"খনার বচন" বইটির প্রথম অংশের লেখাঃ প্রাচীনকাল থেকে সমাজের বিভিন্ন স্তরে খনার বচনের প্রয়ােজনীয়তা মানুষ উপলব্ধি করেছে। বিভিন্ন প্রাকৃতিক বিষয় যেমন, হাতগণনা, শস্যগণনা, বন্যা, বৃষ্টি, কুয়াশা, বর-গণনা, জন্ম-মৃত্যু গণনা, যাত্রাকালে শুভ-অশুভ গণনা, গ্রহ-নক্ষত্র সম্বন্ধে গণনা প্রভৃতি ক্ষেত্রে খনার বচন যে কত নির্ভুল তা নীচের কিছু শ্লোকের দিকে তাকালেই বােঝা যাবে। যেমন- ভরা হতে শূন্য ভাল যদি ভরতে যায়। আগে হতে পিছে ভাল যদি ডাকে মায়। খালি কলসী দেখে যাত্রা করলে তা শুভ হয় না। কিন্তু যদি সেই কলসীতে জল ভরতে যাওয়ার দৃশ্য দেখে কেউ যাত্রা করে তা শুভ সূচনা করে। যাত্রা করার আগে মায়ের ডাক ভালাে, কিন্তু যাত্রা করে বেরিয়ে যাবার পর মা যদি পেছন থেকে ডাকে তা আরাে মঙ্গলের সূচনা করে। সােল চাষে মূলা। তার অর্ধেক তুলা তার অর্ধেক ধান। বিনা চাষে পান। অর্থাৎ ১৬ দিন চাষ করার পর সেই জমিতে মূলা লাগালে ভালাে জাতের ফলন পাওয়া যায়। তুলা লাগানাের জমি ৮ দিন চাষ করতে হয়। ধানের জমি ৪দিন চাষ করে ধান লাগালে ভালাে ফসল পাওয়া যায়। পানের জমিতে চাষের প্রয়ােজন হয় না। পূর্ণিমা অমাবস্যায় যে ধরে হাল তার দুঃখ হয় চিরকাল। তার বলদের হয় বাত। ঘরে তার না থাকে ভাত। পূর্ণিমা বা অমাবস্যায় হাল ধরা উচিত নয়। ধরলৈ চিরকাল দুঃখ পেতে হয়। বলদ বাত রােগে পঙ্গু হয়ে যায়। চাষ না করার ফলে তার ঘরে ভাত জোটে না। থেকে বলদ না বয় হাল। তার দুঃশ সর্বকাল। যার বলদ থাকতেও সে মায়া করে খাটায় না, তার বলদ শুধু বসে খায়। ফলে বলদের পেছনে শুধু শুধু খরচ হয় এবং জমিতে কোন চাষ হয় না। ফলে খাবারের অভাব দেখা দেয়। মানুষ বসে খেলেও একই ফল হয়। বাড়ির কাছে ধান গা। যার মার আছে ছা। চিনিস বা না চিনি। খুঁজে দেখে গরু কিনিস। বাড়ির কাছে ধান জমি থাকলে এবং তাতে চাষ করলে লাভবান হওয়া যায় বেশী। কারণ চুরি যাবার ভয় থাকে না এবং পাহারা দেবার জন্য পয়সা দিয়ে তােক রাখার দরকার হয় না। সুযােগ বুঝে খুঁজে দেখে যদি গরু কেনা যায় তাতে না চিনলেও বেশী লাভবান হওয়া যায়।