হাজার বছর ধরে চলছে এ ক্রুসেড, গাজী সালাহউদ্দিন আইয়ুবী ক্রুসেডের বিরুদ্ধে যে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিলেন তা বিশ্বকে হতবাক করে দিয়েছিল। কেবল সশস্ত্র সংঘাত নয়, কূটনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সে যুদ্ধ ছিল সর্বপ্লাবী। ইসলামকে পৃথিবীর বুক থেকে মুছে ফেলার চক্রান্তে মেতে উঠেছিল খৃস্টানরা। একে একে লোমহর্ষক অসংখ্য সংঘাত ও সংঘর্ষে পরাজিত হয়ে বেছে নিয়েছিল ষড়যন্ত্রের পথ। মুসলিম দেশগুলোতে ছড়িয়ে দিয়েছিল গুপ্তচর বাহিনী। ছড়িয়ে দিয়েছিল মদ ও নেশার দ্রব্য। বেহায়াপনা আর চরিত্র হননের স্রোত বইয়ে দিয়েছিল মুসলিম দেশগুলোর শহর-গ্রামে। একদিকে সশস্ত্র লড়াই, অন্যদিকে কুটিল সাংস্কৃতিক হামলা- এ দু’য়ের মোকাবেলায় রুখে দাঁড়াল মুসলিম বীর শ্রেষ্ঠরা। তারা মোকাবেলা করল এমন সব অবিশ্বাস্য ও স্বাসরুদ্ধকর ঘটনার, মানুষের কল্পনাকেও যা হার মানায়। একদিন বিকাল বেলা। সূর্য অস্ত যাওয়ার সামান্য আগে সুলতান আইয়ুবী ফোরাতের কূলে ঘুরে বেড়াচ্ছিলেন। তার সাথে অশ্বারোহী দলের সেনাপতি ও কমান্ডো বাহিনীর সেনাপতি সালেম মিশরী। তারা তাদের সামনে কিছু দূরে সাদা জোব্বা পরা এক লোককে নদীর তীরে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলেন। লোকটির দু’হাত প্রার্থনার ভঙ্গিতে উপরে তোলা। সুলতান আইয়ুবী সেদিকে গেলেন এবং লোকটির কাছে পৌঁছে দেখতে পেলেন, সেখানে চারটি কবর রয়েছে। এই কবরগুলোর মধ্যে দু’টি কবরের মাথার দিকে একটা করে লাঠি পোতা। তার সাথে কাঠের তক্তা লাগিয়ে কবর ফলক বানানো হয়েছে। সেই ফলকের একটিতে আরবী হরফে লাল রংয়ে লেখা, “উমরুল মামলুক, আল্লাহ তোমার শাহাদাত যেন কবুল করে নেন।” –নাছরুল মামলুক। তার পাশের কবরের উপরেও একই ধরনের ফলক লাগানো। তাতে লেখা, “নাছরুল মামলুক, আল্লাহ আমার শাহাদাত কবুল করুন।” সুলতান আইয়ুবী দু’টি লেখাই পাঠ করলেন এবং সেই লোকটির দিকে তাকালেন, যে লোক কবরের পাশে দাঁড়িয়ে ফাতেহা পাঠ করছিলেন। চেহারা সুরতে বেশ অভিজাত ও লেবাস পোশাকে আলেম ব্যক্তি বলে মনে হচ্ছিল। সুলতান আইয়ুবী তার দিকে তাকালে তিনি সালাম দিয়ে বললেন, ‘আমি এই গ্রামের ইমাম। যেখানেই আমি কোন শহীদের সন্ধান পাই সেখানে গিয়ে তাদের জন্য ফাতেহা পাঠ করি। আমি বিশ্বাস করি, যেখানে শহীদের রক্ত ঝরে সে জায়গা মসজিদের মতই পবিত্র।
আসাদ বিন হাফিজ (জন্ম: জানুয়ারী ১, ১৯৫৮)গাজীপুর জেলার কালীগঞ্জ থানার অন্তর্গত বড়গাও গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা মুহাম্মদ হাফিজউদ্দীন মুন্সী এবং মাতা জুলেখা বেগম। বাংলাদেশের একজন বিশিষ্ট কবি, প্রাবন্ধিক, গল্পকার এবং ছড়াকার হিসেবে পরিচিত। তিনি আদর্শিক দিক দিয়ে ফররুখ আহমদের অনুসারী। তাঁর সাহিত্যে বাংলার মুসলিম সমাজের পুনর্জাগরণ এবং বিপ্লবের অণুপ্রেরণা প্রকাশ পেয়েছে। আধুনিক বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে সৃজনশীলতার পাশাপাশি তিনি সাহিত্যে ইসলামী দৃষ্টিভঙ্গির ব্যবহারেও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। তার সাহিত্যে বিপ্লবী চিন্তা-চেতনারও প্রকাশ ঘটেছে। তিনি ইসলামী সাংস্কৃতিক আন্দোলনের সাথে জড়িত আছেন। কবি আসাদ বিন হাফিজ ১৯৮০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা সাহিত্যে স্নাতক(সম্মান) ডিগ্রী অর্জন করেন। এছাড়া তিনি ১৯৮৩ সালে একই প্রতিষ্ঠান থেকে বাংলা সাহিত্যে মাস্টার্স ডিগ্রী অর্জন করেন। শিক্ষাজীবন সমাপ্ত করে তিনি কর্মজীবনে প্রবেশ করেন। কবিতা, গল্প, প্রবন্ধ, শিশু সাহিত্য, গবেষণা, সম্পাদনা ইত্যাদি সাহিত্যের সব শাখাতেই কবি আসাদ বিন হাফিজ রেখেছেন তার অসামান্য প্রতিভার স্বাক্ষর। তিনি প্রায় ৮১টি গ্রন্থ প্রকাশ করেছেন। কবি আসাদ বিন হাফিজ তার বর্ণাঢ্য কর্ম ও সাহিত্যের স্বীকৃতিস্বরূপ অনেক পুরস্কার ও সম্মাননা পেয়েছেন।