"আরবী ব্যাকরণ"বইটির ভূমিকা: ভাষা শিক্ষায় ব্যাকরণের প্রয়ােজনীয়তা অনস্বীকার্য। বিশেষ করে ভাষাভাষীদের মধ্যে না থেকে কোন বিদেশী ভাষা শিক্ষার ক্ষেত্রে সেই ভাষার ব্যাকরণ শিক্ষার্থীর জন্য অনেকটা অপরিহার্য বলে বিবেচিত। বাংলা ভাষাভাষী জনগােষ্ঠী নানা কারণে আরবীকে তাদের খুব কাছের ভাষা মনে করলেও এই ভাষা তাদের জন্য একটি বিদেশী ভাষা। এ জন্য এই অঞ্চলের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা যুগ যুগ ধরে আরবী চর্চায় অনেকটাই ব্যাকরণনির্ভর। আরবীতে লিখিত আরবী ব্যাকরণের প্রচুর বই থাকলেও তা এ দেশের পাঠকদের অনেকটা বাইরে। তাছাড়া ভাষা বুঝতে না পারার কারণে অনেকেই এসব বই থেকে উপকৃত হতে পারেন না। বাংলা ভাষায় লিখিত মানসম্মত আরবী ব্যাকরণ-বইয়ের একটি সংকট আরবী শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা দীর্ঘদিন যাবত অনুভব করে আসছেন। সেই সংকট খানিকটা নিরসনের তাগিদেই ব্যবহারিক পদ্ধতিতে “আরবী ব্যাকরণ” নামের এ বই রচনার প্রয়াস। সুবিশাল আরবী ব্যাকরণশাস্ত্রের দুটো প্রধান শাখা রয়েছে: (১) আছ-ছফ (শব্দপ্রকরণ) ও (২) আন-নাহও (পদ ও বাক্যবিন্যাস)। উভয় শাখার রয়েছে অগণিত প্রশাখা। কোন একটি গ্রন্থে কিংবা দুই শাখার জন্য স্বতন্ত্র দুটি গ্রন্থেও আরবী ব্যাকরণের সকল আলােচ্য বিষয়ের বিস্তারিত বর্ণনা সম্ভব নয়। তাই এই শাস্ত্রের গ্রন্থ-প্রণেতাকে হয় আলােচনা সংক্ষেপ করতে হয়, না হয় আলােচ্য বিষয় সীমিত রাখতে হয়। অন্যথায় বহু খণ্ডে অথবা বৃহদাকার কোন দুর্বহ মহাগ্রন্থ রচনায় আত্মনিয়ােগ করতে হয়। স্বল্পপরিসর আমাদের এ বইতে আরবী ব্যাকরণের দুটি প্রধান শাখাকে আলাদা না করে একই সাথে উভয় শাখার অতি প্রয়ােজনীয় ও বহুল আলােচিত বিষয়সমূহ সংক্ষেপে আলােচনা করা হয়েছে। বিষয় নির্বাচন ও উপস্থাপন-পদ্ধতি অনুসরণের ক্ষেত্রে আধুনিক কালের কতিপয় আরবী ব্যাকরণ বই সামনে রাখা হয়েছে। এসব বইয়ের মধ্যে আলী আল-জারেম ও মােস্তফা আমীন প্রণীত “আন-নাহবুল ওয়াদিহ” বিশেষভাবে উল্লেখযােগ্য। অধিকাংশ ক্ষেত্রে প্রথমে আলােচ্য বিষয়সম্বলিত উদাহরণ-বাক্য বা উদ্ধৃতি পেশ করা হয়েছে। সাথে সাথে তার বাংলা অনুবাদ দেওয়া হয়েছে। তারপর, বাক্যগুলাে বিশ্লেষণের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট বিষয়টি আলােচনা করা হয়েছে। এরপর বিষয়সংক্রান্ত ব্যাকরণের সূত্র উল্লেখ করা হয়েছে এবং সবশেষে শিক্ষার্থীদের চর্চার নিমিত্তে বিষয়ের উপর কিছু কিছু অনুশীলনী সন্নিবেশিত হয়েছে। যত্ন সহকারে অধ্যয়ন করলে একজন শিক্ষার্থী এ বই থেকে নিজে নিজেই আরবী ভাষার অনেক নিয়ম জানতে পারবে বলে আশা করা যায়। অনুশীলনীর সমাধানে কখনাে কখনাে শিক্ষকের সহায়তা প্রয়ােজন হতে পারে। শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের যৌথ প্রয়াসে হলেও এ বই বিশ্বের বাংলা ভাষাভাষী বিশাল জনগােষ্ঠীর আরবী শিক্ষায় সামান্য অবদান রাখতে পারলে এর রচনার ক্লেশ অনেকটা লাঘব হবে।