"সীরাতে আয়েশা রাযিআল্লাহু আনহা" বইয়ের সংক্ষিপ্ত কথা এটি সাইয়্যেদ সুলাইমান রাহ. কর্তৃক নবী-পরিবারের এক অসামান্য খিদমত। তিনি এর সূচনা করেন ছাত্র জীবনের শেষ বছরে, এপ্রিল ১৯০৬, যখন তিনি ছিলেন আন নাদওয়াহ-এর সহকারী সম্পাদক— সম্মানিত উস্তায মাওলানা শিবলী নুমানি রাহ. -এঁর উৎসাহে ও পরামর্শে। এপ্রিল ১৯০৮ ‘সীরাতে আয়েশা রাযি.’ -এর কিছু অংশ আন নাদওয়ায় ছাপা হয়। কিন্তু অন্যান্য কাজের গুরুত্ব বিবেচনায় ‘সীরাতে আয়েশা রাযি.’ -এর কাজে বিরতি পড়ে। অনেকদিন পর হলেও ১৯২০ সালে এটি সমাপ্ত হয় এবং প্রথমবারের মতো আলোর মুখ দেখে। পরে পুনর্মুদ্রণ হয়; কিন্তু অনিবার্য সম্পাদনা ছাড়াই। অবশ্য তৃতীয় মুদ্রণের সময় প্রয়োজনীয় সংশোধনীসহ বিশেষ কিছু বিষয়ের সংযোজনও করা হয়। পরিশেষে ইমাম সুয়ূতি রাহ. -এঁর অনবদ্য রিসালা : ‘আইনুল ইসাবাহ’-ও অন্তর্ভূক্ত হয় বক্ষমাণ গ্রন্থে। গ্রন্থখানি অনেক গুরুত্ববহ। অসংখ্য জিজ্ঞাসার সুন্দর সমাধান আছে এতে। বলা যায়, এ-বিষয়ে এমন গ্রন্থ এই-ই প্রথম এবং সন্ধানী দৃষ্টিতে এই-ই শেষ। যেসব অমূল্য বিষয় নিয়ে গ্রন্থখানি রচিত হযরত আয়েশা রাযি.-এঁর প্রাথমিক অবস্থা, শিক্ষা-দীক্ষা, সামাজিক ও দাম্পত্য জীবন, সৎ ছেলেমেয়ে ও সতিনদের প্রতি সদাচার, ইফকের ঘটনা, সংস্কারমূলক কার্যক্রম, কুরআনে ব্যূৎপত্তি, মাসাইল-দক্ষতা, ইজতিহাদ-ক্ষমতা, হাদীসে নববীর অগাধ জ্ঞান, ফিকহ ও কিয়াসে অসাধারণ প্রতিভা, চিকিৎসা-শাস্ত্রে পারদর্শিতা, বক্তৃতা ও কাব্যে মুনশিয়ানা, ফতওয়া প্রদানে পারঙ্গমতা, জগতের নারী সমাজের প্রতি তাঁর অবদান ইত্যাদি। এ-ছাড়াও আরও অনেক কিছু উঠে এসেছে অনিন্দ্যসুন্দর বিন্যাসে, গবেষণামূলক ও বিশ্লেষণধর্মী কায়দায়; যার গুরুত্ব সে-যুগে এ-যুগে সমানভাবে অপরিসীম। উম্মুল মুমিনীন হযরত আয়েশা রাযি.-এঁর ব্যাপারে বহুল আলোচিত ও বিতর্কিত একটি বিষয়— তাঁর বয়স। অর্থাৎ যখন তিনি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পবিত্র জীবনসঙ্গিনীর ভূমিকায় আবির্ভূত হন এবং উম্মুল মুমিনীনের তাজ মস্তকে ধারণ করেন তখন তাঁর বয়স কত ছিল? এ এমন এক প্রশ্ন, যার উত্তরে অনেকে অনেক কিছু লিখেছেন। আল্লামা সাইয়্যেদ সুলাইমান নদভী রাহ. এ-বিষয়টিকে বিশেষভাবে আলোচনায় এনেছেন এবং এ-প্রসঙ্গে যত আপত্তি উত্থাপিত হয়েছে এবং হতে পারে, বলিষ্ঠ যুক্তিপ্রমাণের ভিত্তিতে তার নিরসন করেছেন। বইটি প্রত্যেকের পড়া উচিৎ। বিশেষ করে নারী সমাজ বইটি পড়ে উপকৃত হবেন সবচেয়ে বেশি। এর পাতায় পাতায় গচ্ছিত আছে দীন ও শরীয়তের অমূল্য রত্নসম্ভার।
ভারত-উপমহাদেশে সিরাতচর্চা, ইতিহাস ও আরবিভাষার সাহিত্য নিয়ে যারা গবেষণামূলক কাজ করেছেন, কর্মগুণে হয়েছেন বিশ্ববরেণ্য—সাইয়েদ সুলাইমান নদবি রহ. তাদের সবচেয়ে অগ্রসারির। ১৮৮৪ সালে ব্রিটিশ-ভারতের বিহারের দিসনাতে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। বিশ্ববিখ্যাত নদওয়াতে পড়াশোনা করে সেখানেই দীর্ঘ দিন আরবিভাষার পাঠদান করেন এই প্রাজ্ঞ প্রতিভাধর; পাশাপাশি ছিলেন আন-নদওয়া আরবি পত্রিকার সহযোগী সম্পাদক। কর্মজীবনে শিক্ষকতা ও সম্পাদনার পাশাপাশি লিখেছেন অসংখ্য কালজয়ী গ্রন্থ, প্রদান করেছেন পৃথিবীখ্যাত সিরাত-বিষয়ক ভাষণ—খুতুবাতে মাদরাজ নামে যা বিশ্ববিখ্যাত। সিরাতুন নবি (যুগ্ম), সিরাতে আয়েশা, আরদুল কুরআন, খৈয়ামসহ যা-ই তিনি লিখেছেন, সেটিকেই করে তুলেছেন পাঠ-অনিবার্য। এসব আকরগ্রন্থ তাকে এনে দিয়েছে অমরত্বের মর্যাদা। তার লেখা ইতিহাসের পাণ্ডুলিপিগুলো শাস্ত্রীয় সংজ্ঞা পার হয়ে হৃদয়কেও স্পর্শ করে প্রবলভাবে।