"হে আমার মেয়ে" বইয়ের সংক্ষিপ্ত কথা” তরুণী-যুবতীর মুক্তির শ্বেতপত্র ইসলাম ধর্মে নারী জাতি অত্যন্ত শ্রদ্ধার পাত্র তারা। পরম মর্যাদার অধিকারী। তাদেরকে ক্ষেত্রবিশেষে মূল্যবান সােনার টুকরাে এমনকি হীরকখণ্ডের সাথে তুলনা করা হয়েছে। জাহেলি যুগে যেখানে নারীর বেঁচে থাকার অধিকার ছিলাে না, নারী ভূমিষ্ঠ হওয়াকে যে সমাজে কৌলিন্য হিসেবে অলুক্ষণের প্রভাব এমনকি নারীজাতিকে যখন প্রাণী বলে স্বীকার করে নিতেও তাবৎ দুনিয়ার ঘেন্না হতাে; তখনই ইসলাম ও ইসলামের নবী বিশ্বখ্যাত সমাজবিজ্ঞানী মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এসে নারীকে মর্যাদার উচ্চাসনে অধিষ্ঠিত করেছেন। আজকের সমাজের তথাকথিত তরুণী-যুবতীরা গড্ডলিকা প্রবাহে নিজেকে ভাসিয়ে দিয়েই যেন তৃপ্তির ঢেকুর গিলে থাকে। তথাকথিত সভ্যতার নীল রঙে যারা নিজেকে রাঙিয়ে তুলতে ভালােবাসে; আধুনিক ফ্যাশনের নামে যারা নিজেকে অন্যের সামনে পণ্যের পসরা হিসেবে ফুটিয়ে তােলে, তাদের জন্য এক দরদী পিতার আর্তনাদ আজ তুলে ধরার প্রয়াস পাব। ঐ পিতা তার কলিজার টুকরাে কন্যাকে যেই খােলাচিঠি লিখেছেন, তা প্রতিটি তরুণী-ষােড়শী, যুবতী এমনকি প্রতিটি নারীর চেতনার জানালায়ই করাঘাত করতে পারে বলে আমাদের বিশ্বাস। এটি প্রতিটি নারীর জন্য হতে পারে মুক্তির শ্বেতপত্র। তাই বিবেকের আহ্বানে আমরা সেই খােলাচিঠিটি এখানে তুলে ধরছি।
বিংশ শতাব্দীর এক সমাজচিন্তক দার্শনিক ড. শায়খ আলী তানতাবী। ১৯০৯ খ্রিস্টাব্দে সিরিয়ার দামেশক নগরীতে তাঁর জন্ম। পৈত্রিক আবাস মিসরের তানতা শহর হওয়ায় তানতাবী নামেই তিনি সমধিক পরিচিত। ছাত্রজীবনেই তুখােড় মেধার কারণে তিনি গবেষক শিক্ষকগণের দৃষ্টি কাড়েন। সেকালে গবেষণা ও জ্ঞানসাধনায় তার পারিবারিক ঐতিহ্য ছিল ঈর্ষণীয়। সেই পরিবারেই তিনি ইসলামি ও সাধারণ শিক্ষার সমন্বিত জ্ঞান অর্জন করে ঐতিহ্যের তিলকে সােনার প্রলেপ আঁটেন। সতেরাে বছর বয়স। থেকেই বিভিন্ন পত্রিকায় তাঁর গবেষণামূলক প্রবন্ধ-নিবন্ধ ও গল্প প্রকাশ হতে থাকে। ১৯৩৬ সালে সাম্রাজ্যবাদীদের জুলুম ও শােষণের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে তিনি ইরাক গমন করেন। সুদীর্ঘ পাঁচ বছর পর দামেশকে ফিরে এসে বিচারক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। পর্যায়ক্রমে যােগ্যতার সিঁড়ি বেয়ে তিনি প্রধান বিচারপতির আসন অলঙ্কৃত করেন। আর লেখালেখি! সে তাে তার নেশা। এ নেশা তার মজ্জার সাথে মিশা। একটু সময় পেলেই এ চিন্তাবিদ কাগজ কলম হাতে লিখতে বসে যেতেন। তাঁর জ্ঞানের নিগুঢ় চশমায় ধরা পড়ে সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ঘাপটি মেরে থাকা অসঙ্গতির কালাে পাহাড়। সেই অমানিশা দূর করতে তিনি। জ্বালান নানান রঙের জ্ঞানের মশাল। সেই আলােয় বিদুরিত হয় শত প্রকারের। আঁধার-অজ্ঞানতা; সম্বিৎ ফিরে পায়। হতাশাচ্ছন্ন জাতি। গবেষণামূলক লেখালেখির খ্যাতির মধ্য দিয়ে তিনি মক্কা মােকাররমা শরিয়া কলেজের অধ্যাপক নিযুক্ত হন। বিভিন্ন মিডিয়ায় যুগ-জিজ্ঞাসার সমাধানমূলক অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন। পাশাপাশি নিয়মিত পত্র-পত্রিকায় কলাম লেখা, বিষয়ভিত্তিক গ্রন্থ প্রণয়ন আর বিভিন্ন মাদরাসা-কলেজে দরসদানও চলতে থাকে সমান গতিতে। ১৯৯৯ সালে ৯০ বছর বয়সে এ শায়খ মক্কা নগরীতে ইন্তেকাল করেন।