পশ্চিমা সভ্যতা যদি দর্শন এবং নন্দনতত্ত্বে প্রেরণা পাওয়ার জন্য গ্রিসের দিকে তাকিয়ে থাকে, সত্যি বলতে কী, এখনো সেখানে রোমানদেরই আধিপত্য যারা চিরকালের জন্য আমাদের জীবনযাপন বদলে দিয়েছে, ন্যায়ের প্রতি আমাদের আদর্শ তৈরি করেছে, সরকার গঠন থেকে শুরু করে শান্তি এবং সুবিচারের প্রতি আমাদের সংগ্রামের প্রতীক হিসেবে কাজ করছে। রোমান প্রজাতন্ত্র তার সৎ জীবনযাপন, সাহস, নৈতিকতা আর উপযুক্ত বিচার ইত্যাদি গুণের কারণে আমাদের নিজ নিজ প্রজাতন্ত্রের আদর্শ হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে। আর রোমান প্রজাতন্ত্রের সাহসী জনগণ তথা সৈনিক (শেষের দিকের রোমান ঐতিহাসিকগণ যে মনীষীদের কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করে গেছেন) আমাদের পথিকৃত জ্ঞানীদের জ্ঞান বিকাশের উৎস ছিলেন। এই বইয়ে, আইজাক আসিমভ ছোট্ট এক উদীয়মান সভ্য জাতির কথা বলেছেন যাদের স্বপ্নের পাশাপাশি অর্জনটাও ছিল অসামান্য। উদ্ধত, নির্ভীক আর ভয়ানকভাবে আত্মমর্যাদাসম্পন্ন জাতি, রোমানরা ইতালীয় উপদ্বীপ অঞ্চলের পাঁচশ’ বছরের ইতিহাসে ছিল সবচেয়ে শক্তিশালী এবং অদম্য জাতি। আদিকাল থেকে মানুষের ইতিহাসে রোমান সা¤্রাজ্যের সময়টাই ছিল একমাত্র সময় যখন কিনা পশ্চিমারা সুখে-শান্তিতে ছিল। সা¤্রাজ্য বৃদ্ধির তীব্র আকুতি পর্বতে এবং দূরবর্তী সমতল ভূমিতে অসংখ্য যুদ্ধের জন্ম দিয়েছে, সৃষ্টি করেছে অসাধারণ বীরোচিত সব কাহিনির। এমনকি রোমান সিনেট কিংবা সেনাবাহিনীতেও প্রতিমুহূর্তে তৈরি হয়েছে নাটকীয় পরিবর্তন, কৌতূহল উদ্রেগকারী রাজনীতিও ছিল রোমান প্রজাতন্ত্রের শক্তিশালী দিক। ডক্টর আসিমভের গ্রিসের ইতিহাস বই সম্পর্কে বলতে গিয়ে হর্ন বুক বলেছিলেন, “আসিমভ এমন একজন লেখক যিনি যে কোনো বিষয় তুলে নিয়ে লেখা শুরু করলেই তাতে প্রাণসঞ্চার করতে পারেন, আর লেখায় জ্ঞানগর্ভ বিষয়ের অবতারণা করার জন্য তার লেখার প্রতি বরাবরই মানুষের আগ্রহ দেখতে পাওয়া যায়। সেইভাবে চিন্তা করলে এই বইটির গুরুত্ব তার অন্য যে কোনো বইয়ের তুলনায় কম নয়, আর এর সাবলীলতা এবং স্পষ্টতা অবশ্যই প্রশংসার যোগ্য।” এই বইয়ের পরেও তিনি রোমের ইতিহাস উদঘাটনে যেসব কাজ করে গেছেন, তা-ও যথেষ্ট প্রশংসার দাবিদার। এই বইয়ের কাহিনি রোমের সবচেয়ে বিজয়োন্মুখ সময়ে গিয়ে শেষ হয়। বিশাল সাম্রাজ্যে এর পরের চমকপ্রদ সব কাহিনি এখনো না বলাই রয়ে গেছে।
বিংশ শতকের অন্যতম সেরা লেখক আইজ্যাক আসিমভ সাহিত্যজগতের এক উজ্জ্বল নাম। তিনি ১৯২০ সালের ২ জানুয়ারি সোভিয়েত রাশিয়ার পেত্রোভিচি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। শৈশবে পরিবারের সাথে পাড়ি জমান যুক্তরাষ্ট্রে। সেখানে ব্রুকলিনে শুরু করেন নতুন জীবন। ছোটবেলায়ই তাঁর বাবা তাকে লাগিয়ে দেন নিজেদের ক্যান্ডিশপে দোকানদারির কাজে। ছোট্ট আসিমভ পাঁচ বছর বয়সেই নিজে নিজে পড়তে শিখে যান। মাত্র ১৫ বছর বয়সে তিনি হাই স্কুল শেষ করেন এবং কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হন। এখান থেকেই তিনি ১৯৩৯ সালে ব্যাচেলর অব সায়েন্স এবং পরবর্তীতে এমএ ও পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৫৫ সালে বোস্টন ইউনিভার্সিটিতে তিনি বায়োকেমিস্ট্রি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন। পরবর্তীতে অধ্যাপক হিসেবে পদোন্নতি হলেও তিনি লেখালেখিতে মনোনিবেশ করতে নিয়মিত শিক্ষকতা করেননি। ১৯৫০ সালে বের হয় তাঁর প্রথম বই ‘পেবলস ইন দ্য স্কাই’, যা জয় করে নেয় সাধারণ পাঠকের মন। এরপর একের পর এক লেখা বের হতেই থাকে তাঁর। তাঁর সৃষ্ট সাহিত্যকর্মের মূল আধেয় হলো সায়েন্স ফিকশন, পপুলার সায়েন্স, রহস্য ইত্যাদি। সৃজনশীল মেধাসম্পন্ন এই লেখক ৫০০টিরও বেশি বই রচনা ও সম্পাদনা করেছেন। জনপ্রিয় লেখক আইজ্যাক আসিমভ এর বই সমূহ হলো, ‘আই,রোবট (১৯৫০)’, ‘ফাউন্ডেশন (১৯৪২)’, ‘দ্য এন্ড অব ইটারনিটি (১৯৫৫)’, ‘দ্য কেভস অব স্টিল (১৯৫৩)’, ফ্যান্টাস্টিক ভয়েজ (১৯৬৬)’ ইত্যাদি। তাঁর রচিত উপন্যাসই শুধু নয়, তুমুল জনপ্রিয় তাঁর ছোটগল্পগুলোও। আসিমভ এর রচনাগুলো থেকে নির্মিত হয়েছে বেশ কয়েকটি বড় বাজেটের চলচ্চিত্র, যার মাঝে আছে ‘আই,রোবট (২০০৪)’, ‘বাইসেন্টেনিয়াল ম্যান (১৯৯৯)’ ইত্যাদি। বিশ্বজোড়া প্রকাশিত আইজ্যাক আসিমভ এর বই সমগ্র জয় করে নিয়েছে সায়েন্স ফিকশন পাঠকদের মন। তাঁর বই থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে বিশ্বের নামিদামী পরিচালক তৈরি করেছেন চলচ্চিত্র, বানিয়েছেন সিরিজ। ১৯৮৭ সালে ‘সায়েন্স ফিকশন রাইটার্স অ্যাসোসিয়েশন অব আমেরিকা’ তাকে ‘গ্র্যান্ড মাস্টার অব সায়েন্স ফিকশন’ সম্মানে ভূষিত করে। তাঁর লেখা ‘ফাউন্ডেশন (ট্রিলজি)’ ১৯৬৬ সালে এনে দেয় ‘হুগো এওয়ার্ড’, ‘দ্য গডস দেমসেল্ভস’ এনে দেয় একইসাথে ‘হুগো’ ও ‘নেবুলা’ অ্যাওয়ার্ড। কল্পবিজ্ঞানের এই মহা কারিগর ১৯৯২ সালের ৬ এপ্রিল ব্রুকলিনে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।