"পারিবারিক কলহ ও তা নিরসনের উপায়"বইয়ের প্রকাশকের কথাঃ কয়েক বছর আগের কথা। আমরা সকল ভাইয়েরা পৈত্রিক সম্পত্তি বন্টনের জন্য আমাদের গ্রামের বাড়ীতে একত্রিত হয়েছি। বাড়ী এবং জমিজমা মেপে বন্টন করার জন্য একজন ‘আমীন’ (জমি-জমা পরিমাপকারী) ডাকা হয়েছে। আমাদের জমি চিনে এমন একজন চাচাতাে ভাইকেও ডাকা হয়েছে। অল্প সময়ের মধ্যে বাড়ী ও জমি পরিমাপ করে ভাগ-বন্টন কেমনে হবে তার একটা খসড়া করে, পিতার কনিষ্ঠ সন্তান হিসেবে আমাকেই ভাগ ধরতে বলা হলাে, আমি বললাম, না, এ নিয়মে না। আমাদের বড়রা যৌথ পরিবার থাকাকালীন সংসারের জন্য অনেক পরিশ্রম করেছেন। আমাদের তেমন পরিশ্রম করতে হয়নি। তাই ভাগ ধরার অধিকারও বড়দেরই আগে। এরপর অল্প সময়ে বন্টন কাজ শেষ হলে, “আমীন সাহেব বলে উঠলেন আমীনগীরি করতে করতে বুড়াে হয়ে গেলাম, কিন্তু এত অল্প সময়ে এত মিল-মহব্বতের সাথে ভাই-ভাইয়ে বাবার সম্পত্তি ভাগ করে নিতে দেখিনি। অধিকাংশ পরিবারেই এ সময় মারাত্মক কলহ হয়। এ নিয়ে ভাইয়ে ভাইয়ে মনােমালিন্য হয়ে কথা বন্ধ হয়ে যায়। একই বাড়ীর উঠানের মাঝখানে দেয়াল নির্মিত হয়। ইত্যাদি। কিন্তু আপনাদের দেখছি তেমন কিছুই হলাে না। আমি বললাম, আমাদের আব্বাজান বেশ বিচক্ষণ ছিলেন, বিধায় আমাদের প্রত্যেকের ব্যবসা-বাণিজ্য এবং আয় রােজগার তার সময়েই ভিন্ন হয়ে গেছে। যার দরূণ এ সময়েই আর কোন জটিলতা সৃষ্টি হয়নি। কওমী মাদরাসায় পড়ানাের সুবাদে আল্লাহপাক আমাকে ‘হানাফী ফিকহের বিখ্যাত কিতাব ‘হেদায়া’-এর তৃতীয় খণ্ড (যা ব্যবসা-বাণিজ্য ও কামাই-রুজী সম্পর্কে বেশ কয়েক বৎসর পড়ানাের তাওফীক দিয়েছেন। এ কিতাবে বিভিন্ন মাসয়ালার ক্ষেত্রে একটি বিষয় বার বার এসেছে, তা হলাে, লেনদেনের ক্ষেত্রে এমন অজ্ঞতা যা শেষ পর্যন্ত ঝগড়ায় পর্যবসিত হওয়ার সম্ভাবনা আছে তা পাওয়া গেলেই সেই লেনদেন নিষিদ্ধ হয়ে যায়। এটা যে শরীয়তের কত বড় অনুগ্রহ তা এ সময় কিছুটা বুঝে আসে, যখন দেখি যে, অধিকাংশ পারিবারিক সম্পর্ক নষ্ট হয় লেনদেনে স্বচ্ছতা না থাকার কারণে। পরিবার ও আত্মীয়তার বন্ধন আল্লাহ পাকের এক বিশেষ নেয়ামত। কিন্তু যদি পরস্পরের লেনদেনে স্বচ্ছতা না থাকে তাহলে তা ভয়ংকর রূপ ধারন। করে পরস্পরে শত্রুতার বীজ বপন করে সম্পর্ক নষ্ট করে দেয়। আমাদের বর্তমান আয়োজন ‘পারিবারিক কলহ ও তা নিরসনের উপায় আমাদের মুহতারাম উস্তায শাইখুল ইসলাম হযরত মাওলানা মুফতী মুহাম্মাদ তাকী উসমানী দামাত বারাকাতুহুমের অমর কীর্তি। এ কিতাবে বর্ণিত বিষয়গুলাে যদি আমরা মেনে চলতে পারি, তাহলে ইনশাআল্লাহ আমাদের সর্ব প্রকার পারিবারিক কলহ দূর হয়ে, পরিবারের সদস্যদের মধ্যে মধুময় সম্পর্ক স্থাপিত হবে। আল্লাহপাক আমাদেরকে তাওফীক দান করুন। আমীন। আমরা আমাদের সামর্থ্য অনুযায়ী এ গ্রন্থকে ত্রুটিমুক্ত ও সর্বাঙ্গীন সুন্দর করার চেষ্টা করেছি। তারপরও কোন ভুল-ত্রুটি থেকে যাওয়া বিচিত্র নয়। যদি কারাে দৃষ্টিতে কোন অসংগতি ধরা পড়ে, তাহলে আমাদেরকে অবগত করলে ইনশাআল্লাহ পরবর্তি সংস্করণে সংশােধন করে নিবাে। আমাদের ধারণা উলামা-তলাবা, খতীব-ইমাম, ওয়ায়েয ও সাধারণ মুসলমানসহ সকলের জন্য এ গ্রন্থ অতীব উপকারী হবে ইনশাআল্লাহ। এ গ্রন্থ প্রকাশে অনেকেই অনেকভাবে আমাদের সহযােগিতা করেছেন। আল্লাহপাক তাদের সবাইকে উত্তম বিনিময় দান করুন। এবং মূল গ্রন্থকার, সংকলক, অনুবাদক ও প্রকাশক, পাঠকসহ সকলের জন্য নাজাতের উসীলা বানান। আমীন! ইয়া রাব্বাল আলামীন। তারিখ। বিনীত ১ জুমাদাল উলা ১৪৩৬ হিজরী। মুহাম্মাদ হাবীবুর রহমান খান। ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ঈসায়ী। ৭ এ্যালিফ্যান্ট রােড, ঢাকা-১২০৫
প্রখ্যাত ইসলামি ব্যক্তিত্ব শাইখুল ইসলাম মুফতী মুহাম্মদ তকী উসমানী শুধু ইসলামের নানা বিষয় নিয়ে বই রচনা করেননি, তিনি একাধারে ইসলামি ফিকহ, হাদীস, তাসাউফ ও ইসলামি অর্থনীতি বিশেষজ্ঞ। আর তা-ই নয়, তিনি একজন বিচারক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় শরীয়াহ আদালতে, এমনকি পাকিস্তান সুপ্রিম কোর্টের শরীয়াহ আপিল বেঞ্চেরও বিচারক পদে আসীন ছিলেন। মুফতী মুহাম্মদ তকী উসমানী ভারতের উত্তর প্রদেশের দেওবন্দে ১৯৪৩ সালের ৫ অক্টোবর জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৪৭ সালে দেশভাগ হয়ে ভারত ও পাকিস্তান দুটি আলাদা রাষ্ট্রে পরিণত হলে তার পরিবার পাকিস্তানে চলে আসে এবং এখানেই স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করে। শিক্ষাজীবনে তিনি বিভিন্ন জায়গা থেকে ইসলামি নানা বিষয়সহ অন্যান্য বিষয়েও শিক্ষা নিয়েছেন। তিনি করাচি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছেন, যেখান থেকে অর্থনীতি, আইনশাস্ত্র ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানে ডিগ্রি অর্জন করেন। আর পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয় থেকে লাভ করেছেন আরবি ভাষা ও সাহিত্যে এম.এ. ডিগ্রি। দারুল উলুম করাচি থেকে পিএইচডি সমমানের ডিগ্রি অর্জন করেছেন ইসলামি ফিকহ ও ফতোয়ার উপর। সর্বোচ্চ স্তরের দাওয়া হাদিসের শিক্ষাও তিনি একই প্রতিষ্ঠান থেকে গ্রহণ করেন। বিচারকের দায়িত্ব পালন ছাড়াও বিভিন্ন ইসলামি বিষয়, যেমন- ফিকহ, ইসলামি অর্থনীতি ইত্যাদি বিষয়ে বিশেষজ্ঞ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। আন্তর্জাতিক ফিকহ একাডেমির স্থায়ী সদস্যপদ রয়েছে তাঁর। পাকিস্তানে 'মিজান ব্যাংক' নামক ইসলামি ব্যাংকিং সিস্টেম প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে পাকিস্তানে ইসলামি অর্থনীতির প্রসারে তিনি বিশেষ অবদান রেখেছেন। তিনি রচনা করেছেন অসংখ্য বইও। তকী উসমানীর বই এর সংখ্যা ৬০ এর অধিক। শাইখুল ইসলাম মুফতী মুহাম্মদ তকী উসমানী এর বই সমূহ রচিত হয়েছে ইংরেজি, আরবি ও উর্দু ভাষায়। শাইখুল ইসলাম মুফতী মুহাম্মদ তকী উসমানী এর বই সমগ্র এর মধ্যে 'Easy Good Deeds', 'Spiritual Discourses', 'What is Christianity?', 'Radiant Prayers' ইত্যাদি ইংরেজি বই, ও 'তাবসেরে', 'দুনিয়া মেরে আগে', 'আসান নেকিয়া' ইত্যাদি উর্দু বই উল্লেখযোগ্য। এসকল বই ইসলাম প্রসারে, এবং বিভিন্ন ইসলামি ব্যাখ্যা প্রদান ও আলোচনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।