"হার্টের অসুখে কী খাবেন ২০০টি পরামর্শ" বইটির সম্পর্কে কিছু কথা: ‘সাওল হার্ট প্রােগ্রাম যা আমি এবং আমার সহকর্মীরা দশ বছর ধরে তৈরি করে এসেছি, তাতে জনগণকে সেই খাদ্যতালিকা বা পথ্য সম্বন্ধে ব্যাপকভাবে প্রশিক্ষণ দিচ্ছি, যে খাদ্যতালিকা হৃদরােগকে প্রতিরােধ ও নিরাময় করতে সাহায্য করবে। এ খাদ্যতালিকার কিছু রান্না করতে কোনাে তেল ব্যবহার করা হয় না। আমরা দেখেছি, তেল ব্যবহার করবেন না- এ কথাটা বলে দেয়াই যথেষ্ট নয়। রােগীকে অবশ্যই এটা জানতে হবে, কেন তেল নয়। জানতে হবে কোলেস্টেরল, ট্রাইগ্লিসারাইড কি এবং এসবের মধ্যে পার্থক্য কি? অনুশীলনে অংশগ্রহণের জন্য রােগীর পরিবারের স্ত্রী সদস্যদের, যারা নিজে রান্না করেন বা রান্না পরিচালনা করেন, তাঁদেরকে এ প্রশিক্ষণে যুক্ত করেছি এবং তাঁদের জন্য রান্না শিক্ষার ব্যবস্থা করেছি। শুরুর পর্যায়ে তেলশুন্য খাদ্যের স্বাদ ভালাে ছিল না। এটা শুধুমাত্র সেদ্ধ খাওয়ার মতাে মনে হতাে। কিন্তু ক্রমান্বয়ে রন্ধন শিল্পকে উন্নত করেছি। গত তিন-চার বছরে প্রায় হাজার ধরণের সুস্বাদু খাদ্য তৈরির পদ্ধতি নির্ধারণ করা সম্ভব হয়েছে। আমি ইতােমধ্যে পাঁচটির বেশি বই প্রকাশ করেছি শূন্যতেলে রন্ধন প্রণালি সম্বন্ধে এবং বইগুলি যথেষ্ট জনপ্রিয় হয়েছে। আমি আরও উপলব্ধি করেছিলাম, যারা হৃদরােগকে প্রতিরােধ করতে চান, তাঁরা হৃদরােগ বৃদ্ধির ব্যাপারে পথ্যকে গুরত্বপূর্ণ বিষয় মনে করেন। তাঁরা বােঝেন, পথ্য হচ্ছে এমন একটি বিষয় যার অনেকখানি নিজেদের আয়ত্তে রাখা সম্ভব। তাই এত প্রশ্ন। আমার কাছে ডায়মন্ড পকেট বুক্স সংস্থা থেকে একটি বই লেখার অনুরােধ আসে, যে বইতে হৃদরােগীরা বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর পাবেন। আর সেই উদ্দেশ্যেই এ বই। এ বইতে খাদ্যতালিকা বা প্রয়ােজনীয় পথ্য সম্বন্ধে যত রকমের প্রশ্ন আপনি চিন্তা করতে পারেন, তার উত্তর সহজ ভাষায় দেয়া আছে। নিশ্চয়ই এ ধরণের প্রশ্ন বহুবার আপনার মনে এসেছে, কিন্তু সেসবের এত সহজ উত্তর পাননি। এ বইটি সহজ এবং এর উত্তরগুলি স্পষ্ট ও সরল। আশা করি, আপনি বইটি পছন্দ করবেন।
ডা. বিমল ছাজেড় উপমহাদেশের চিকিৎসাজগতে একজন সুপরিচিত ব্যক্তিত্ব। তিনি ভারতে নন-ইনভেসিভ কার্ডিওলােজি ও বিনা অপারেশনে হৃদরােগ চিকিৎসাপদ্ধতির প্রবর্তক। ভারতের পশ্চিমবঙ্গে ১৯৬১ সালে এক জৈনধর্ম পরিবারে তাঁর জন্ম। কলকাতা সেন্ট লরেন্স হাইস্কুলে পড়াশােনা শেষে ১৯৮৬ সালে কলকাতার আরজি কার মাইকেল মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাস করেন। ২৫ বছর বয়সে নয়াদিল্লির ডা. রাম মনােহর লেহিয়া হাসপাতালের হৃদরােগ বিভাগে কাজ শুরু করেন। সেখানে একটি অপ্রত্যাশিত ঘটনা তাঁর জীবন-উপলব্ধি পরিবর্তন করে দেয়। ফলে হৃদরােগ চিকিৎসার বিষয়ে তাঁর ধ্যান-ধারণা নতুন মােড় নেয়। তিনি লখনৌ কিং জর্জ মেডিকেল কলেজ থেকে এমডি ডিগ্রি সম্পূর্ণ করেন এবং সেখানে অপারেশন ছাড়া হৃদরােগীদের চিকিৎসা নিয়ে গবেষণা করেন। এমডি করার পর অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অফ মেডিকেল সায়েন্সেস AIIMS এ সিনিয়র রেসিডেন্ট এবং সহকারী অধ্যাপক হিসেবে ৬ বছর কাজ করেন। তিনি যােগব্যায়াম পদ্ধতির ওপরও প্রশিক্ষণ নেন। AIIMS-এ তার গবেষণা প্রমাণ করেছে যে, করােনারি হার্ট ডিজিজ বা হার্ট ব্লকেজ শুধু প্রতিরােধই হয় না, তা বিলােপ করে রােগীকে নিরােগ অবস্থায় ফিরিয়ে আনা সম্ভব। এছাড়া আমেরিকার নন-ইনভেসিভ কার্ডিওলােজির অগ্রদূত ডা. ডিন অরনিশের নিকট প্রশিক্ষণকালেও ডা. বিমল ছাজেড় প্রমাণ করেন যে, জীবন-যাপন পদ্ধতির মাধ্যমে হৃদরােগ থেকে সুস্থতা লাভ সম্ভব। ১৯৯৫ সালে ডা. বিমল ছাজেড় AIIMS থেকে পদত্যাগ করে সাওল Science And Art Of Living-SAAOL বা আধুনিক মেশিন-মেডিসিন, আদর্শ জীবন-যাপন ও পরিকল্পিত খাদ্য-অভ্যাস সমন্বিত এক নতুন চিকিৎসাপদ্ধতি উদ্ভাবন করে হৃদরােগীদের চিকিৎসা প্রদান শুরু করেন। ১৯৯৭ সালে ডা. বিমল ছাজেড় দিল্লীতে তাঁর সাওল হার্ট সেন্টার ক্লিনিক উদ্বোধন করেন। পরে ভারতের বিভিন্ন প্রদেশসহ বাংলাদেশ, নেপাল ও ভুটানে ৩২টি শাখা স্থাপন করেন । এ সংখ্যা ক্রমশ বেড়েই চলছে। সাওল হার্ট সেন্টারের প্রধান কার্যালয় দক্ষিণ দিল্লির লাজপাত নগরের বিক্রম বিহারে অবস্থিত। ডা. বিমল ছাজেড় উদ্ভাবিত সাওল হার্ট প্রােগ্রাম বিনা অপারেশনে হৃদরােগ মুক্তির চিকিৎসাপদ্ধতি হিসেবে ব্যাপকভাবে গৃহীত হয়েছে। এ পদ্ধতিতে এলােপ্যাথিক চিকিৎসার সঙ্গে চিকিৎসা-জ্ঞান, তেলছাড়া রান্না, মানসিক চাপ ব্যবস্থাপনা, যােগব্যায়াম ও মেডিটেশনের সম্মিলিত পদ্ধতিতে রােগীকে স্থায়ীভাবে সুস্থ করে তােলা হয়। ডা. ছাজেড় হৃদরােগীর জন্য শতাধিক বই লিখেছেন। এছাড়া ভিসিডি আকারে তার অনেক লেকচার পাওয়া যায়। তিনি প্রতিকারমূলক কার্ডিওলজির একজন চমৎকার শিক্ষক। তাঁর পরিচালনায় হৃদরােগ চিকিৎসা বিষয়ক সাওল টাইম' নামে একটি দ্বিমাসিক পত্রিকা প্রকাশিত হয়। ডা. বিমল ছাজেড় ৮০ হাজারেরও অধিক রােগীর চিকিৎসা করেছেন এবং হার্ট অ্যাটাক, বাইপাস সার্জারি ও এনজিওপ্লাস্টি থেকে মুক্ত থাকার জন্য রােগীদের সাহায্য করেছেন। ভারতের প্রাক্তন প্রয়াত রাষ্ট্রপতি শ্রী শংকর দয়ালজী শর্মা, প্রাক্তন রাষ্ট্রপ্রধান শ্রী প্রতিভা ডি পাতিল এবং তাঁর স্বামী ডা. বিমল ছাজেড়ের কাছ থেকে সাওল চিকিৎসাপদ্ধতি গ্রহণ করেছেন।