"স্মৃতিময় কর্মজীবন" বইয়ের ভেতর থেকে: রাষ্ট্রীয় কর্মসম্পাদনের ব্রত গ্রহণ করে নিষ্ঠা ও নিবেদনের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে গেছেন আমাদের সমাজ, অর্থনীতি, রাজনীতি, সাহিত্য ও সংস্কৃতি অঙ্গনের কীর্তিমান পুরুষ আবুল মাল আবদুল মুহিত। ষাট বছরের দীর্ঘ কর্মময় জীবন তার; বৈচিত্র্যে, বহুমুখিতায়, বর্ণাঢ্যতায় তা অতুলনীয় বললেও অত্যুক্তি হবে না। গত শতকের পঞ্চাশের দশকের মধ্যভাগে রাষ্ট্রের সেবাব্রত গ্রহণ করার অব্যবহিত পর পাকিস্তান নামক রাষ্ট্রটি বিপথগামী হয়েছে, ভূলুষ্ঠিত হয়েছে গণতন্ত্র ও মানবাধিকার, মানুষের বুকের উপর চেপে বসেছে সামরিক শাসনের জগদ্দল পাথর। শুধু তাই নয়, পাকিস্তানি রাষ্ট্রশক্তি আমাদের এই ভূখণ্ডকে নানাভাবে শােষণ করেছে। আমাদের সােনালি পাটের উপর ভিত্তি করে তাদের পশ্চিম পাকিস্তানকে গড়ে তুলেছে। এদেশের জনগণ ও রাজনীতিবিদরা হাজার মাইলের দূরত্বে অবস্থিত দুই অংশের পাকিস্তানকে সুদৃঢ় করার জন্য অনেক ত্যাগ স্বীকার করেছে। কিন্তু এক পর্যায়ে দেখা গেল যে, এই সম্পর্কের মধ্যে এদেশের ত্যাগ স্বীকার করাটাই হলাে মূল বিষয়, সেখানে পাওনার কিছু থাকল না। পরিবর্তে পূর্ব পাকিস্তান যখন স্ব-শাসনের মাধ্যমে নিজেদের সম্পদে নিজেদের দেশটিকে গড়ে তুলতে দাবি জানাল, সেই দাবিটি গৃহীত তাে হলােই না বরং তাকে দলনের জন্য পশ্চিম পাকিস্তান একটি জঘন্য যুদ্ধে লিপ্ত হলাে। তখন দেশবাসীর সঙ্গে একাত্ম হয়ে বিদেশের কূটনৈতিক দায়িত্ব ধুলােয় ঝেড়ে ফেলে আবুল মাল আবদুল মুহিত সেবকের বদলে যােদ্ধার ভূমিকা গ্রহণ করেছেন। স্মৃতিময় কর্মজীবন শীর্ষক এই বইটি মূলত সেই ঘটনাধারারই সত্যনিষ্ঠ বিবরণ। রাষ্ট্রীয় ঘটনাস্রোতের পাশাপাশি পরিবারপরিজনসহ তাঁর ব্যক্তিজীবনের নানা অন্তরঙ্গ চিত্রও এখানে উঠে এসেছে । আমাদের দেশের আর্থসামাজিক ও রাজনৈতিক ইতিহাস চর্চার ক্ষেত্রে এটি মূল্যবান সহায়ক গ্রন্থ হিসেবে বিবেচিত হবে।
আবুল মাল আবদুল মুহিত লেখক, গবেষক, উন্নয়ন বিশেষজ্ঞ, প্রশাসক, পরিবেশবিদ ও অর্থনীতিবিদ আবুল মাল আবদুল মুহিত সিলেটের এক সম্ভান্ত পরিবারে ২৫ জানুয়ারি, ১৯৩৪ সালে জন্মগ্রহণ করেন। কৈশোরে ছাত্র সংগঠন এবং ভাষা আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা রাখেন এবং ১৯৫৫ সালে সলিমুল্লাহ হল ছাত্র সংসদের সহ-সভাপতি ও সর্বদলীয় কর্মপরিষদের আহবায়ক থাকাকালে কিছুদিন জেলেও ছিলেন। কর্মজীবনে পূর্ব পাকিস্তান এবং কেন্দ্রীয় পাকিস্তান সরকারের প্রায় ১৩ বছর চাকরি করে ওয়াশিংটনে পাকিস্তান দূতাবাসে অর্থনৈতিক কাউন্সিলর হিসেবে নিযুক্তি পান ১৯৬৯ সালে। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে ৩০ জুনে তিনি আনুগত্য পরিবর্তন করেন এবং মার্কিন কূটনৈতিক, শিক্ষামহল ও সংবাদমাধ্যমে প্রচারণায় ও জনমত গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ২৫ বছরের সরকারি চাকরির পর বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব হিসেবে স্বেচ্ছা অবসরে যান ১৯৮১ সালে । ১৯৮২ এবং ১৯৮৩ সালে বাংলাদেশ সরকারের অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রী ছিলেন এবং ESCAP-এর চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। তার নেতৃত্বে ১৯৯৭ সালে বাংলাদেশে পরিবেশ আন্দোলন গড়ে উঠে। প্রথমে ‘পরশ এবং পরে বাপা'-এর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এ্যালামনাই এসোসিয়েশনেরও পরপর দুই মেয়াদে সভাপতি ছিলেন। ২০০১ সালে আওয়ামী লীগে যোগ দেন এবং উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য হন। ২০০৮ সালে জাতীয় সংসদের সদস্য নির্বাচিত হয়ে বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৪ সালের নির্বাচনে পুনরায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে পেয়েছেন অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব।