তথ্যচিত্রের তত্ত্ব গাস্ত রোবের্জ তত্ত্ব কেন? কেন চলচ্চিত্র তত্ত্ব? চলচ্চিত্র (cinema) কী? চলচ্চিত্রকর্ম (film)-ই বা কী? প্রথমেই এই সমস্ত প্রশ্ন উঠবে। ওঠা স্বাভাবিক । সিনেমা কী প্রশ্ন করলে কেউ বলবেন, তা হল ‘একটা শিল্পমাধ্যম', কেউ বলবেন ‘গল্প বলার জনপ্রিয় উপায়', কেউ বলবেন ‘ব্যবসা-বাণিজ্য', কেউ বলবেন ‘প্রমোদ বিনোদন', কেউ বলবেন ‘এক শক্তিশালী মাধ্যম' ইত্যাদি-ইত্যাদি। নানান ধরনের প্রাযুক্তিক, শৈল্পিক বা নান্দনিক সংজ্ঞা দেওয়াও সম্ভব। আমার মতে সিনেমা হল জটিল সামাজিক পরিকাঠামোর এক গুরুত্বপূর্ণ উপাদান । এই অবস্থায় ফিল্ম্ কী প্রশ্ন করলেও নানান উত্তর পাওয়া যাবে। ফিল্ম্ হল পণ্যদ্রব্য, ফিল্ম্ হল গণমাধ্যমের হাতিয়ার, ফিল্ম হল চিত্রভাষার প্রকাশ, ফিল্ম্ হল সামাজিক প্রক্রিয়ার অংশ, ফিল্ম হল গণস্বপ্ন, ফিল্ম্ হল আধুনিক মিথ, অধিকাংশের কাছে ফিল্ম্ হল বিনোদন-আনন্দ। আমার মতে ফিল্ম হল এমন এক দৃশ্যপাঠ্যবস্তু যার রসাস্বাদন করা যায় এবং যার ব্যাখ্যা-বিচার সম্ভব। তাহলে সিনেমা হচ্ছে এখন পর্যন্ত যত ছবি (তথ্যচিত্র-কাহিনীচিত্র ইত্যাদি নির্বিশেষে) তৈরি হয়েছে তার এক সামগ্রিক যোগফল। আমরা এখানে বিশেষ এক ধরনের ছবি, তথ্যচিত্রের মাধ্যমে, সিনেমাকে বোঝার চেষ্টা করব । তথ্যচিত্র ও কাহিনীচিত্রের মধ্যে যে একটা পার্থক্য আছে তা সকলেই স্বীকার করেন। কিন্তু একই মাপকাঠিতে উভয়ের মূল্যায়ন করা এবং উভয়ের উপর একই দায়িত্ব আরোপ করার একটা প্রবণতাও লক্ষ করা যায়। প্রথমে যে পার্থক্যটি মেনে নেওয়া হয়েছিল, এই প্রবণতায় কার্যত তাকেই অস্বীকার করা হচ্ছে। এই দুই নামে পার্থক্য যতটা স্পষ্ট মনে হতে পারে, আসলে কিন্তু তা নয়। তথ্যচিত্র-পরিচালক তাঁর তথ্য পরিবেশনের উদ্দেশ্যে কোনো কাহিনী অবলম্বন করতে পারেন। অন্যদিকে কোনো বিশেষ যুগ বা পরিবেশের সবচেয়ে তন্নিষ্ঠ পরিচয় প্রায়ই কাহিনীচিত্রে ধরা পড়ে।