‘কুইন অভ দ্য ডন’ বইয়ের কিছু অংশঃ এক রিমা’র স্বপ্ন। ভীষণ যুদ্ধ হয়েছে মিশরে। দু'ভাগে ভাগ হয়ে গেছে দেশটা। উত্তরে মেমফিস ও ট্যানিসে এবং অনেক শাখায় বিভক্ত হয়ে সমুদ্রের দিকে বয়ে-চলা নীল নদের উর্বর ব-দ্বীপ অঞ্চলে একসময় জোর করে ক্ষমতা দখল করেছিল দুর্ধর্ষ মেষপালকরা, যারা জাতিগতভাবে আটি নামে পরিচিত। এদের বাপ-দাদারা, কয়েক প্রজন্ম আগে, বন্যার মতো অপ্রত্যাশিতভাবে আবির্ভূত হয়েছিল। মিশরে; ধ্বংস করে দিয়েছিল অনেক মন্দির আর দেবদেবীর মূর্তি, হস্তগত করেছিল ওখানকার সম্পদ। দক্ষিণে, মানে থেবেসে, শাসনকাজ চালিয়ে যাচ্ছিল প্রাচীন ফারাওদের বংশধররা, তবে ওদের অবস্থা খুব একটা সুবিধার ছিল কখনোই। কারণ উত্তরের সবগুলো শহর দখল করে রাখা। আটিদের তাড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছিল ওরা নিরন্তর, কিন্তু সফল হতে পারছিল না। ওদের এই ব্যর্থতার কারণ, ওরা সামরিক দিক দিয়ে দুর্বল। আটিদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ওরা যাতে শক্তিশালী হতে পারে সেজন্য ব্যাবিলনের রাজা ডিটানাহ্, তাঁর মেয়ে রিমাকে বিয়ে দিয়েছিলেন ফারাও খেপেরুরা’র সঙ্গে। খেপেরুরা আর রানি রিমার একমাত্র সন্তান রাজকুমারী....... বইটির শেষের কথাঃ দলটা অদ্ভুত। রানি হয়েও চাষির স্ত্রীর বেশ ধারণ-করা রিমা। চাষির মেয়ের মতো করে সাজানো রাজকুমারী নেফরা। সম্ভ্রান্ত ধাইমা থেকে আটপৌরে রমণী সাজা কেম্মাহ। দেহরক্ষী থেকে কুলিতে পরিণত হওয়া দৈত্যাকৃতির রু। এবং ত্রাতা হিসেবে আবির্ভূত হওয়া রহস্যময় টাউ। পালাচ্ছেন তারা। কারণ ভীষণ এক যুদ্ধে নিহত হয়েছেন ফারাও খেপেররা, বিজয়ীপক্ষ হত্যা করতে চাইছে রানি ও রাজকুমারীকে ।দলটা কি পারবে মেমফিসের পবিত্র ভূমিতে হাজির হতে,। যেখানে থাকেন গোপন এক ভ্রাতৃতসঙ্ঘের প্রতিষ্ঠাতা সাধু রয়? তিনি কি নেফাকে আগলে রাখতে পারবেন আসলেই? দেবী আইসিস ও হাথোরকে নিয়ে যে-স্বপ্ন দেখেছেন রিমা, । তা কি সত্যি হবে শেষপর্যন্ত?
ভাইয়ের সাথে বাজি ধরে অ্যাডভেঞ্চার কাহিনী লেখা শুরু করার পর যিনি শেষ পর্যন্ত পৃথিবীর ইতিহাসে অন্যতম সেরা দুঃসাহসিক ও রোমাঞ্চকর গল্পের স্রষ্টা হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছিলেন তিনি হলেন স্যার হেনরি রাইডার হ্যাগার্ড। কম বয়সে চাকরিসূত্রে তিনি আফ্রিকা চলে যান এবং সে অঞ্চলের নানা জায়গায় ঘুরে বেড়ান, যার ফলে আফ্রিকা মহাদেশের নানা জানা-অজানা বিষয় সম্পর্কে তিনি প্রচুর জ্ঞান অর্জন করেন এবং এই জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা পরবর্তীতে ব্যবহার করেন তার রোমাঞ্চকর অ্যাডভেঞ্চার উপন্যাস ও গল্পসমূহ রচনায়। দশ ভাই-বোনের মধ্যে অষ্টম হেনরি রাইডার হ্যাগার্ড জন্মগ্রহণ করেন ১৮৫৬ সালের ২২ জুন, ইংল্যান্ডের নরফোকে। খুব অল্প বয়সেই কর্মজীবন শুরু হয়ে যায় পরিবারের আর্থিক অস্বচ্ছলতার কারণে। মাত্র উনিশ বছর বয়সেই তাঁকে চাকরিসূত্রে পাড়ি জমাতে হয় আফ্রিকায়। সেখান থেকে ৬ বছর পর ফিরে এসে তিনি আইনশাস্ত্রে পড়াশোনা শুরুর পাশাপাশি সাহিত্যে মনোনিবেশ করেন এবং তাঁর জাদুকরী লেখনীর মাধ্যমে সৃষ্টি হতে থাকে 'সলোমন'স মাইনস্', 'শী', 'অ্যালান কোয়াটারমেইন' এর মতো অমর সকল দুঃসাহসিক ও রোমাঞ্চকর কাহিনীর। হেনরি রাইডার হ্যাগার্ড এর বই সমূহ যুগে যুগে অ্যাডভেঞ্চারপ্রিয় পাঠকদের দিয়ে গিয়েছে নানা বিচিত্র কল্পকাহিনীর এক অনন্য অভিজ্ঞতা, যার মূলে রয়েছে 'আমস্লোপোগাস', 'রিলিজিয়ন', 'অ্যালান কোয়াটারমেইন', 'শী' ইত্যাদি বিখ্যাত সিরিজ। হেনরি রাইডার হ্যাগার্ড এর বই সমগ্র এর মধ্যে 'ক্লিওপেট্রা', 'মন্টেজুমা'স ডটার', 'লিসবেথ', 'কুইন অফ দ্য ডন', 'ভার্জিন অফ দ্য সান', 'দ্য ঘোস্ট কিংস', 'মেরি', 'দ্য ট্রেজার অফ দ্য লেক', 'রেড ইভ' ইত্যাদিও উল্লেখযোগ্য। তাঁর বেশ কিছু বই বাংলাদেশি পাঠকদের সুবিধার জন্য অনূদিত হয়েছে বাংলা ভাষায়। বাংলা ভাষায় অনূদিত হেনরি রাইডার হ্যগার্ড এর অনুবাদ বই এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো 'শী', 'রিটার্ন অফ শী', 'দ্য ইয়েলো গড', 'দ্য ঘোস্ট কিংস', 'কিং সলোমন'স মাইনস', 'মন্টেজুমা'স ডটার', 'অ্যালান অ্যান্ড দ্য হোলি ফ্লাওয়ার', 'মার্গারেট', 'দ্য পিপল অফ দ্য মিস্ট' ইত্যাদি। এই খ্যাতিমান কাহিনীকার ১৯২৫ সালের ১৪ মে ৬৮ বছর বয়সে ইংল্যান্ডের লন্ডনে মৃত্যুবরণ করেন। এর পূর্বে তিনি ১৯১২ সালে ইংরেজ রাজপরিবারের পক্ষ থেকে 'নাইটহুড' উপাধি লাভ করেন।