ফ্ল্যাপে লেখা কথা গৌরবমন্ডিত মহান মহান তেভাগা সংগ্রামের পটভূমি এবং কৃষক আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিত প্রায় সম্পূর্ণ ভিন্ন। তেভাগা সংগ্রাম গড়ে উঠেছিল ব্রিটিশ শাসনামলের অন্তিম পর্বে এবং শেষ হয় দেশ বিভাগ ও পাকিস্তান সৃষ্টির দুই বছরের মধ্যে । তখনো চিরস্থায়ী বন্দ্যোবস্তের ফলে সৃষ্ট জমিদারী প্রথার অনুষক জোতদারদের বিরুদ্ধে ভাগচাষীদের সংগ্রাম তেভাগা কায়েম তথা বিজয় অর্জিত না হলেও এই সংগ্রাম ব্রিপিশ শাসন ও জমিদারী ব্যবস্থার অবসান। আজ বাংলাদেশ স্বাধীন। এখানে ব্রিটিশ নেই, পাকিস্তানও নেই। নেই জমিদারী ব্যবস্থা। তবে ‘মহাজনী ও বর্গাসহ কতিপয় সামন্ত অবশেষ নানা ধরনের উত্তরণ কালীন বৈচিত্র্যময় রূপ নিয়ে আজও বিরাজমান।’ এতদসত্ত্বেও সামন্ততন্ত্র নয় “বর্তমানে ধনবাদই গ্রামীণ অর্থনীতির মুখ্য ধারায় পরিণত হয়েছে।” কিন্তু এই ধারা চিরায়ত ধনবাদের পথ ধরে অগ্রসর হচ্ছে না। আমাদের মতো দেশে আজকের দিনে তা সম্ভবও নয়। আমাদের অর্থনীতির মূল খাতে যেহেতু কৃষি এবং যেহেতু বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের বসবাস গ্রামে, সে কারণে “গ্রামের কৃষককুল এবং কৃষকের উৎপন্ন ফসল আজ সাম্রাজ্যবাদ নয়। উপনিবেশবাদ ও তাদের সহযোগী মুৎসুদ্দী লুটেরা ধনিকদের শোষণের প্রধান লীলা ক্ষেত পরিণত হয়েছে।” সাম্রাজ্যবাদের সহযোগিতায় পাকিস্তানী বৃহৎ ধনিকগোষ্ঠীর প্রাথমিক পুঁজি গঠিত হয়েছিল, তেমনি স্বাধীন বাংলাদেশেও বিশেষতঃ পঁচাত্তর পরবর্তীকালে এই প্রক্রিয়াটিই অনুসৃত ও বেগবান হচ্ছে।
আনু মাহমুদ তরুণ অর্থনীতিবিদ, প্ৰবন্ধকার, কলাম লেখক ও গ্রন্থকার হিসেবে ইতোমধ্যে বেশ পরিচিতি অর্জন করে সুধী পাঠক সমাজে একটি স্থান আয়ত্ত করতে সক্ষম হয়েছেন। যদিও তিনি তার কর্মপরিসরে সরকারি কর্মকর্তা ও এ্যাডমিনেস্ট্রেটিভ সার্ভিসের সদস্য হিসেবে মোঃ মাহমুদুর রহমান নামেই সমধিক পরিচিত। বর্তমানে তিনি বাংলাদেশ সরকারের উপসচিব এবং জাতীয় গ্ৰন্থকেন্দ্রের পরিচালক হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। আনু মাহমুদ বেশ সময় ধরে লেখা-লেখির সাথে জড়িত রয়েছেন এবং অনেক চড়াই উৎরাই করে দীর্ঘ পথ পরিক্রমার মাধ্যমে পরিস্ফুটিত হয়েছেন গ্রন্থকারের বর্তমান অবস্থানে এবং সংগ্রহের ঝুলিতে অর্জন করেছেন আর্থ-সামাজিক সমস্যা সম্পর্কিতসহ বহু বিষয় ভিত্তিক গ্রন্থের সফলতা, যা ইতোমধ্যে পাঠক সমাজে বেশ সমাদৃতও হয়েছে। তাঁর লেখালেখির শুরু হয়েছে সেই ছাত্র অবস্থা থেকে, আর তা ক্ৰমান্বয়ে শিকড় গেড়ে পত্র পল্লবে শোভিত হয়ে শাখা বিস্তার করে বর্তমানে রূপ নিয়েছে কাণ্ডে, বৃক্ষে। কিন্তু তার প্রত্যাশা রয়েছে একে ব্যাপক প্রসার ঘটিয়ে এক বিরাট বটবৃক্ষের রূপ দেয়ার। লেখালেখির জগতে যেমন জড়িযে আছেন তেমনি আর্থ-সামাজিক সংগঠনের সাথে। তাঁর স্ত্রী আনোয়ারা মাহমুদ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক। তাদের দুই সন্তান চাঁদনি ও ইযু। তিনি বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ এবং সাবেক সংসদ সদস্য, জনাব মজিবর রহমান তালুকদারের দ্বিতীয় সন্তান।