যখন বিবিএ-এর ২য় বর্ষে পড়ি তখনই চাকুরিতে জয়েন করি দেশের সবচেয়ে বড়ো টেলকো কোম্পানিতে, যদিও সেটা ছিল পার্ট টাইম চাকুরি। বিবিএ শেষ করার ৩ দিন আগে থেকেই ফুল টাইম চাকুরি শুরু করি। টানা দীর্ঘ ১২ বছর চাকুরি করেছি একই কর্মস্থলে। শুরু করেছিলাম আর সবার মতো এক্সিকিউটিভ হিসেবে, আর যখন রিটায়ার্ড করি তখন ছিলাম সেই একই প্রতিষ্ঠানের সিইও। ক্যারিয়ারের প্রথম থেকে রিক্রুটমেন্টের সাথে ওতপ্রোতভাবেই জড়িত, ইন্টারভিউ নিয়েছি কয়েক হাজার ফ্রেশারদের। খুব কাছ থেকে তাদের কমন কিছু লিমিটেশন দেখেছি এবং একই সাথে দেখেছি তাদের সম্ভাবনা। কোম্পানির সবচেয়ে উচ্চপদে দ্রুত আসীন হতে গিয়ে নিজের ভেতরে ক্রমাগত আনতে হয়েছে অনেক পরিবর্তন, মেনে নিতে হয়েছে অনেককিছু এবং তারচেয়েও বেশি যেটা করতে হয়েছে তা হচ্ছে মানিয়ে নিতে হয়েছে পরিবর্তিত চারপাশের সাথে। ক্যারিয়ারে ভালো করতে হলে শুধু নিজের কাজটাই ভালো করতে হয়, এটি আসলে সবচেয়ে বড়ো ভুল ধারণার ভেতরে একটি। এই প্রতিযোগিতামূলক চাকুরির বাজারে শুধু টিকে থাকাটাই কিন্ত যথেষ্ট নয়, শুধু ভালো করাটাও যথেষ্ট নয়, বেস্ট হওয়া ছাড়া আমাদের আসলে কোনো উপায় নেই। আমি বিশ্বাস করি, যেকোনো বয়সেই যেকোনো কিছু শেখা এবং সেটির বাস্তবিক প্রয়োগ করা আমাদের সবার পক্ষেই সম্ভব, তবে এর জন্য যা দরকার তা হচ্ছেÑঅধ্যবসায়, দৃঢ় মনোবল আর একাগ্রতা। এই বইটিতে আমার বারো বছরের চাকুরিজীবী ক্যারিয়ারের কিছু শিক্ষা শেয়ার করলাম। উদ্দেশ্য হচ্ছে, কর্মক্ষেত্রে টিকে থাকার জন্য একটু হলেও এটি সহায়ক হিসেবে কাজ করুক পাঠকের। যারা পূর্ণকালীন চাকুরিজীবী হিসেবে নিজেকে দেখতে চান এবং কর্মক্ষেত্রে দারুণ কিছু করতে চান তাদের জন্য এই বইটি হয়তো কিছুটা হলেও দিক-নির্দেশক হিসেবে কাজ করবে। ‘চাকুরিনামা’ বইটি শুরু করেছি চাকুরি কীভাবে পাওয়া যাবে, রেজুমে কীভাবে তৈরি হবে, ইন্টারভিউর কোন প্রশ্নের উত্তর কীভাবে দিতে হবে, এসব দিয়ে। তবে বেশিরভাগ অংশই লেখা হয়েছে চাকুরি পাওয়ার পরে টিকে থাকতে এবং নিজেকে বেস্ট প্রমাণ করতে আমাদের কী কী করতে হবে, কোন কোন দক্ষতা অর্জন করতে হবে তা নিয়ে। মূলত কর্মজীবনের প্রথম পাঁচ বছরের কথা মাথায় রেখেই এসব লেখা। বইটির কলেবর খুব বেশি বড়ো না করাটা একদম ইচ্ছেকৃতই ছিল, কারণ আমি বিশ্বাস করিÑযতটুকু না লিখে বিষয়গুলো বুঝানো যায় তার চেয়ে যিনি পড়বেন তার নিজের ভাবনাটা তৈরি করা বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আমি শুধু চেষ্টা করেছি দরকারি শিরোনামগুলোর সাথে পাঠকের পরিচয় করিয়ে দিতে, বাকিগুলো হয়তো তিনি নিজেই অনেকখানি শিখে নিতে পারবেন। চাকুরিনামা’র কোনো কথাই খুব একটা আরোপিত নয়, একদম নিজের কর্ম অভিজ্ঞতা থেকে পাওয়া শিক্ষাগুলোই একটু সাজিয়ে লেখার চেষ্টা করেছি। সবার জন্য শুভকামনা।