পর্দা শব্দের আভিধানিক অর্থ হলো; আবরণ বা কোনো কিছু দিয়ে ঢেকে রাখা, কোনো কিছুকে দূষণমুক্ত বা বিপদমুক্ত রাখা। যেমন বলা হয়; ভাতগুলো ঢেকে রাখো; এখানে ঢেকে রাখাটাই পর্দা। ইংরেজিতে বলা হয়; covering of any thing আরবিতে বলা হয়:- حجاب পর্দা, বোরকা (পর্দা করার পোশাক) ইসলামী শরিয়তের পরিভাষায়; নারী ও পুরুষের ‘সতর’ ঢেকে রাখার নাম পর্দা, গায়রে মাহরাম থেকে নিজেকে হেফাজত করার নাম পর্দা; পোশাক ও আবরণের মাধ্যমে পবিত্র জীবন-যাপনের নামই হলো পর্দা। অর্থাৎ পুরুষকে যেমন তার সতর ঢেকে রাখতে বলা হয়েছে, তেমনি স্ত্রীলোকেও তার জিনাত বা সৌন্দর্য যত্র-তত্র প্রকাশ না করার তাকিদ করেছে। ইসলাম ষড়রিপু বলে কিছু স্বীকার করে না। বরং কাম, ক্রোধ লোভ ইত্যাদিকে মানবীয় গুণ বলে স্বীকার করে। এগুলো যাতে নিয়ন্ত্রণে থাকে, তারই ব্যবস্থা দিয়েছে ইসলাম। মানুষের মাঝে সৃষ্ট যৌনক্ষুধাকে আগুনের সাথে তুলনা করা যায়। আগুন ছাড়া যেমন দুনিয়ার সব কাজ-কর্ম অচল, তেমনি যৌনশক্তি না থাকলেও মানব-বংশ হবে ধ্বংস। কিন্তু প্রয়োজনে অগ্নিকে যেমন নিয়ন্ত্রণ করে ব্যবহার করতে হয়, অন্যথায় জ¦লেপুড়ে সব ছাই হয়ে যাওয়ার সম্ভবনা থাকে, তেমনি যৌনশক্তিকেও নিয়ন্ত্রণ করে চলতে হয়, অন্যথায় এই সুপ্ত অগ্নিও মানুষের চরিত্র এবং সমাজকে জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে ছারখার করে দিতে পারে। দুনিয়ার এর নজীরের অভাব নেই। আগুনের রূপে মুগ্ধ হয়ে পতঙ্গ যেমন উন্মাদ হয়ে তাতে আত্মহুতি দেয়, তেমনি যৌন বিকৃতির ফলেও মানুষ পরিণামে ধ্বংস হয়ে যায়। আগুন যাতে চারদিকে ছড়িয়ে পড়তে না পারে সেজন্য যেমন বেষ্টনী বা সতর্কতা প্রয়োজন তেমনি যৌনাগ্নিকে সংরক্ষণের জন্য পর্দার প্রয়োজন। দেখুন, বিশ্ব-মুসলিম আজ সবচেয়ে বেশি দুর্বল ও উদাসীন হয়ে পড়েছে পর্দার ক্ষেত্রে। পুরোপুরি পর্দা করছেন সমাজে এমন মুসলিম আজ খুবই বিরল। তাই পর্দার প্রয়োজনীয়তা বৈজ্ঞানিক যুক্তির সাহায্যে তুলে ধরার সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়েছি এ ক্ষুদ্র পুস্তিকায়। আরেকটি কথা, বইটির নাম বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিতে পর্দা। মানুষ যুক্তিবাদী জীব হওয়ার কারণে এতে আমি কিছু বৈজ্ঞানিক যুক্তি তুলে ধরেছি। আমরা জানি, ভক্তি ও যুক্তি- দুটোই গুণ। তবে ভক্তি হচ্ছে প্রকৃত গুণ। আর যুক্তি হচ্ছে ভক্তি অর্জনের একটা পন্থা মাত্র। উপরন্তু ইসলাম যুক্তি ও স্বভাববিরুদ্ধ কোনো ধর্মমত নয়। বরং ইসলাম যুক্তি-বিবেক ও জ্ঞান-প্রজ্ঞাসম্মত ধর্ম।
ময়মনসিংহ জেলার কেওয়াটখালী ওয়াপদা পাওয়ার হাউজ রোড এলাকার এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে সফিকুল ইসলাম ভূঁইয়ার জন্ম। তার পিতা মো. নজরুল ইসলাম ভূঁইয়া স্থানীয় সর্বজন মান্য প্রভাবশালী ব্যক্তি। তিনি বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী রেজিস্টার পদ থেকে অবসর গ্রহণ করেন। লেখক মুজাহিদ ইবনে শফিক ও আফিফা বিনতে শফিক নামের দুই সন্তানের গর্বিত জনক। তিনি বর্তমানে জামেয়া কাসেমিয়া নরসিংদীতে বাংলা বিভাগে সিনিয়র সহকারী অধ্যাপক পদে নিয়োজিত আছেন। শিক্ষা জীবনে তিনি ছিলেন ধৈর্যশীল, সহিষ্ণু, সর্বোপুরি সত্যভাষী ও মেধাবী। তিনি ৫ম ও ৮ম শ্রেণিতে বৃত্তি পান এবং ১৯৮০ সালে ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় হাই স্কুল থেকে এস. এস. সি পাশ করেন। তবে তার শিক্ষা জীবনের একাংশ কেটেছে রংপুর ক্যাডেট কলেজে। ১৯৮৭ সালে জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বি. এ. অনার্স (বাংলা) এবং ১৯৮৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এম.এ. (বাংলা) পাশ করেন।