ফ্ল্যাপে লিখা কথা রাজনীতিবিদ হিসেবেই সমধিক পরিচিত। কিন্তু সম্প্রতি প্রায় অর্ধশতাব্দীর এই পরিচয়টি ছাপিয়ে উঠেছে তার লেখক-গবেষক-কবি খ্যাতি। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক হওয়া সত্ত্বেও আত্নপ্রাচরে অনীহ নূর-উল-আলম লেনিন। লিখেন কম। তবে লিখেন ভেবে-চিন্তে। রাষ্ট্র-রাজনীতি, সমাজ-অর্থনীতি এবং সংস্কৃতির নানা প্রসঙ্গে বিজ্ঞান-মনস্ক আধুনিক দৃষ্টিভঙ্গি ও সত্যাশ্রয়ী মুক্তচিন্তা তা লেখালেখি এবং কর্মকাণ্ডের প্রধান বৈশিষ্ট্য । তিনি যেমন ব্যাখ্যা করেন, তেমনি পরিবর্তনের জন্য কাজও করেন। তার লেখায় নেই চটকাদার জনতুষ্টিবাদিতাম নেই অসিহিষ্ণু সংকীর্ণ দলীয় দৃষ্টিভঙ্গি। পৃথিবী এবং ঘটনাপুঞ্জিকে তিনি দেখের বহুকৌণিক-বহুমাত্রিক আলোকসম্পাতে। তার লেখার প্রসাদগুণ যেমন যুক্তিবাদিত, তথ্য-নিষ্ঠতা তেমনি তার গদ্যভাষ্যের অসাধারণ নির্মাণ শৈলী।
এই গ্রন্থের কলাম নিবন্ধগুলো ২০০৩ সাল থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত সময়কালে রচিত ও বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত। ওইসময়কালে রাষ্ট্র ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত ছিলেন বেগম খঅলেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকার এবং রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিনের নেতৃত্বে গঠিত স্বল্পায়ু তত্ত্ববধায়ক সরকার। এ সময়কালটা চিহ্নিত হয়ে আছে রাজনৈতিক সহিংসতা, অস্থিরতাম জঙ্গিবাদের সশস্ত্র উত্থান , সামগ্রিক দুর্বৃত্তায়ন, গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান ধ্বংস এবং সংঘাতময় ভবিষ্যতের গভীর অনিশ্চয়তার দ্বারা। নূহ-উল-আলম লেনিন কবল দলীয় দৃষ্টিকোণ থেকে নয়, সামগ্রিক জাতীয় স্বার্থের কথা বিবেচনায় মুক্ত-মনে এই সময়কালের রাজনৈতিক গতি-প্রকৃতি বিশ্লেষণ করেছেন এবং সম্ভাব্য সংকট উত্তরণে জন-আকাঙ্ক্ষার পাশাপাশি নিজস্ব অনুধ্যানও এ গ্রন্থে তুলে ধরেছেন।
জন্ম : ১৭ এপ্রিল, ১৯৪৭। বিক্রমপুরের রাণীগাঁও গ্রামে। সর্বক্ষণের রাজনৈতিক কর্মী লেনিন লিখেছেন কম। সম্প্রতি নিয়মিত লিখছেন বিভিন্ন সংবাদপত্রে ও সাময়িকীতে। তার রচিত গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে ‘আগামীর অন্বেষা', 'ব্রাত্যজন কথা’, ‘স্বাধীনতা ও উত্তরকাল', ‘সর্বব্যাপী বঙ্গবন্ধু’, ‘সমুখে শান্তি পারাবার’, বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড প্রতিবাদের প্রথম বছর’, ‘স্বাধীনতার সন্ধানে, ‘বঙ্গবন্ধু ও বাঙালির স্বপ্ন', এবং মৌলবাদ জঙ্গিবাদ ও সাম্প্রদায়িকতা'। এছাড়া একটি কাব্যগ্রন্থ ‘স্বপ্ন করপুটে। তাঁর সম্পাদিত গ্রন্থের ভেতর রয়েছে ‘তেভাগা সগ্রাম’, ‘একবিংশ শতকে অভিযাত্রা’, ‘জুম পাহাড়ে শান্তির ঝরনাধারা’, ‘আওয়ামী লীগের গৌরবের OG 769', 'Valle of Death', 'Fanatic Extremism in Bangladesh', তেভাগার কথা ও বাংলার কৃষক আন্দোলন এবং দুঃশাসনের চার বছর : সংকট ও উত্তরণের পথ’ প্রভৃতি। সমাজ-অর্থনীতি-সংস্কৃতি বিষয়ক একটি ত্রৈমাসিক মননশীল সাময়িকী ‘পথরেখা’ ও প্রকাশিত হচ্ছে তাঁরই সম্পাদনায়। মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক লেনিন বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন ১৯৭৩ থেকে ১৯৭৬ সাল পর্যন্ত। বাংলাদেশ কৃষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক এবং নেতৃস্থানীয় কমিউনিস্ট হিসেবে বামপন্থি। আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন দীর্ঘদিন। বর্তমানে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক।