দোকানে এসে কফি হাতে বসলাম। গরম কফি মগে চুমুক দিতে যাব, ঠিক তখনি সুচিত্রার কল। ওর কল রিসিভ করা মানে আজাইরা বকবক সহ্য করা। কিন্তু কল রিসিভ না করলে একটানা কল দিতেই থাকবে। কাঁদতে কাঁদতে চোখ-মুখ লাল করে ফেলবে। কোনো উপায় না পেয়ে কল রিসিভ করলাম। কল রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে জোরে চিৎকার, - কী ব্যাপার, কল রিসিভ করছো না কেন? - আমি একটু ব্যস্ত ছিলাম। - কী কাজে? - না মানে, স্টেশনের পাশে দুজন লোক ঝগড়া করছিল, তাদেরকে মিটমাট করে দিলাম। - দেখো তুমি ইশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর নও, আবার কোনো বিচারকও নও, তুমি আবির। তোমার কাজ হলো, আমায় কেয়ার করা। এই কাজের বাইরে আর কিচ্ছু করতে পারবে না। সুচিত্রার কথা শুনে প্রচণ্ড রাগ হলো। ফোন কেটে দিলাম। বিড়বিড় করে বললাম, আমার জীবন আমি কী করব আর না করব তা ওর কাছ থেকে জানতে হবে? আমার জন্মের ঠিক এক বছর পর সুচিত্রার জন্ম। পাশাপাশি বাসা আমাদের। আমাদের পরিবারের সাথে সুচিত্রাদের পরিবারের সম্পর্ক দাদার আমল থেকে, সেই সম্পর্ক আরও মজবুত করতে ছোটবেলাই আমাদের বিয়ের কথা পাকা করে রাখে। মেয়েটি আমায় খুব প্যারা দেয়। জানি না বাকি জীবন কীভাবে সহ্য করব! আবারও শুরু করল কল দেওয়া। এখন কল রিসিভ করলে বলবে, ‘আবির, তুমি ফোন কেটে দিলা ক্যান? ও নতুন কাউরে পাইছো, তাই তো এখন সুচিত্রাকে ভালো লাগে না!’ তার চেয়ে বরং ভালো, ফোন অফ করে রাখা। ফোন অফ করে একটু আরামে বসলাম। পাশে থাকা মহিলাটি অপলক দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন। মনে হচ্ছে, আমার সবকিছু তিনি দৃষ্টিগোচর করেছেন। আমি সেদিকে আর না তাকিয়ে কফি মগ হাতে নিলাম। ততক্ষণে কফি ঠান্ডা হওয়ার পথে। পাশ থেকে মহিলাটি আচমকা বলে উঠলেন, - কি বাপু, খুব প্যারা দিচ্ছে? এগুলো প্যারা নয়, এগুলো ভালোবাসা। আমি চমকে উঠলাম। অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললাম, - মানে? মহিলাটি এবার আমার দিকে ঘুরে বসলেন। তিনি বললেন, - রাগ করে ফোন অফ না করে দুই মিনিট বুঝিয়ে কথা বলতে পারতে। মহিলার এমন মন্তব্যে আমি নিশ্চুপ। তিনি আবার বলতে লাগলেন- - গল্প শুনবে? একটা জীবন থেকে চুরি করা গল্প। - গল্প শুনতে আমার মানা নেই, গল্প শুনতেই পারি। হাতেও যথেষ্ট সময় রয়েছে। ...
শীত পড়তে শুরু করেছে, হালকা কুয়াশায় আচ্ছন্ন চারপাশ। রাতের আকাশে নিভুনিভু করে জ্বলছে একটি তারা। বাড়িতে তখন উৎসবমুখর পরিবেশ। নতুন অতিথির আগমন। জন্ম মফস্বল এক জেলা সুনামগঞ্জে। ছোটো অতিথির আগমন। আস্তে আস্তে বেড়ে উঠা। বয়স যখন পাঁচ বছর, তখন স্কুলে ভর্তি করে দেওয়া হয়। সেই যে ছুটা শুরু হয়েছিল, এখনো ছুটছে জ্ঞানার্জনের জন্য। স্কুলে একবার রক্ত পরীক্ষা করা হয়, সে বারই জানতে পারেন নিজের রক্তের গ্রুপ এশিয়ার সবচেয়ে কমন গ্রুপ ‘ও পজিটিভ’। শখ বলতে বুঝতো বই পড়া, সেই পড়ার নেশা থেকেই নতুন শখের জন্ম, সেটা হলো- লেখালিখি করা। বয়স সবে কুঁড়ি পার হয়েছে, এরই মধ্যে অনেক পাঠকের হৃদয়ে জায়গা করে নিয়েছেন। গল্প তার কাছে জীবনের উৎস, লেখালিখি করা তার নেশা। সৃষ্টি করতে চান অসংখ্য জীবনের গল্প, ভবঘুরের গল্প, কখনো আবার ফুটিয়ে তুলতে চান একজন যাযাবরের গল্পও। গল্পকার কিংবা লেখক পরিচয়ের পাশে যোগ করতে চান আরও পরিচয়। সকল পরিচয়ের ঊর্ধ্বে যে লোকে বলে উঠবেন, ‘সাকিব হাসান রুয়েল একজন ভালো মানুষ।’ ‘শ্রাবণ সন্ধ্যা’ লেখকের তৃতীয় বই। দ্বিতীয় বইয়ের নাম ‘মায়া’ এবং প্রথম বইটি ছিল ‘অনুভূতিরা মৃত’।