"চার্বাকেতর ভারতীয় দর্শন ৩ (পূর্ব-মীমাংসা)" বইটির প্রথম ফ্ল্যাপ-এর লেখাঃ মীমাংসাশাস্ত্র নিঃসংশয়ে বৈদিক বা বেদমূলক দর্শন হলেও অনেকাংশে তা ব্যাকরণ এবং ন্যায়শাস্ত্রের বাদাৰ্থ বা শব্দখণ্ডের মতাে। পদশাস্ত্র হলাে ব্যাকরণ এবং প্রমাণশাস্ত্র হলাে ন্যায়। এই পদবাক্যপ্রমাণ-তত্ত্বজ্ঞ না হলে প্রাচীনকালে কেউ সুপণ্ডিত বলে বিবেচিত হতেন না। এই দর্শনের প্রধান উপজীব্য হলাে বেদের অপৌরুষেয়ত্ব ও নিত্য প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বৈদিক কর্মকাণ্ডের স্বতসিদ্ধতা প্রমাণ করা। একদিকে বিভিন্ন দেব-দেবী ও ঈশ্বরের অস্তিত্বে প্রচণ্ড অবিশ্বাসী এ দর্শনের বস্তুবাদী বিজ্ঞানসম্মত যুক্তিস্রোতের পাশাপাশি যজ্ঞানুষ্ঠানের মতাে একটি আদিম কুসংস্কারের মধ্যে যাদুময়তা আরােপ প্রচেষ্টার চূড়ান্ত অবৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি প্রাচীন দর্শনটিকে জটিল স্ববিরােধিতায় ঠেলে দিয়েছে বলে একালের বিদ্বানেরা মনে করেন। এটি সাংখ্য, বৌদ্ধ বা ন্যায়-বৈশেষিক দর্শনের মতাে একটা সুশৃঙ্খল সুসংহত দার্শনিক প্রস্থানরূপে গড়ে ওঠেনি, গড়ে উঠেছে যাগযজ্ঞসম্পৃক্ত মন্ত্ররাশির অর্থবিচারকে উপলক্ষ্য করে। এই দর্শনের মুখ্য উদ্দেশ্য কোন বিশুদ্ধ দার্শনিক তত্ত্বের উদ্ভাবন ও প্রচার নয়। মুখ্য উদ্দেশ্য যাগযজ্ঞের সামাজিক প্রয়ােজন অক্ষুন্ন ও অব্যাহত রাখার জন্য মন্ত্ৰার্থবিচার। এই বিচারের প্রসঙ্গেই প্রয়ােজনানুরূপ দার্শনিক যুক্তিতর্ক বিক্ষিপ্তভাবে উপস্থিত হয়েছে। দর্শন-চর্চা জ্ঞান-চর্চারই নামান্তর। প্রাচীন ভারতীয় দর্শন আমাদের বিশুদ্ধ জ্ঞানচর্চার প্রাচীনতম নিদর্শন। কিন্তু বিশুদ্ধ দর্শনচর্চায় বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা যে নিতান্তই হতাশাজনক তা বােধকরি বলার অপেক্ষা রাখে না। সেক্ষেত্রে রণদীপম বসু’র বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে বিশ্লেষিত ভারতীয় দর্শন সিরিজের ‘চার্বাকের ভারতীয় দর্শন-৩ (পূর্ব-মীমাংসা)' গ্রন্থটি এ অপবাদ মােচনে কিছুটা হলেও গতিশীলতা আনবে তা জোর দিয়েই বলা যেতে পারে।