এই বইটি লেখার কারণ ধর্মজীবিরা যেহেতু ধর্মকে হৃদয়ে ধারণ না করে সেটিকে নিজেদের রুটি-রুজি উপার্জনের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে, তাই তারা ধর্মের অপব্যাখ্যার পাশাপাশি ধর্ম নিয়ে নানা রকমের ভূয়া গল্প ও জাল হাদীসও তৈরি করে। আজ থেকে হাজার বছর আগে এভাবেই অসংখ্য জাল হাদীস الأحاديث الموضوعة তৈরি হয়েছিল। বর্তমান যুগের ধর্মজীবিদের একটি বড় বৈশিষ্ট্য হলো, তারা নিজেদের কঠিন দায়িত্ব এড়ানোর জন্য অতীতের মুসলিম সমাজের বিশেষত সাহাবা সমাজের একটি অবাস্তব চিত্র তুলে ধরে। তারা ইসলামকে মাঠের বাস্তবতা Practical field থেকে সরিয়ে কল্পনার জগতে নিয়ে গিয়ে সাধারণ মানুষকে বুঝাতে চায় যে, সাহাবা তথা রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহী ওয়াসাল্লামকে দেখা সকল মুসলমান একেকজন মহান আল্লাহর ওলী ছিলেন। তাদের সকলে ফেরেশতাদের মত সৎ ও ফুলের মত পবিত্র ছিলেন। আমাদের কারো পক্ষে তাদের মত ঈমানদার হওয়া সম্ভব নয়। আর এতে করে তারা স্বেচ্ছায় অথবা নিজেদের অজান্তেই মুনাফিক মুসলমান তথা সেক্যুলারদের উদ্দেশ্য পূরণ করে থাকে। কিন্তু বিষয়টি ধর্মজীবিরা উপলব্ধি করতে সক্ষম হয় না। কারণ, তাদের অনেকের ঈমান খুবই দুর্বল, অনেকের অনুভবের জগত অতি সঙ্কীর্ণ এবং অনেকের ঈমান নিফাক মিশ্রিত। ফলে তারা ইচ্ছা বা অনিচ্ছায় ইসলামকে ব্যক্তিগত পরিসরে সীমাবদ্ধ করে সমাজের নেতৃত্ব মুনাফিক মুসলমানদের হাতে তুলে দিচ্ছে। এমনকি অনেক ক্ষেত্রে তারা মুনাফিক মুসলমানদের প্রশংসা করে মুমিন মুসলমানদের ক্ষতি করছে। এই বইতে আমরা কোরআন ও সহীহ হাদীসের আলোকে সাহাবা সমাজের প্রকৃত বৈশিষ্ট্য (ইতিবাচক ও নেতিবাচক উভয় দিক) তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। এতে প্রমাণিত হবে যে, সাহাবীদের মধ্যে আমাদের জন্য আদর্শ ব্যক্তিবর্গ হলেন শুধুমাত্র তাঁরাই, যারা সততা, সাহস, সৎকাজের আদেশ, মন্দকাজে বারণ ও আল্লাহর কথার প্রাধান্য প্রতিষ্ঠার জন্য অকাতরে নিজেদের জানমাল কোরবান করেছেন।