"যুদ্ধদিনের না হারানো স্মৃতি" এটি একটি মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচারণ এর উপর লেখা বই। প্রায় ৫১ বছর আগে ঘটে যাওয়া নিজের দেখা বা শুনা মুক্তিযুদ্ধের কিছু কিছু ঘটনা লিখতে গিয়ে এক অজানা আবেগে আপ্লুত হয়ে যাই। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ এবং পাকবাহিনীর লোমহর্ষক হত্যাযজ্ঞের কথা শুনে বিদেশে আমার পরিচিত সকলেই অবাক হয়ে যেতেন। এতগুলো বছর পাড় হলেও প্রায় সবকিছুই ফটোগ্রাফিক মেমোরির মতোই মনে গেঁথে আছে। যাদের কথা এই বইয়ে লিখেছি, অনেকেই আজ এ পৃথিবীতে নেই, তাঁদের কথা বলতে গিয়ে মন অনেক ভারাক্রান্ত হয়ে উঠে। যে বয়সে আমি মুক্তিযুদ্ধ দেখেছি বা শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত যুদ্ধের যে ভয়াবহতা দেখেছি তারই সংক্ষিপ্ত রূপায়ন করার একটু প্রয়াস ঘটেছে এই বইয়ে। দীর্ঘ তেইশ বছরের অর্থনৈতিক বৈষম্য, রাজনৈতিক বৈষম্যের ফল এই মুক্তিযুদ্ধ। ন'মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধশেষে বাঙালী জাতি ছিনিয়ে এনেছে দীর্ঘ আকাঙ্খিত স্বাধীনতা। নতুন বাংলাদেশ গড়ার চিন্তা চেতনায় ধর্ম বর্ণ নির্মিশেষে সকলেই এগিয়ে আসবে যুদ্ধশেষে এটাই ছিলো একান্ত কামনা। এতোদিন পরেও ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো মনের মুকুরে জ্বলজ্বল করছে। মুক্তিযুদ্ধে প্রত্যক্ষভাবে অংশগ্রহন না করলেও স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হওয়ার আগ থেকে স্বাধীনতা লাভ করা পর্যন্ত প্রতিটি নিশ্বাসে, শয়নে স্বপনে, মিছিলে মিটিংয়ে, আর সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে ঐ বয়সেই ছিলাম সর্বদাই তৎপর, সচেতন এবং সদা জাগ্রত। একাত্তরে যা দেখেছি সবাইকে বললে হয়তো অনেকেই জানতে পারবে কী ঘটেছিলো আমার দেশে, আমার এলাকায়, আমার, আর আমাদের ন'মাসের জীবনে। আমার ছোট্ট এ প্রয়াসে কেঊ যদি একটুও জানতে পারে বাঙালীর স্বাধীনতা যুদ্ধের কথা, মুক্তির কথা সেটাই হবে আমার প্রচেষ্টার একান্ত স্বার্থকতা। বইটিতে কোন ইতিহাস লেখা হয়নি, কোন রাজনৈতিক মতাদর্শের প্রকাশ ঘটেনি, কাউকে উপেক্ষা করার চেষ্টা করা হয়নি। শুধু আছে আমার দেখা মুক্তিযুদ্ধের কিছু ঘটনাপ্রবাহ।