কুরআনে ইসলামের শরিয়ত, করণীয়, বর্জনীয়, আদেশ, নিষেধ এবং উপদেশ বর্ণিত হয়েছে। আমাদের জন্য অত্যাবশ্যকীয়, প্রয়োজনীয়, বাস্তবভিত্তিক, জীবনে প্রয়োগযোগ্য বিধান আল্লাহ সন্দেহাতীতভাবে আল কুরআনেই বর্ণনা করেছেন। কুরআনের সব বর্ণনা, ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণ সহজ, সরল, বিশদ, সম্পূর্ণ, পরিপূর্ণ, সত্য, বিশুদ্ধ এবং সর্বকালের জন্য প্রযোজ্য। বর্তমানে ইসলামি স্কলাররা বা আলেম-ওলামারা (অবশ্যই ব্যতিক্রম রয়েছে) কুরআনের বিশুদ্ধ তেলাওয়াত ও মুখস্থকেই সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছেন। আবার ধর্মের সাথে নিজস্ব স্বার্থকে মিলিয়ে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও বৈজ্ঞানিক নানা ব্যাখ্যা দিচ্ছেন একদল তথাকথিত জ্ঞানী মুসলিম সম্প্রদায়। এসব ব্যাখ্যা ও অপব্যাখ্যার কারণে সাধারণ মুসলিমরা খাবি খাচ্ছে এবং তাদের করণীয় নিয়ে সঠিক দিকনির্দেশনা পাচ্ছে না। আবার একদল নেতা, পীর, বুজুর্গ, কামেল, ধর্মের নামে পছন্দসই তাফসির, কুরআন অননুমোদিত হাদিস এবং নানারকম মুখরোচক কাহিনি যোগ করে নিজেদের স্বার্থ হাসিলের জন্য বিভিন্ন দল, উপদল, গ্রæপ তৈরি করে নানারকম ধর্মীয় চর্চা প্রবর্তন করেছেন এবং এখনো করছেন। এ জন্যই ইসলামে আজ এত দল, গোষ্ঠী, গ্রæপ, উপদল, ফেরকা, ভিন্ন মতাদর্শী ইত্যাদি। কোথাও কোনো ঐক্য নেই। যেখানে আল্লাহ মুসলিমদের ঐক্যের নির্দেশ দিয়েছেন। যে কোনো মূল্যে মুসলিম ঐক্য বজায় রাখা অত্যাবশ্যক। আল্লাহ বলেন, আর তোমরা সবাই আল্লাহর রজ্জুকে সুদৃঢ় হাতে ধারণ করো; পরস্পর বিচ্ছিন্ন হইও না। আর তোমরা সে নেয়ামতের কথা স্মরণ করো যা আল্লাহ তোমাদের দান করেছেন। তোমরা পরস্পর শত্রæ ছিলে। অতঃপর আল্লাহ তোমাদের মনে সম্প্রীতি দান করেছেন। ফলে এখন তোমরা তাঁর অনুগ্রহের কারণে পরস্পর ভাই ভাই হয়েছ। তোমরা এক অগ্নিকুÐের কাছে অবস্থান করছিলে। অতঃপর তা থেকে তিনি তোমদের মুক্তি দিয়েছেন। এভাবেই আল্লাহ নিজের নিদর্শনসমূহ প্রকাশ করেন; যাতে তোমরা হেদায়েতপ্রাপ্ত হতে পার। আর তোমাদের মধ্যে এমন একটি দল থাকা উচিত, যারা আহŸান করবে সৎকর্মের প্রতি; আর নির্দেশ দেবে ভালো কাজের এবং নিষেধ করবে অন্যায় কাজ হতে; আর তারাই সফলকাম। (সুরা আলে ইমরান : ১০৩-১০৪)। এ দেশসহ বিশ্বে শত শত বিশুদ্ধ আলেম-ওলামারা দ্বীনের খেদমতে ও উম্মতের জন্য অক্লান্ত শ্রম ও মেধা দিয়ে সংগ্রাম করে যাচ্ছেন এবং ভবিষ্যতেও যাবেন। এ দেশের হাজার হাজার আলেম-ওলামাদের অক্লান্ত ত্যাগ ও শ্রমেই দেশের হাজার হাজার এতিমখানাগুলোতে লক্ষ লক্ষ এতিমরা একবেলা দুমোঠো খেয়ে ও সামান্য ধর্ম শিক্ষা নিয়ে বেঁচে আছে। বাস্তবেও হেদায়েত এবং সফলতার জন্য ইসলাম ও কুরআনের বক্তব্য ও নির্দেশনা হলোÑ পরস্পর ভেদাভেদ ভুলে এক ও নেক হয়ে যাওয়া। কোনোরূপ দল, উপদল, গ্রæপ বা বিভাজন সৃষ্টি বা সৃষ্টির চেষ্টা করা; তা যেই করুক না কেন সেটা ইসলাম ও কুরআনের বিপরীত কাজ এবং আল্লাহর হুকুমের পরিপন্থী ব্যাখ্যা, পথ, মত এবং আদর্শ। আল্লাহ বলেন, নিশ্চয়ই যারা স্বীয় ধর্মকে খÐ-বিখÐ করেছে এবং অনেক দলে বিভক্ত হয়ে গেছে, তাদের সাথে তোমার কোনো সম্পর্ক নেই। তাদের ব্যাপার আল্লাহর নিকট সমর্পিত। অতঃপর তিনি বলে দেবেন যা কিছু তারা করে থাকে। (৬ : ১৫৯) আমাদের মনে রাখতে হবে, ইসলামের তথা কুরআনের ভুল ব্যাখ্যায় ও ভুল চর্চায় একবার অভ্যস্ত হয়ে গেলে তা থেকে বেরিয়ে আসা কারও পক্ষেই সম্ভব নয়। আল কুরআনকে যারা মাতৃভাষায় অনুবাদসহ পড়ে রবের নির্দেশনা মোতাবেক ইমান আনবে এবং তাতে দৃঢ়তা অবলম্বন করবে তাদের জন্য আল্লাহর কিছু পুুরস্কার রয়েছে। আল্লাহ তাদেরকে তাঁর নিজের রহমত ও অনুগ্রহের আওতায় স্থান দেবেন এবং তাঁর দিকে আসার মতো সরল পথ তুলে ধরবেন ইনশাআল্লাহ। এ ব্যাপারে আল্লাহ বলেন, অতএব, যারা আল্লাহর প্রতি ইমান এনেছে এবং তাতে দৃঢ়তা অবলম্বন করেছে তিনি তাদের স্বীয় রহমত ও অনুগ্রহের আওতায় স্থান দেবেন এবং নিজের দিকে আসার মতো সরল পথে তুলে দেবেন। (সুরা নিসা : ১৭৫)। আল্লাহ দুটো বিষয় স্পষ্ট করে বর্ণনা করেছেন। আর তা হলো, যে সৎকর্ম করে সে নিজের উপকারের জন্যই তা করে, আর যে অসৎকর্ম করে তা তার ওপরই বর্তাবে। তোমার রব বান্দাদের প্রতি জুলুম করেন না। (সুরা হা-মিম সিজদা : ৪৬)। এ গ্রন্থে প্রচলিত হাদিসের অনেক কিছুই সংগৃহীত/ উদ্ধৃত/ উল্লিখিত হয়েছে। পাঠকের কাছে অনুরোধ থাকবে হাদিসের কোনো বিবরণ/ উদ্ধৃতি যদি আল কুরআনের বিপরীত হয় বা অসামঞ্জস্য হয়; তা অবশ্যই গ্রহণ করা যাবে না। কুরআন হচ্ছে গ্রহণযোগ্যতার সর্বোচ্চ সীমা। এর বাইরে যাওয়া যাবে না। মুমিনের হেদায়েত কুরআনেই রয়েছে। (দলিল ২ : ২)। আল্লাহ রাসুল মুহাম্মদ (সা.)-কে বলেন, আমি তোমার প্রতি কিতাব (কুরআন) নাজিল করেছি; এটি এমন যে, তা প্রত্যেক বস্তুর সুস্পষ্ট বর্ণনা, হেদায়েত রহমত এবং মুসলিমদের জন্য সুসংবাদ (১৬ : ৮৯)। আমাদের মনে রাখতে হবে, কুরআন মুসলিমদের জন্য পথনির্দেশ ও সুসংবাদ (১৬ : ১২০)