"দেবদাস "উপন্যাস টি শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় এর জনপ্রিয় লেখাগুলোর মধ্যে অন্যতম। এবং জনপ্রিয়তা এতটাই পেয়েছিল এখনো এই গল্পটা নিয়ে সিনেমা, নাটক হয়ে আসছে। শুধু তাই নয় কোনো ছেলে আজোও প্রেমে ব্যর্থ হলে তাকে কৌতুক ছলে দেবদাস তকমা দেওয়ার রেওয়াজ আছে। আমি এই লেখাটা ছোট বয়সেই পড়েছিলাম। গল্প এর প্রেক্ষাপটে ছিল বাল্যপ্রেম এবং তা গভীর। তারপর ওঠাপড়া গল্প এগিয়ে চলে। কিন্তু দেবদাস পার্বতী র প্রেমে ছেদ পড়ে। পার্বতী র অন্য একজনের সঙ্গে বিবাহ হয়। দেবদাস কলকাতায় চলে যান। সেখানে বহুজনের সঙ্গে আলাপ , চন্দ্রমুখী র কিছু ভূমিকা। দেবদাস বিরহে একরকম নিজেকে ধ্বংস করতে শুরু করে। অসুস্থ হয় আর শেষে পার্বতীর গ্রামে যায় মৃত্যুর আগে তার সাথে একবার দেখা হোক এই আশা নিয়ে কিন্তু তা অপূর্ণ থাকে এবং নায়ক তীব্র যন্ত্রনা নিয়ে মৃত্যু তে ঢলে পড়ে। এত অমর একটি কাহিনী কিন্তু আমার ভালোলেগেনি। প্রশ্নে ব্যক্তিগত মতামত দিতে বলা হয়েছে । যদিও জানি এবিষয়ে মত দেবার কোনো যোগ্যতা বা ধৃষ্টতা কোনো টাই আমার নেই তবু বলছি। দেবদাস যদি তার পার্বতী কে এতই ভালোবাসতেন তবে কেন পারলেন না সবকিছু কে উপেক্ষা করে পার্বতীকে নিজের করতে। কেন দেবদাস চরিত্র দৃঢ় হলো না উপন্যাসে। পার্বতীর সাথে বিছিন্ন হবার পর চন্দ্রমুখী র সাথে সাক্ষাৎ হয় দেবদাসের, হ্যাঁ একথা ভীষণ সত্যি পার্বতী নায়কের জীবনে বিশেষ জায়গায় আছেন, তাকে না পাওয়ার জন্যে ই হৃদয় ক্ষত কিন্তু তার পারেও চন্দ্রমুখীর সঙ্গে নায়কের একটি সম্পর্ক তৈরি হয়। আর সেটাও প্রেম ছিলো। তবু কোথাও কোনো আলোর সঞ্চার ঘটেনি। ভগ্ন হৃদয় নায়ককে চন্দ্রমুখীর মাধ্যমে দিশা দেখানো যেতো , কিন্তু তা হয়নি। নায়কের মানসিক কষ্ট লাঘব করা যেতো হয়তো কিন্তু তার বদলে ঘটানো হলো এক বিশ্রী পরিনতি। লেখক যেমন সৃষ্টি করতে চেয়েছিলেন তেমন করেছিলেন আর এই "দেবদাস "স্বমহিমায় উজ্জ্বল। কথাশিল্পী শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় আমার ও ভীষণ পছন্দ এর লেখক । সমালোচনা করা আমার উদ্দেশ্য নয় কেবলমাত্র আমার কল্পনার প্রকাশ করলাম। তার কারন হলো বড্ড বেশি যন্ত্রনা ছিলো উপন্যাস টি তে। আর তাই আমার কল্পনা আকাঙ্ক্ষা করেছে যন্ত্রনা লাঘবের উপায় গুলো। আমার মতামত পুরো টা পড়ে যদি বিরক্ত লাগে যদি হাবিজাবি মনে হয় তবে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন এই অনুরোধ রইল।
বাঙালির জীবনের আনন্দ-বেদনাকে সাবলীল স্বচ্ছন্দ ভাষায় যে কথাশিল্পী পরম সহানুভূতি ভরে তুলে ধরেছেন বাংলা সাহিত্যে, তিনি শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়। ১৮৭৫ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর, হুগলি জেলার ছোট্ট গ্রাম দেবানন্দপুরে এক দরিদ্র ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন শরৎচন্দ্র। দারিদ্র্যের কারণে তাঁর শৈশবকাল বলতে গেলে মাতুলালয় ভাগলপুরেই কেটেছে। দারিদ্র্যের কারণে ফি দিতে না পেরে বেশ কয়েকবার স্কুল বদলিও করতে হয়েছিলো ছোটবেলা থেকেই দুরন্ত ও মেধাবী শরৎচন্দ্রের। এন্ট্রান্স পাস করে কলেজে ভর্তি হলেও এফএ পরীক্ষার ফি জোগাড় করতে না পেরে পরীক্ষায় বসতে পারেননি। দারিদ্র্য যখন শিক্ষাজীবনে অব্যহতি টানলো, তারপরই শুরু হলো আপাত সাধারণ এই মানুষটির বর্ণাঢ্য কর্ম ও সাহিত্যজীবন। এ সময় প্রতিবেশী বিভূতিভূষণ ভট্টের বাড়িতে আয়োজিত সাহিত্যসভায় লেখালেখির অনুপ্রেরণা ফিরে পেলেন যেন আবার। যার ফলশ্রুতিতে বাংলা সাহিত্য পেয়েছিলো বড়দিদি, দেবদাস, চন্দ্রনাথ, শুভদা’র মতো কালোত্তীর্ণ শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় এর উপন্যাস সমগ্র। কাছাকাছি সময়ে শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ছোটগল্প অনুপমার প্রেম, আলো ও ছায়া, হরিচরণ, বোঝা ইত্যাদি রচিত হয়। বনেলী রাজ স্টেটে সেটলমেন্ট অফিসারের সহকারী হিসেবে কিছুদিন কাজ করেন এসময়। কিন্তু তারপরই বাবার উপর অভিমান করে সন্ন্যাসদলে যোগ দিয়ে গান ও নাটকে অভিনয়ে মনোনিবেশ করেন। কখনও কলকাতা হাইকোর্টের অনুবাদক, আবার বার্মা রেলওয়ের হিসাব দপ্তরের কেরানি হিসেবেও কাজ করেন শরৎচন্দ্র। রাজনীতিতেও সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিলেন ১৯২১ সালে কংগ্রেসের অসহযোগ আন্দোলনে যোগ দিয়ে, এবং হাওড়া জেলা কংগ্রেসের সভাপতি নির্বাচিত হয়ে। এর মাঝে নিরন্তর চলেছে নিজস্ব জীবনবোধ ও অভিজ্ঞতা উৎসারিত সাহিত্যচর্চা। সমষ্টি আকারে শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় গল্প সমগ্র বিন্দুর ছেলে ও অন্যান্য, শ্রীকান্ত-৪ খন্ড, কাশীনাথ, ছেলেবেলার গল্প ইত্যাদি সময় নিয়ে প্রকাশিত হলেও পেয়েছিলো দারুণ পাঠকপ্রিয়তা। শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় এর বই সমূহ বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত হয়েছে, এবং বিশ্বব্যাপী পাঠকের কাছে হয়েছে সমাদৃত। শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় এর বই সমগ্র দেবদাস, শ্রীকান্ত, রামের সুমতি, দেনা-পাওনা, বিরাজবৌ ইত্যাদি থেকে বাংলাসহ ভারতীয় নানা ভাষায় নির্মিত হয়েছে অসাধারণ সফল সব চিত্রনাট্য ও চলচ্চিত্র। সাহিত্যকর্মে অসাধারণ অবদানের জন্য এই খ্যাতিমান বাংলা সাহিত্যিক কুন্তলীন পুরস্কার, জগত্তারিণী স্বর্ণপদক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিলিট উপাধি লাভ করেন। ১৯৩৮ সালের ১৬ জানুয়ারি কলকাতায় শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।