কলেজ ছুটিতে ঘুরে বেড়ানো আমার নেশা। গ্রীষ্মের ছুটিতে কোথায় যাব রুমে বসে ভাবছি। এমন সময় সুমি এসে দরজায় টোকা দিলো। ওর লাল টুকটুকে মুখে এক চিলতে হাসি লেগে থাকে সবসময়। আমি তার দিকে তাকিয়ে চোখের পাতা কয়েকবার ওপর-নিচ করে বললাম, কোথায় থাকিস তুই? তোকে তো দেখা যায় না!
আমার মুখে একথা শুনে ওর মুখের হাসি যেন দপ করে নিভে গেল। সে অবাক হয়ে বলল, কী বলছো তুমি! প্রতিদিন তোমার বাসায় আসছি, কথা বলছি, খোঁজ নিচ্ছি। আর তুমি বলছো দেখা যাচ্ছে না! আমাকে কোনোদিন খোঁজ করেছো? ও... হ্যাঁ, তা করবে কেন, আমার মতো মেয়ের তোমার কী প্রয়োজন?
আমি ঠোঁট বাঁকিয়ে ওর চোখের দিকে বড়ো বড়ো চোখে তাকিয়ে বললাম, তাই নাকি! তাহলে তুই আমার খোঁজ নিস? আগে জানতাম নাতো! এত বড়ো সৌভাগ্য আমার কবে হলো তা তো জানতে পারলাম না! এভাবে কথা বলে সুমিকে রাগানোর চেষ্টা করছিলাম। কারণ রাগলে ওর লাল টুকটুকে মুখটি আরও লাল হয়ে ওঠে। তখন আমার খুব ভালো লাগে।
সুমি বাসায় থাকা মানে ছোটো ছোটো চাচাতো ভাই-বোন বাসায় গিজ গিজ করা। সকালে যেমন পাখির কিচির-মিচির শব্দ শোনা যায়, ঠিক তেমনই শব্দ হতে থাকবে বাসায়। সে আমার মাত্র দেড় বছরের ছোটো। এতে আমার লাভ অনেক। ওর কাছ থেকে জোর-জুলুম করে সব কেড়ে নিতে পারি। শাসন করতে পারি। মাঝে মাঝে যে পুচকু হাতে মার খেতে হয় না, সেটি বললে মিথ্যা বলা হবে। মারার পরে এমন ভাব করে যেন, আমার চেয়ে সে-ই বেশি ব্যথা পেয়েছে; তবে তাকেও চাচির কাছ থেকে অনেক মার খাইয়ে নিই। কেন মার খাওয়াব না, সে তো একটা ফাঁকিবাজ! নামাজ না পড়েও বলবে পড়েছি। আমিও পালিয়ে ওর ফাঁকিবাজি ধরে ফেলি। অমনি চাচির কাছে নালিশ করে দিই! চাচির কাছে মিথ্যা বলা? বড়ো অপরাধ!
হিংসেও কম হয় না। যখন দেখি মা-চাচিরা আমার চেয়ে তাকে বেশি আদর দিচ্ছে। তখন আমার শরীর পিলপিল করে জ্বলে! রাগে দাঁত কিড়মিড় করতে থাকি। যদিও ইদানীং হিংসা কিছুটা কম হয়ে গেছে। কারণ এখন তো আমি অনেক বড়ো হয়ে গেছি!
ক্লাস শেষে সুমি আর আমি এক সাথে বাসায় ফিরি। তাকে বিভিন্নভাবে রাগানোর চেষ্টা করি। আমার কথা কাজে সে হঠাৎ হঠাৎ রেগে যায়। অনেক সময় কথা না বলে চুপ করে থাকে। এমন ভাব করে মনে হয় আমার সাথে আর কখনো কথা বলবে না। আমিও কথা বলব না, এমন ভাব করে থাকি, কিন্তু এমন করলে কী হবে, আমরা তো একে অপরের সাথে কথা না বলে থাকতেই পারি না। বাসায় এসে কোনো একটা ছুতো নিয়ে সে আমার রুমে ঢুকে পড়ে। এই যেমন বলে, ‘আমার গ্রামার বইটি দাও তো’, আমি তো অবাক! ওর বই আমার রুমে থাকবে কী জন্য। বুঝি- কথা বলার একটা কৌশল মাত্র। কী আর করা- কথা বলি ওর সাথে।
প্রায়ই আমাদের মাঝে এমনটি ঘটে। কোনোদিন একে অপরের সাথে কথা না বলে থাকতেই পারি না। আবার ঝগড়া না করলে মনে হয় পেটের ভাত হজমই হয় না! এক কথায়, দুজনে যেন হাইড্রোজেন আর অক্সিজেন- মিলেমিশে বাঁচার উৎসে পানির ধর্মে আছি।
M. Imon Islam, ১৯৯২ সালে সাতক্ষীরা জেলার এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। ছোটোবেলা থেকেই বই পড়ার প্রতি প্রবল আগ্রহ ছিল। পড়তে পড়তে একটা সময় লেখালিখি শুরু করেন। অষ্টম শ্রেণীতে থাকতে তার লেখা একটি ছড়া প্রথম পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। এরপর একে একে দুইশতেরও অধিক ছড়া-কবিতা, গল্প দেশের বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা ও ম্যাগাজিনে প্রকাশিত হয়। . তিনি মানবতার সেবায় কাজ করতে পছন্দ করেন। সে কারণে ২০১৫ সালে প্রতিষ্ঠা করেন ‘আমরাও পারি’ নামে একটি সমাজসেবী সংগঠন। এছাড়াও কয়েকটি সামাজিক সংগঠনের সাথে যুক্ত আছেন। তিনি এমন কিছু করে রেখে যেতে চান, যার দ্বারা তার মৃত্যুর পরেও মানুষ উপকৃত হতেই থাকবে। তিনি ২০১২ সাল থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত স্থানীয় দুটি পত্রিকায় ও একটি কমিউনিটি রেডিওতে সাংবাদিকতা করেন। কবি নজরুল সরকারি কলেজ থেকে মাস্টার্স পাস করার পর একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে প্রজেক্ট ম্যানেজার হিসেবে চাকরি করেন। . তিনি শিক্ষণীয় বিষয়ে লিখতে পছন্দ করেন। স্বপ্ন দেখেন সু-সাহিত্য ছড়িয়ে দেওয়ার। ২০১৮ সালে তার সম্পাদনায় প্রকাশিত হয়, ‘বদলে যাওয়ার গল্প’ নামে একটি যৌথ গল্পগ্রন্থ। ২০১৯ সালে বাংলাদেশে প্রথম ৬৪ জেলার ৬৪ জন লেখকের ৬৪টি গল্প নিয়ে তার সম্পদনায় প্রকাশিত হয় ‘আঁধারে আলোর গল্প’ নামে চমৎকার একটি যৌথ গল্পগ্রন্থ। এরপর ২০২০ সালে তিনি সম্পাদনা করেন ‘আলোর মিছিল’ নামে আরও একটি যৌথ গল্পগ্রন্থ। ‘চিরছুটি’ লেখকের প্রথম একক গল্পগ্রন্থ। এই বইটিতে তার লেখা ১২টি সেরা গল্প স্থান পেয়েছে।