ইতিহাসের পোস্টমর্টেম প্রমাণ করে যে, জনাব সিরাজুল আলম খান স্বাধীনতার পূর্বে ইচ্ছা অনিচ্ছায় যতদিন বঙ্গবন্ধুর নির্দেশনা মত চলেছিলেন ততদিন সফল সংগঠক হিসাবে দেশের জন্য অনেক অবদান রাখতে পেরেছিলেন। স্বাধীনতার পর যখনই নিজের বুদ্ধিতে চলতে এবং চালাতে গিয়েছেন তখনই দেশের জন্য বিপর্যয় ঘটিয়েছেন। স্বাধীনতার পর সিরাজুল আলম খানের প্রভাব বলয়ের অস্ত্র সমর্পণ না করা, ছাত্রলীগ দ্বিধাবিভক্ত করা, জাসদ, গণবাহিনী/বিপ্লবী সৈনিক সংস্থা গঠন, কর্নেল তাহেরকে ব্যবহার করে সিপাহী বিদ্রোহের নামে সামরিক কর্মকর্তাদের হত্যা করা, সামরিক বাহিনীতে চরম বিশৃংখলা সৃষ্টি করা সবই সংঘটিত হয়েছিল সিরাজুল আলম খানের পরিকল্পনায় তার অনুসারীদের দ্বারা। স্বাধীন বাংলােশের অভ্যুয়ের শুরুতেই জনাব সিরাজুল আলম খানের ব্যক্তিগত উচ্চাশা, ভুল তত্ত্ব এবং নৈরাজ্য সৃষ্টিকারী রাজনীতি বাংলােশের যে মারাত্মক ক্ষতি করেছে, তা এক কথায় অপূরণীয়! প্রকৃতপক্ষে নিউক্লিয়াস ছিল ছাত্রলীগের অভ্যন্তরে সিরাজুল আলম খানের অন্ধ অনুসারীরে একটা হঠকারী গ্রুপ। যারা সিরাজুল আলম খানের নির্দেশে ১৯৭০ সালের নির্বাচন বর্জন, ১৯৭১ সালে মুক্তিবাহিনীর বিপরীতে মুজিব বাহিনী গঠন, ১৯৭২ সালে ছাত্রলীগের ভাঙন, জাসদ সৃষ্টি, ১৯৭৩—৭৪ সালে গণবাহিনী এবং বিপ্লবী সৈনিক সংস্থার কার্যক্রমের মাধ্যমে দেশে চরম বিশৃংখলা সৃষ্টি, ১৯৭৫ সালে কর্নেল তাহেরকে ব্যবহার করে ক্ষমতা দখলের অপচেষ্টার সময়ে সামরিক বাহিনীর বহু কর্মকর্তা হত্যার মধ্য দিয়ে সামরিক বাহিনীর চরম ক্ষতিসাধনের মত ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডে নেতৃত্ব দিয়েছিল। ৭ই নভেম্বরে কর্নেল তাহেরের সহযোগী সাংবাদিক কে বি এম মাহমুদ এর মতে, “আমার উপলব্ধি হয়েছিল যে, সিরাজুল আলম খান চেয়েছিলেন সবাইকে ধ্বংস করে দিতে। সিরাজুল আলম খানের এই ক্ষতিকর প্রভাব ১৯৭৭ সাল পর্যন্ত প্রচণ্ডভাবে বিদ্যমান ছিল”।
নাজমুল আহসান শেখ ব্রাক, বি ইউ পি এবং আরো কয়েকটি বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের এডজাঙ্কট ফ্যাকাল্টি হিসাবে এম বি এ’তে চারটি বিষয়ে ক্লাস নিয়ে থাকেন। লেখক নাজমুল আহসান শেখ স্কুল জীবন থেকেই স্বাধীনতা এবং মুক্তিযুদ্ধের ব্যাপারে প্রচণ্ড আগ্রহী ছিলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে অবস্থিত ইউনিভার্সিটি ল্যাবরেটরী স্কুলের ছাত্র হওয়ায় অতি অল্প বয়সেই ৬৯ এর গণ—অভ্যুত্থান প্রত্যক্ষ করেন। ১৫ই আগস্টে শহীদ বেবী সেরনিয়াবাত লেখকের সহপাঠি ছিলেন। ১৫ই আগস্টে শহীদ শেখ রাসেলও ইউনিভার্সিটি ল্যাবরেটরী স্কুলের ছাত্র ছিলেন। পারিবারিক/ব্যক্তিগত আগ্রহ এবং এলিফ্যান্ট রোড এলাকায় কর্নেল তাহেরের প্রতিবেশী হিসাবে বসবাস করার কারণে অল্প—বয়সেই অনেক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী। শিক্ষা জীবন : ইউনিভার্সিটি ল্যাবরেটরী স্কুল, নটরডেম কলেজ, বুয়েট থেকে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং—এ গ্রাজুয়েশন, ইউনিভার্সিটি অব ওয়াইকাটো, নিউজিল্যান্ড থেকে এম বি এ ডিগ্রি অর্জন করেন। অস্ট্রেলিয়ায় বিনিয়োগ ব্যাংকার হিসাবে কাজ করলেও, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নিয়ে গবেষণার কাজে কখনোই ছেদ পড়েনি। ৭ই নভেম্বরে শহীদ মুক্তিযোদ্ধা লেঃ কর্নেল হায়দার বীর উত্তম এবং একমাত্র বেসামরিক শহীদ বীর উত্তম খাজা নিজামুদ্দিন ভুঁইয়ার আত্মত্যাগ নিয়ে লেখক অনেক কাজ করেছেন। ‘১৯৭১ ভেতরে বাইরে সত্যের সন্ধানে’ এবং ‘পঁচাত্তরের ৩ নভেম্বর অংশগ্রহণকারী বৈমানিকদের বর্ণনায় বিমান বাহিনীর ভূমিকা’ লেখকের প্রকাশিত এবং সচেতন পাঠকের কাছে সমাদৃত বই হিসাবে পরিগণিত হয়েছে।