রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন, স্বাধিকার আন্দোলন এবং আমাদের মুক্তিযুদ্ধে অলি আহাদ-এর সংগ্রাম ও অবদানের কথা চিন্তা করলে তাঁকে ‘বাংলাদেশের অলি আহাদ’ই বলতে হয়। অলি আহাদ একজন চিরবিদ্রোহী জননেতা। তাঁর জন্ম ১৯২৮ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার ইসলামপুরে। তিনি ছিলেন ১৯৪৮ সালে পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা। পঞ্চাশ দশকের গোড়ায় যুবলীগ প্রতিষ্ঠার পর তিনি এর প্রথম সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ভাষা আন্দোলনে মুখ্য ভূমিকা পালন করেন। ছিলেন আওয়ামী লীগের প্রথমে প্রচার ও পরে সাংগঠনিক সম্পাদক। তিনি ১৯৫৭ সালে কাগমারী সম্মেলনের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ ত্যাগ করে মজলুম জননেতা ভাসানীর সঙ্গে ন্যাপ গঠন করেন এবং এর প্রথম যুগ্ম-সম্পাদক নিযুক্ত হন। সাপ্তাহিক ইত্তেহাদ পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন তিনি। ১৯৭৭ সালে ডেমোক্রেটিক লীগ গঠিত হলে নির্বাচিত হন এর সহ-সভাপতি। তিনি ছিলেন ৭ দলীয় জোটের প্রধানও। তিনি সারা জীবনে ১৭ বার কারাবরণ করেন এবং দু’বার করেন আত্মগোপন। তিনি মৃত্যুবরণ করেন ২০১২ সালে। তাঁর দু’টি আলোচিত বক্তব্যের অংশবিশেষ হচ্ছে : ‘দিল্লির গোলামীর জিঞ্জির ভাঙ্গবো, বাংলাকে আজাদ করবো।’ এবং ‘১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ ও ব্রাহ্মণ্যবাদী কংগ্রেসের বিরুদ্ধে আমরা প্রথম মুক্তিযুদ্ধে জয়ী হয়েছি। ১৯৭১ সালে লাহোর-পিন্ডি এবং পাঞ্জাবি শাসন-শোষণের বিরুদ্ধে দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধে জয়ী হয়েছি। কিন্তু দুর্নীতিবাজ ও চরিত্রহীন নেতৃত্বের কারণে দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধে লক্ষ্য বাস্তবায়ন সম্ভব হয়নি। দেশ এবং দেশের মানুষকে বাঁচাতে, সন্ত্রাস, দুর্নীতি ও চরিত্রহীনতার বিরুদ্ধে আমাদের এখন তৃতীয় মুক্তিযুদ্ধে শামিল হতে হবে।’ এই গ্রন্থে অলি আহাদের বিপুল ও সংগ্রামী জীবন এবং কর্মের বিভিন্ন দিকের প্রতি আলোকপাত করা হয়েছে। গ্রন্থটি প্রণয়নের দায়িত্ব পালন করেছেন আরেক সংগ্রামী কবি ও গবেষক আবদুল হাই শিকদার।
Abdul Hye Sikder- জন্ম ১ জানুয়ারি ১৯৫৭ ৷৷ ছাট গোপালপুর গ্রামে। পিতা কৃষিবিদ ওয়াজেদ আলী শিকদার। জননী হালিমা খাতুন। মওলানা ভাসানীর দীর্ঘ ছায়ায় আশৈশব বেড়ে ওঠা তার । পিতার সাহায্যে তাঁর প্রথম লেখা ’নদী’। পড়ালেখার বেশিরভাগ কেটেছে রংপুরের কারমাইকেল কলেজে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নিয়েছিলেন স্নাতক সম্মান।তারপর নিয়েছেন স্নাতকোত্তর। পুরো পরিবার অংশ নিয়েছিল মুক্তিযুদ্ধে । প্রিয় কবি মনসুর আহমদ । স্বপ্ন ছিল চে গুয়েভারা হওয়ার। লেখালেখির শুরু স্কুলজীবন থেকেই। বিকাশ আশির দশকে। পেশা জীবন শুরু সাংবাদিকতা দিয়ে, এখনও আছেন সেই পেশাতেই। সাংবাদিকদের বৃহত্তম সংগঠন ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) দুই দুইবারের নির্বাচিত সভাপতি তিনি । মাঝে নির্বাহী পরিচালকের দায়িত্ব পালন করে এসেছেন নজরুল ইন্সটিটিউট-এ। নজরুলের ওপর নির্মাণ করেছেন তিনটি তথ্যচিত্ৰ । স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম নিয়মিত সাহিত্য মাসিক "এখন"-এর তিনি মূল স্থপতি। কবিতা, শিশুসাহিত্য, জীবনী, গল্প, গবেষণা, ভ্ৰমণ, চলচ্চিত্র-সব মিলিয়ে তার প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা এখন শতাধিক । বাংলাদেশ টেলিভিশনের শিকড় সন্ধানী ম্যাগাজিন ‘কথামালার” পরিকল্পক, উপস্থাপক। কবিতার জন্য পেয়েছেন বাংলা একাডেমি পুরস্কারসহ অন্যান্য পুরস্কার। স্ত্রী আবিদা শিকদার, পুত্র পরম ও কন্যা প্রকৃতিকে নিয়ে রাজধানীর শহরতলীতে তার সংসার।