মনিরউদ্দীন ইউসুফ রচিত ‘কারবালা একটি সামাজিক ঘূর্ণাবর্ত’ -নামীয় পুস্তিকাটি ইতিপূর্বে ইসলামিক ফাউন্ডেশন, বাংলাদেশ থেকে যথাক্রমে ১৯৮০ এবং ১৯৯২ সালে প্রকাশিত হয়। পরবর্তী মুদ্রণ প্রকাশিত না হওয়ায় বইটি অনেক দিন যাবৎ দুষ্প্রাপ্য। প্রথম প্রকাশকালে এটি পাঠ করে স্বেচ্ছায় স্বপ্রণোদিত হয়ে অ্যাডভোকেট সঈইদ আবদুন নবী, যিনি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন সাবেক কর্মকর্তা ছিলেন, তা ইংরেজিতে অনুবাদ করেন। অতঃপর বইটির ইংরেজি অনুদিত অংশ দেশের একটি বহুল প্রচারিত দৈনিকে প্রকাশিত হয়। পরবর্তিতে কালান্তর প্রকাশনী ৪র্থ বর্ধিত সংস্করণে ইংরেজি অনুবাদ সহ অক্টোবর ২০১৩ সালে পুন:মূদ্রণ করে।
মহানবী (সা.)-এর সময় সামাজিক সুবিচারের স্বার্থে যেভাবে তিনি দেশ পরিচালনা করেছিলেন, তারই অনুসরণ করা হচ্ছিল পরবর্তী দুই খলিফার আমলে। সে সময়ে এই সামাজিক সুবিচার যথাযথভাবে প্রয়োগের ব্যাপারটি সমাজের সুবিধাভোগী শ্রেণী মনেপ্রাণে মেনে নিতে পারেনি। ফলে, তৃতীয় খলিফা হজরত উসমান (রা.)-এর সময়ে তাঁর বৃদ্ধ বয়স এবং অন্যান্য প্রতিকুলতার সুযোগে সেই সুবিধাভোগী গোষ্টী আবার মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। কারবালার শোকাবহ ঘটনার মূলে ছিল ‘সামাজিক সুবিচার’ নিশ্চিত করার এই প্রচেষ্টার মধ্যেই নিহিত। রাসূল (সা.) এমন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন যেখানে রোমান সম্রাট হিরাক্লিয়াসের মতো রাজা-বাদশা হওয়ার সুযোগ নাই; যেখানে মানুষ বঞ্চিত হয়ে থাকবে না; যেখানে সমাজে অর্থনৈতিক বৈষম্য এমন হয়ে উঠবে না যে, একজন সম্পদের পাহাড় গড়বে আর একজন না খেয়ে থাকবে। অত্যন্ত মূল্যবান এই পুস্তিকাটির লেখক মনিরউদ্দিন ইউসুফ ‘সামাজিক সুবিচার’ প্রতিষ্ঠিত করতে হলে ইসলামের দৃষ্টিতে কী কী করতে হবে, অতি সুন্দর রূপে এবং অত্যন্ত সংক্ষিপ্তাকারে তা উল্লেখ করেছেন। তাঁর ভাষায়-
“ইসলামি আইনের ব্যাখ্যায় যত মতভেদই থাকুক না কেন, তার মূল নীতিতে কোনো দ্বিমত থাকা উচিত হবে না। তেমন মতভেদ প্রকারান্তরে ভ্রান্ত ও বিপথগামী। প্রথম মূলনীতি: সার্বভৌমত্ব আল্লাহর; দ্বিতীয়: সমস্ত মানুষ সমান; তৃতীয়: সামাজিক সুবিচার প্রয়োগে বিশ্বাসী এবং অবিশ্বাসীর ক্ষেত্রে কোনো পার্থক্য করা হবে না; চতুর্থ: যুদ্ধক্ষেত্র ছাড়া কোনো মানুষের রক্তপাত বৈধ নয়; পঞ্চম: উপার্জনের স্বাধীনতার সঙ্গে ব্যয় করার বাধ্যবাধকতাও যুক্ত থাকবে।”
এই পুস্তিকার পরবর্তী প্রকাশনার ব্যাপারে বিপুল সাহিত্যামোদী পাঠককুলের পক্ষ থেকে অনুরোধ করা হচ্ছিল।
০৯ নভেম্বর ২০১৭ সালে, প্রেস ক্লাব (ভি.আই.পি অডিটোরিয়াম), যশোরে আলে রাসূল পাবলিকেশন্স-এর উদ্যোগে-
৬১ হিজরীর ২০ শে সফর জান্নাতী যুবকদের সর্দার, মানবতার মুক্তির মহান দিশারী, আহলে বাইতে রাসুল (দ.) তথা পুত পবিত্রতম মহাসত্ত্বা, সত্যের জন্য চরম আত্মোৎসর্গীত মহাপুরুষ ইমাম হুসাইন ইবনে আলী (সালামুল্লাহি আলাইহিমা)-এর শাহাদাতের চল্লিশতম দিন তথা ‘চল্লিশা’ এবং তাঁর বন্দী পরিবার-পরিজন কুখ্যাত ইয়াযিদ ইবনে মুয়াবিয়ার দামেস্কের কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে পবিত্র কারবালা মুআল্লা প্রত্যাবর্তন দিবসের স্বরণে সেমিনারের আয়োজন করে। সেমিনারের প্রতিপাদ্য বিষয় ছিল “কারবালা একটি সামাজিক ঘূর্ণাবর্ত” বইটি।
সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে লেখকের সুযোগ্য কনিষ্ঠ পুত্র জনাব সাঈদ আহম্মেদ আনীস শারিরিক অসুস্থতার কারনে উপস্থিত থাকতে না পারলেও সার্বক্ষনিক অনুষ্ঠানটির তদারকি এবং প্রয়োজনীয় দিক-নির্দেশনা দিতে থাকেন।
অনুষ্ঠানের কিছুদিন পরেই কালান্তর প্রকাশনী কর্তৃক প্রকাশিত ৪র্থ বর্ধিত সংস্করণ: অক্টোবর-২০১৩-এর সমস্ত কপি ফুরিয়ে যায়। পুণ:মুদ্রণের জন্য আলে রাসূল পাবলিকেশন্স-এর পক্ষ থেকে বার বার তাগাদা দেয়ার পর জনাব সাঈদ আহম্মেদ আনীস শারিরিক অক্ষমতা এবং আর্থিক সংকটের কারনে আমাদেরকে পুন:মুদ্রণ করার অনুমতি প্রদান করেন।
হায় আফসোস! মাত্র দু-তিন বছর অতিক্রান্ত হতে না হতেই কোভিড-১৯ এর করাল গ্রাসে জনাব সাঈদ আহম্মেদ আনীস ও তাঁর স্ত্রী ইন্তেকাল করেন [ইন্না লিল্লাহে ওয়া ইন্না ইলাইহে রাজেউন]। আমাদের এই ৫ম সংস্করণটি তাঁদেরই রুহের মাগফেরাত কামনায় উৎসর্গ করা হলো। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন তাঁদেরকে জান্নাতের সুউচ্চ মাকাম দান করুন -এই কামনায়।