‘নিহত নক্ষত্র’ বইয়ের ফ্ল্যাপের কথাঃ আহমদ ছফা আমাদের দেশের সেই বিরল প্রতিভাবানদের অন্যতম যাঁরা শিল্প-সংস্কৃতির যেখানেই হাত দিয়েছেন সেখানেই সোনা ফলিয়েছেন। উপন্যাস, প্রবন্ধ, কবিতা, অনুবাদ, গান, শিশু-সাহিত্য, ইতিহাস, স্মৃতিচিত্রণ ইত্যাদি সৃজন ও মননচর্চার কম ক্ষেত্রই আছে যা তাঁর। প্রতিভা ও মনস্বিতার দীপ্তিতে উজ্জ্বল হয়ে ওঠেনি। তিনি ছোটগল্প লিখেছেন কম। নিহত নক্ষত্রতার একমাত্র গল্প-সংকলন। এর অন্তর্ভুক্ত গল্পগুলো তাঁর লেখকজীবনের প্রায় গোড়ার দিকের রচনা। তারপরও এই একটি মাত্র গল্পগ্রন্থ কথাশিল্পী হিসেবে আহমদ ছফার শক্তিমত্তার পাশাপাশি তাঁর প্রতিভার বৈশিষ্ট্যটিকে ঠিকই চিনিয়ে দেয়। বইয়ের নামগল্পটিতে যে-অরাজক কালের চিত্র আহমদ ছফা এঁকেছেন, আজ যেন তারই প্রলম্বিত ছায়ার নিচে বসে সৎ, বিবেকবান মানুষের অসহায়ত্বের উপলব্ধি পাঠককে পুরনো সেই বিভীষিকার দিনগুলোর কাছাকাছি নিয়ে যায়। এমন কি আহমদ ছফা যেখানে দেহজ কামনা-বাসনার গল্প বলেছেন, সেখানেও লেখকের কলমের নিপুণ স্পর্শে তা শেষ পর্যন্ত স্বাভাবিক রক্ত-মাংসের মানুষেরই কাহিনী হয়ে উঠেছে।
সূচিপত্র * নিহত নক্ষত্র – ১১ * গন্তব্য – ৪১ * পদাঘাতের পটভূমি – ৫০ * আস্বাদ – ৬১ * প্রতিপক্ষ – ৭১ * কবি – ৭৯ * হাত – ৮৯ * পাগলা ঘণ্টা – ১০০ * কাজলী - ১০৭
বাঙালি মুসলিম লেখকদের মধ্যে অন্যতম কীর্তিমান কথাসাহিত্যিক আহমদ ছফা একাধারে ছিলেন কবি, ঔপন্যাসিক, সাংবাদিক, গণবুদ্ধিজীবী ও চিন্তাবিদ। বাবা-মায়ের দ্বিতীয় সন্তান আহমদ ছফা জন্মগ্রহণ করেন ১৯৪৩ সালের ৩০ জুন, চট্টগ্রামের চন্দনাইশ উপজেলার গাছবাড়িয়া গ্রামে। নিজ এলাকায় তাঁর শিক্ষাজীবন শুরু হয়, এবং ১৯৫৭ সালে তিনি ম্যাট্রিকুলেশন পাশ করেন। ছাত্রাবস্থায় তিনি কমিউনিস্ট পার্টির সাথে যুক্ত হন এবং মাস্টারদা সূর্যসেনের আদর্শে অনুপ্রাণিত ছিলেন। পরবর্তীতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগে ভর্তি হলেও সেখানে পড়ালেখা শেষ করেননি, এবং জাতীয় অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাকের অধীনে পিএইচডি শুরু করলেও তা আর শেষ করা হয়ে ওঠেনি। আহমদ ছফা এর বই সমূহ বাংলাদেশের স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে পাঠকদের মধ্যে বেশ আলোড়ন সৃষ্টি করে। স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম বই হিসেবে প্রকাশিত হয় তাঁর লেখা প্রবন্ধগ্রন্থ ‘বুদ্ধিবৃত্তির নতুন বিন্যাস’। আহমদ ছফা এর বই সমূহের মাঝে 'ওঙ্কার', 'অর্ধেক নারী অর্ধেক ঈশ্বরী', 'বাঙালি মুসলমানের মন', যদ্যপি আমার গুরু', 'গাভী বিত্তান্ত' প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। তাঁর আরেকটি উল্লেখযোগ্য কীর্তি হলো জার্মান সাহিত্যিক গ্যাটের অমর সাহিত্যকর্ম 'ফাউস্ট' বাংলায় অনুবাদ করা। আহমদ ছফা এর বই সমগ্র একত্রিত করে রচনাবলি আকারে ৯টি খন্ডে প্রকাশিত হয়েছে। প্রতিষ্ঠানবিরোধী এই সাহিত্যিক 'লেখক শিবির পুরস্কার' ও বাংলা একাডেমির ‘সাদত আলী আখন্দ পুরস্কার’ পেলেও সেগুলো গ্রহণ করেননি। এই পাঠকনন্দিত সাহিত্যিক ২০০১ সালের ২৮ জুলাই ৫৮ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন। সাহিত্যে অবদানের জন্য তিনি ২০০২ সালে বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক মরণোত্তর 'একুশে পদকে' ভূষিত হন।