"বাবরনামা" বইয়ের ভূমিকা থেকে নেয়াঃ পাক ভারত-বাংলা উপমহাদেশে বিভিন্ন সময়ে সংঘটিত মুসলিমদের রাজনৈতিক অভিযানগুলােকে আমি রাজনৈতিক মিশন বলে অভিহিত করে থাকি। অষ্টম শতাব্দীর শুরুর প্রথম দশকের দ্বিতীয় পদে অর্থাৎ ৭১২ ঈসায়ী মনে মুহম্মদ বিন কাসিমের নেতৃত্বে পরিচালিত অভিযানটি ছিল ভারতে মুসলিমদের প্রথম রাজনৈতিক মিশন। বিপক্ষে ছিলেন সিন্ধুর হিন্দু রাজা দাহির। তাঁর পরাজয় ও মুহম্মদের বিজয় ছিল ভারতের রাজনৈতিক ইতিহাসের প্রথম আধুনিক ঘটনা। কেননা, সদ্য পৌত্তলিকতামুক্ত আরববাসী পৌত্তলিক ভারতবাসীর জীবনে ইসলামের আলােকবার্তা বয়ে এনেছিলেন। সেই আলাের সংস্পর্শে পৌত্তলিক সিন্ধুবাসী হিন্দুরা আলােকিত হয়ে ওঠে। পর্যায়ক্রমে উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশ, পাঞ্জাব, বেলুচিস্তান কেউই বাদ যায়নি। তারা সবাই আলােকত ও মুসলিম হয়ে ওঠেন। মুসলিমদের দ্বিতীয় বিজয়াভিযান পরিচালিত হয় সুলতান মাহমুদের নেতৃত্বে। তৃতীয় বিজয়াভিযান পরিচালিত হয় মুহম্মদ ঘুরির নেতৃত্বে এবং তাঁর নেতৃত্বেই ভারতের দিল্লিতে প্রথম মুসলিম সালতানাত কায়েম হয়। বিপক্ষে ছিলেন অহঙ্কারী দাম্ভিক পৃথ্বিরাজ চৌহান। তাঁর দম্ভ চূর্ণ করে দিয়ে দিল্লিতে মুসলিম সালতানাত কায়েম করে এদেশে মুসলিমদের রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠা করেন মুহম্মদ ঘুরি। অবশিষ্ট পৌত্তলিক ভারত ইসলামের আলােয় আলােকিত হয়ে উঠতে থাকে। চতুর্থ অভিযান পরিচালিত হয় জহির-উদ-দিন মুহম্মদ বাবুরের নেতৃত্বে। প্রতিপক্ষ ছিলেন ইব্রাহীম লােদি। তারপরের প্রতিপক্ষ ছিলেন রাজা সাঙ্গা। বাবুরকে পরাজিত করে তিনি দিল্লি সালতানাত দখলের দুঃস্বপ্ন দেখেছিলেন। বাবুর তা চূর্ণ-বিচূর্ণ করে দিয়ে দিল্লিতে মােগল সালতানাত কায়েম করেন পরবর্তী প্রায় সাড়ে তিনশাে বছরের জন্য। এই বিজয়ের ধারাবাহিক বর্ণনা এই ভূমিকায় প্রদত্ত হয়েছে। বাবরনামা' গ্রন্থের পাঠকদের জন্য তা খুবই প্রাসঙ্গিক।
Muhammad jalal Uddin Bisshas জন্ম ১০ জানুয়ারি ১৯৫৯। ভারতের পশ্চিমবঙ্গের জেলা উত্তর ২৪ পরগনার বসিরহাট মহকুমা ও থানার চৈতা গ্রামে বিখ্যাত বিশ্বাস পরিবারে। পিতা মুহম্মদ তছিমুদ্দীন বিশ্বাস (১৯১৭-১৯৮০), মাতা অহিদা খাতুন (১৯২৩-২০০৮)। এগারাে ভাই-বােনের মধ্যে নবম। শিক্ষা-দীক্ষা ভারতে। ভাষা শিক্ষা ও ভাষা চর্চা আজীবনের সাধনা। সাংবাদিকতা ও গণসংযােগে ডিপ্লোমাও করেন গত শতাব্দীর আশির দশকে। বহুমুখী প্রতিভাধর কবি। প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘ভিড়ের মাঝে আমরা দুজন’ (১৯৮৯) কলকাতা থেকে প্রকাশিত হয়। এ ছাড়া আছে কাব্য আমপারা' (২০০০), ঢাকা, কালিদাসের মেঘদূত' (২০০৬), ইকবালের শ্রেষ্ঠ কবিতা' (যন্ত্রস্থ), গালিবের শের (যন্ত্রস্থ)। আছে। উপন্যাস 'যমুনার ধারা বহে' (২০০৪), মােল্লা নাসিরুদ্দীন (২০০৪), অনূদিত উপন্যাস ‘রক্ত রাঙা পথ’ (২০০৫), একটি প্রেমের স্মৃতি' (২০০৮), মূল ভাষা ঠেট আউধী থেকে অনুবাদ করেন মালিক মুহম্মদ জায়সীর ‘পদমাবত' (২০০৮)। বিশ্বনবী হজরত মুহম্মদ (স.) সম্পর্কে তাঁর প্রণীত ও অনূদিত গ্রন্থ সংখ্যা বাংলা ভাষায় সম্ভবত তারই সবচেয়ে বেশি। ধর্ম-ইতিহাস-সাহিত্য-সংস্কৃতি, ভাষাতত্ত্ব, ব্যাকরণ বিষয়ক গ্রন্থাদিও প্রকাশিত হয়েছে ঢাকা এবং কলকাতা থেকে। ঐতিহ্য থেকে প্রকাশিত হয়েছে, ‘মােগল সম্রাট হুমায়ুন’ (২০০৫), মােগল শাসন ব্যবস্থা' (২০০৭), আলবিরুনির ‘ভারতত্ত্ব' (২০০৭), ‘ফিকহুস সিরাত' (২০০৮), ‘বেহেস্তি জেওর (২০০৯) প্রভৃতি গ্রন্থ। ঐতিহ্য'-র তাঁর নবতম সংযােজন ড. ভােলানাথ তেওয়ারির ‘ভাষাবিজ্ঞান ও মােগল সম্রাট বাবরের আত্মকথা 'বাবরনামা'। ইবনে বতুতার সফরনামা (২০০৪) সহ এ পর্যন্ত তার প্রকাশিত গ্রন্থসংখ্যা ৮০-র অধিক। জেলা উত্তর ২৪ পরগনার বসিরহাট মহকুমার মহান সন্তান শহীদ তিতুমীর, মাওলানা আকরম খাঁ, আল্লামা রুহুল আমীন, শেখ আবদুর রহিম, কবি শাহাদাত হােসেন, ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ প্রমুখের সােনালি শৃঙ্খলের ধারাবাহিকতায় ইনি অন্যতম মহান সংযােজন বলে অভিহিত হন। পেশা সাহিত্য।