্ষক হিসেবে কাজ করেন। বিশেষ প্রয়োজনে কাজ থেকে অব্যাহতি নিয়ে তিনি আবার চলে যান কানাডায়। এভাবে বারবার যাতায়াতের কারণে এবং সংসার-সন্তান-স্বামীর প্রতি গভীর মনোযোগের কারণে স্থির হয়ে পেশায় যুক্ত থাকা তাঁর পক্ষে সম্ভব হয়নি। শিল্প সাহিত্যের নানা শাখায় তাঁর আগ্রহ থাকলেও সন্তান-সংসার-স্বামীর প্রতি অধিকতর কর্তব্যের পাশাপাশি খুব একটা মনোযোগ তিনি দিতে পারেননি অন্য কোনো কাজেই। সন্তানরা মোটামুটি একটা পর্যায়ে পৌঁছে যাওয়ার পর ২০১২ সাল থেকে তিনি লেখালেখিতে অল্পবিস্তর মনোযোগ দিতে পেরেছেন। এখনো নিরবচ্ছিন্ন সময় তিনি লেখার কাজে ব্যয় করতে পারেন না। সংসারের ফাঁকেফাঁকে সাহিত্য চর্চা করেন। ভালো কিছু লিখতে চাওয়ার সময়টুকুই এখন তাঁর কাছে বেশি আনন্দের। বিভিন্ন জাতীয় পত্রিকা, লিটল ম্যাগাজিন, সংকলন, ওপার বাংলার ম্যাগাজিন, শিশু এক্সডেমি, বাংলা এক্সডেমি এবং কানাডার টরন্টো ভিত্তিক প্রায় সবগুলো বাংলা পত্রিকায় তাঁর লেখা প্রকাশিত হয়। জাহানারা বুলা দুই সন্তানের জননী। প্রথমটি কন্যা সন্তান এবং দ্বিতীয়টি পুত্র। তাঁর কন্যা তাসমিয়া তাবাস্সুম কানাডায় 'ইউনিভার্সিটি অফ টরন্টো' থেকে কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের উপর গ্র্যাজুয়েশন, মাস্টার্স শেষ করে এখন পিএইচডি করছে। তাঁর পুত্র তওসিফ মুহান্তের কানাডার 'ইয়র্ক' ইউনিভার্সিটি থেকে পড়া শেষ করে এখন ঢাকায় মাস্ক কমিউনিকেশনের উপর পড়াশোনা করছে। সে একজন প্রফেশনাল ফটোগ্রাফার এবং গিটারিস্ট। জাহানারা বুলার স্বামী মুস্তাফিজুর রহমান একজন সফল ব্যবসায়ী। তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থঃ যদি আরো কারে ভালোবাসো (উপন্যাস-সিঁড়ি প্রকাশন), ফিরে চলো নিরুপমা (উপন্যাস-বলাকা প্রকাশন), পুতুল বিয়ে (শিশুতোষ ছড়া-শুদ্ধস্বর), তুশি বাংলা বলতে পারে না (শিশুতোষ গল্প-জিনিয়াস পাবলিকেশন্স), কষ্টে জমা জল (কাব্যগ্রন্থ-সূচিপত্র), পারিজাতের কেশর (কাব্যগ্রন্থ-সূচিপত্র), কবিতার মত ঠোঁট ছুঁয়ে থাকো তো (কাব্যগ্রন্থ-বলাকা প্রকাশন), ধূসর রঙের পাখি (কাব্যগ্রন্থ-মহাকাল), আলোহীন অন্ধকারে (কাব্যগ্রন্থ-মহাকাল)।