"বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থা এবং নিম্ন আদালতের বিচার" বইটির প্রথম ফ্ল্যাপ-এর লেখাঃ বিচার মানব জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অধ্যায়। অধিকাংশ মানুষকেই কখনাে না কখনাে বিচার চাইতে বা করতে হয়। তবে সব বিচার রাষ্ট্রের আইনি কাঠামােতে পড়ে না। অনেক বিচার সামাজিক আইনের বা রীতিনীতির আয়তায় হয়ে থাকে। রাষ্ট্রের আইনি কাঠামাে তৈরি হওয়ার আগে সামাজিক রীতিনীতি মেনেই বিচার করা হতাে। এখনাে সামাজিক আইন বা রীতিনীতির কিছু কিছু প্রচলন রয়েছে। এই গ্রন্থটিতে বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থার ক্রম বিকাশের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস তুলে ধরা হয়েছে। তাছাড়া গ্রন্থটিতে রয়েছে বাংলাদেশের অধস্তন আদালতের বিচারক ও বিচারের কথা। লেখক অনেকটা স্মৃতিকথা আকারে অধস্তন আদালতের বিচারের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেছেন। স্মৃতিকথা memoir শুধু স্বীয় অভিজ্ঞতার বর্ণনা নয়। এতে পাওয়া যায় সমসাময়িক কালের সমাজ চিত্র, রাষ্ট্রিক তথ্য এবং যশস্বী মানুষদের দর্শন ও জীবনাচার। এতে আরাে থাকে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য প্রেরণাদায়ক দিক-নির্দেশনা। লেখকও অভিন্নভাবে তার অভিজ্ঞতার বর্ণনা দিয়েছেন। লেখক এ. কে. এম. আবদুল আউয়াল মজুমদার একজন নিষ্ঠাবান, কর্মযােগী, সেবাবান্ধব, শুদ্ধাচার-সমর্থক এবং ন্যায়ব্রতী কর্মকর্তা। তিনি যখন যেখানেই কাজ করেছেন, সেখানেই হৃদয় উজাড় করে দিয়ে গভীর মনােযােগের সাথে অর্পিত দায়িত্ব পালনের চেষ্টা করেছেন। তিনি ১৯৮৬-৮৭ সালে কিশােরগঞ্জ সদর উপজেলায় এবং ১৯৮৭-৮৮ সালে ময়মনসিংহ সদর উপজেলায় উপজেলা ম্যাজিস্ট্রেট ছিলেন। ১৯৯৬-৯৮ সালে গাজীপুর জেলার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এবং ২০০১ সালে ফরিদপুর জেলার জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ছিলেন। বিচারক জীবনে তিনি কিভাবে দায়িত্ব পালন করেছেন, দায়িত্ব পালনকালে কী কী অনুকূল ও প্রতিকূল অবস্থার সম্মুখীন হয়েছেন, কী কী ধরনের মামলার বিচার করেছেন, ওই সকল বিষয়ে বিশদভাবে আলােকপাত করেছেন। তিনি বিনম্র শ্রদ্ধায় ও কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করেছেন তার বিচারক জীবনের কয়কেজন প্রিয় অভিভাবককে। তিনি বিচার কাজ দ্রুত নিষ্পত্তিকরণ ও মামলার জট কমানাের কিছু পথ ও পন্থার কথা উল্লেখ করেছেন। এতে নবীন বিচারকদের জন্য রয়েছে উদ্দীপ্ত হওয়ার মত দিক-নির্দেশনা। গ্রন্থটি তথ্যবহুল ও দিক-নির্দেশনামূলক। লেখক গ্রন্থে সাবলীল ও শ্রুতিমধুর ভাষার বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থা এবং স্বীয় অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরেছেন। আশা করি গ্রন্থটি সুখপাঠ্য ও সমাদৃত হবে।