কবিতা আরাধ্যের বিষয়। প্রার্থনার মন্ত্রের মতো। বোধের গভীরতা থেকে তুলে আনা এক অনন্য অনুভূতি। ভেতর থেকে গলদঘর্ম ঝরিয়ে বেরিয়ে আসে। পুষ্ট দানার মতো অঙ্কুরিত হয়। বৃক্ষে রূপ নেওয়ার জন্য। কবির প্রচেষ্টা সেজন্য কম কষ্টসাধ্য নয়। বাগানের মালির মতো তাকে পরিচর্যা করতে হয়। ফুলের মতো সুন্দরভাবে ফোটার জন্য সহযোগীর দায়িত্ব পালন কবির। প্রকাশের রূপ বৈচিত্র্যে পূর্ণ। যাত্রা থেকে শুরু করে আজও অবধি বিভিন্ন গতিপথ পরিবর্তন করে তার চলা। যুগান্তরের রূপান্তর। প্রাচীন যুগ থেকে শুরু করে, মধ্য, মধ্য থেকে আধুনিক, আধুনিক থেকে উত্তরাধুনিক, তার পরেও বর্তমানতা। পাশ্চাত্য প্রিয়তার অক্ষরেখা পথভ্রমণের নির্দেশিকা। ছোটবেলা থেকে কবিতানুরাগী। কবিতাচর্চাও শুরু করেছিলাম সত্তরের দশকের শেষ দিক থেকে। কিন্তু কবিতার সঙ্গে সম্পর্ক নিরবচ্ছিন্ন রাখতে পারিনি বিভিন্ন কারণে। তার অন্যতম কারণ অর্থনৈতিক। এ জিনিসটা জীবনকে প্রতি মুহূর্তে ওই চেতনায় আটকে রাখে। প্রশান্তির অন্য কিছু থেকে দূরে। কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের কথায়―‘কবিতা তোমায় দিলাম আজকে ছুটি,/ক্ষুধার রাজ্যে পৃথিবী গদ্যময়;/পূর্ণিমা-চাঁদ যেন ঝল্সানো রুটি।’ জীবন ও সংসার শব্দ দুটি ওতপ্রোতভাবে জড়িত। যা বহনে কষ্টসাধ্য তো বটেই, বোধের সীমানাটা আটকে রাখে। সংসার সমুদ্রের সঙ্গে তুলনীয়। সংসারজীবনের একটি ভৌগোলিক সীমানা আছে, সে ইতিহাসও রচনা করে, তার দর্শন দিয়ে। সেই যন্ত্রণার মধ্যেও কিছু কিছু কাজ করেছি। তবে তা প্রকাশ করতে পারিনি। শুধু লিপিবদ্ধ করে রেখেছিলাম। অনেক দিন পর সেগুলোকে নিয়ে ভাবি। এমন ভাবনার একটি রূপ ‘স্বনির্মিত দ্বীপে স্বেচ্ছা নির্বাসনে’। অর্থাৎ নিজের সংসারটি ছিল আমার কাছে ‘স্বনির্মিত দ্বীপ’ আর আমি কবিতার কাছ থেকে ছুটি নিয়ে সেখানেই ‘স্বেচ্ছায় নির্বাসিত’। কবিতাটি সে প্রেক্ষাপটে নির্মাণ করেছিলাম। তবে তাতে আশার উজ্জীবন ঘটিয়েছে। এই রূপকতার আড়ালে আমার জীবনপ্রবাহ প্রবহমান ছিল কঠিনতার মধ্য দিয়ে। ব্যর্থতার চাদরে ঢেকে যাচ্ছিল আমার মন ও মনন। আমি বঞ্চিত হচ্ছিলাম প্রত্যাশিত ফসল থেকে। অথচ সময় বয়ে চলেছে তার নিজস্ব গতিতে। এখানে সন্নিবেশিত কবিতাগুলো বিভিন্ন সময়ে রচিত। অনেক কবিতার বিষয় ভাবনা গুলো পূর্বের, লিখিত রূপ পরের। অতএব সময়ের সঙ্গে সমন্বয়হীনতা স্বাভাবিক। মুকুন্দ মণ্ডল