ভূমিকা জেলার সাধারণ ও ভৌগলিক বৃত্তান্ত লইয়া ঢাকার বিবরণ লিখিত হইল। গবর্নমেন্টের প্রকাশিত ও অপ্রকাশিত বিবরণী, চিঠিপত্র ও প্রাচীন গ্রন্থ হইলে এবং জেলার সম্ভ্রান্ত ব্যক্তিগণের নিকট হইতে এই গ্রন্থের অনেক তত্ত্ব সংগৃহীত হইয়াছে। গবর্নমেন্টের কাগজ পত্রাদি হইতে তত্ত্ব সংগ্রহ বিষয়ে পূর্ববঙ্গ ও আসাম গবর্নমেন্টের নিকট সহৃদয় চিফ সেক্রেটারি Honourable Mr. H. Lemesurier. I. C. S., C. I.E., ঢাকা বিভাগের কমিশনার Honourable Mr. R. Nathan I. C. S., C. I.E., ঢাকার ডিস্ট্রিক্ট ম্যাজিস্ট্রেট Mr. A. J. Laine. IC.S., ময়মনসিংহের ডিস্ট্রিক ম্যাজিস্ট্রেট Mr. R. Garlick I.C.S., মহোদয়গণ যথেষ্ট সহায়তা করিয়াছেন। Honourable Mr. Lemesurier. মহোদয় আমাকে গবর্নমেন্ট হইতে কতকগুলি পুস্তক প্রদান করিয়া ও গবর্নমেন্ট লাইব্রেরী সমূহে গ্রন্থ প্রাপ্তির অধিকার প্রদান করিয়া যে সম্মান ও সহানুভূতি প্রদর্শন করিয়াছেন, তাহা আমি আমার সাহিত্যপথ যাত্রার মহামূল্য পাথেয় স্বরূপ চিরদিন স্মৃতির ভাণ্ডারে গভীর কৃতজ্ঞতার সহিত সংরক্ষণ করিব। Honourable Mr. R. Nathan মহোদয় তাহার অফিস হইতে কয়েকখানা দুর্লভ বিবরণী প্রেরণ করিয়া আমাকে সাহায্য করিয়াছেন। মিঃ লেইনি আমাকে ঢাকার কালেক্টরী হইতে ঐতিহাসিক তত্ত্ব সংগ্রহের অধিকার প্রদান করিয়াছেন, তজ্জন্য আমি ইহাদিগের নিকট চিরকৃতজ্ঞ রহিলাম। সর্বসাধারণের পাঠোপযোগী করিবার নিমিত্ত “ঢাকার বিবরণ” অতি সহজ ও দেশপ্রচলিত ভাষায় লিপিবদ্ধ করা গেল। এই কারণে ইহাতে অনেক প্রাদেশিক ও ব্যবহারিক শব্দের প্রয়োগ করা হইয়াছে।
Sreekedarnath Mojumdar ১২৭৭ বঙ্গাব্দের ২৬ জ্যেষ্ঠ (ইংরেজি ১৮৭০) কিশোরগঞ্জ জেলার কাপাসাটিয়া গ্রামে নানার বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম লোকনাথ মজুমদার ও মাতার নাম জয়দুর্গা দেবী। কেদারনাথ মজুমদারের পড়ালেখা শুরু হয় তার নিজ গ্রামের বিদ্যালয়ে। গ্রামে প্রাথমিক শিক্ষা শেষে তিনি ময়মনসিংহ শহরে যান। সেখানে তিনি নাসিরাবাদ এক্টাস স্কুলে ভর্তি হন। পরে ময়মনসিংহ শহর বিদ্যালয়ে ভর্তি হন। ১৮৮৪ সালে তিনি ময়মনসিংহ জিলা বিদ্যালয়ে ৬ষ্ঠ শ্রেনীতে ভর্তি হন। এ বিদ্যালয় থেকে তিনি ১৮৮৯ সালে এট্রাস পাশ করেন। পরিবার চালানোর জন্য তিনি ময়মনসিংহ জেলা ম্যাজিস্টেট অফিসের ফৌজদারি থানায় নকলনবীশের চাকরি নেন। তার মামা কৃষ্ণকুমার রায় তাকে এ চাকরিটির ব্যবস্থা করে দেন। এই চাকরির উপর নির্ভর করে তিনি সাহিত্য চর্চাও করেছেন। সাহিত্য চর্চার খরচ যোগানের জন্য চাকরির পাশাপাশি পাঠ্য বই প্রণয়ন মানচিত্র প্রকাশ ও ছাপখানা পরিচালনা ইত্যাদি কাজ করেছেন। চাকরি জীবনে তিনি একসময় খুবই অসুস্থ হয়ে পড়লে ১৯০১ সালে তিনি চাকরি ছেড়ে দেন। তার সাহিত্যিক জীবনের শুরু হয় তার নিজ বাড়ি থেকেই। তার বাবা-মার অনুপ্রেরণা থেকে সাহিত্যের প্রতি অনুরাগী হন। নাসিরাবাদ বিদ্যালয়ের প্রধান পণ্ডিত বেদজ্ঞ উমেশচন্দ্র বিদ্যারত্নের কাছ থেকে শাস্ত্র ও পুরাণনুশীলনে আগ্রহী হন। ময়মনসিংহ জিলা বিদ্যালয়ের শিক্ষক শ্রীনাথ চন্দ্র তাকে সাহিত্যচর্চার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি উৎসাহ জাগান। তিনি ময়মনসিংহ জিলা বিদ্যালয়ে 'মনোরঞ্জিকা ক্লাব'-এ সাহিত্য চর্চা করতেন।বিদ্যালয়ে পড়ার সময় তিনি তার প্রথম উপন্যাস 'স্রোতের ফুল' রচনা করেন। চাকরি অবস্থায় নানা সমস্যায় জর্জরিত হয়েও তিনি সাহিত্যচর্চা করেন। এক সময় তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং চিকিৎসার জন্য কলকাতা যান। সেখানেও তিনি সাহিত্য চর্চা করেন। সেখানে তিনি বিভিন্ন রকমের দুস্রাপ্য গ্রন্থ পাঠ সংগ্রহ করতেন ও হাতে লিখে নিতেন। কেদার নাথ মজুমদার একাধিক পত্রিকা প্রকাশ ও সম্পাদনা করেন। সম্পাদকতার পাশাপাশি তিনি সাংবাদিকতার সাথে যুক্ত হয়েছিলেন। কেদারনাথ মায়ের স্মৃতি রক্ষার্থে ময়মনসিংহ শহরে ১৯১৭ সালে ‘জয়দুর্গা এম.ই স্কুল’ প্রতিষ্ঠা করেন যা পরবর্তী সময়ে হাইস্কুলে উন্নীত হয় এবং ‘জয়দুর্গা ইনস্টিটিউশন’ নামে পরিচিত হয়। এ ছাড়া তিনি মায়ের নামে নিজ গ্রামে একটি পাঠাগার প্রতিষ্ঠা করেন। তার উদ্যোগে ময়মনসিংহ শহরে ‘সাহিত্য সভা’ স্থাপিত হয়। তিনি 'ময়মনসিংহরে ইতিহাস' নামে একটি আঞ্চলিক ইতিহাস বিষয়ক গ্রন্থ রচনা করেন যা একটি বিশিষ্ট গ্রন্থ হিসেবে খ্যাতি অর্জন করে। ১৯০৪ সালে 'ময়মনসিংহের বিবরণ' প্রকাশ করেন এবং ১৯০৭ সালে বইটির দ্বিতীয় সংস্করণ প্রকাশ করেন। ময়মনসিংহরে ইতিহাস' ও ময়মনসিংহরের বিবরণ" রচনা করে তিনি ইতিহাসবিদ হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেন। এছাড়া তিনি ময়মনসিংহের কাহিনী ও ময়মনসিংহ পল্লী বিবরণ নামে দুটি ইতিহাস গ্রন্থ রচনা করার ঘোষণা দিয়েছিলেন। ১৯১০ সালে তিনি 'ঢাকার বিবরণ' রচনা করেন। এছাড়া তিনি 'ফরিদপুরের বিবরণ' নামেও একটি ইতিহাস গ্রন্থ রচনা করেছিলেন। ১৯১৫ সালে 'সারমত কুণ্ডা' নামে একটি গবেষণা গ্রন্থ রচনা করেন। তিনি জীবনে চারটি ডপন্যাস রচনা করেছিলেন। বিদ্যালয়ের ছাত্র অবস্থায় ১৮৮৮ সালে স্রোতের ফুল উপন্যাসটি রচনা করেছিলেন, পরবর্তীতে নাম পরিবর্তন করে তা প্রফুল্ল নামে প্রকাশ করেন। ১৩৩০ বঙ্গাব্দে তিনি শুভদৃষ্টি উপন্যাস এবং ১৩৩১ বঙ্গাব্দে ‘সমস্যা’ উপন্যাস প্রকাশ করেন। তিনি 'দস্যুর মহত্ত্ব', 'স্বপ্ন' ও 'ঋণ পরিশোধ' নামে তিনটি ক্ষুদ্র উপন্যাসও লিখছিলেন ও এই তিনটি উপন্যাসকে একত্র করে ১৯০৬ সালের জুলাই মাসে 'চিত্র' নামের একটি পূর্ণাঙ্গ উপন্যাস প্রকাশ করেন।