"এমিলিয়ে ও সুভাষঃ এক অনন্য সম্পর্কের কাহিনি" বইয়ের ফ্ল্যাপের লেখা: সুভাষচন্দ্র এবং তাঁর পত্নী এমিলিয়ের গভীর সম্পর্কের কথা নেতাজির জীবনের এক স্বল্পচেনা অধ্যায়। ভিয়েনা শহরে ১৯৩৪ সালের জুন মাসে তাঁদের প্রথম সাক্ষাৎ, ডিসেম্বর ১৯৩৭-এ অস্ট্রিয়ার। বাদগাস্টাইন পাহাড়ি শহরে গােপন বিবাহ। ফেব্রুয়ারি ১৯৪৩ সালে পত্নী এমিলিয়ে এবং নবজাত কন্যা অনিতাকে ইউরােপে রেখে নেতাজি পূর্ব-এশিয়াতে স্বাধীনতা সংগ্রামে নেতৃত্ব দিতে চলে গেলেন। এ জীবনে দু’জনের আর দেখা হল না। সুভাষ ও এমিলিয়ের যখনই সাময়িক বিচ্ছেদ ঘটত নিয়মিত পত্রালাপের মধ্য দিয়ে পরস্পর যােগাযােগ রেখে চলতেন। ভিয়েনার এক মধ্যবিত্ত পরিবারে ১৯১০ সালে এমিলিয়ের জন্ম। ১৯৯৬ সালে তাঁর মৃত্যু হয়। তিনি আমৃত্যু তাঁর স্বামী নেতাজি সুভাষচন্দ্রের স্মৃতি সযত্নে লালন করেছেন। ভারতের প্রতি এমিলিয়ের ছিল অবিচল ভালবাসা ও আনুগত্য। কন্যা অনিতাকে তিনি এক হাতে মানুষ করেছেন। তার ছিল প্রখর আত্মসম্মানবােধ। নেতাজির সংগ্রামের সাথী এই নারী প্রচারের আলাে থেকে দূরে থাকতে পছন্দ করতেন। নেতাজির ভ্রাতুস্পুত্র শিশিরকুমার বসুর প্রতি এমিলিয়ে ছিলেন অত্যন্ত স্নেহশীল। ১৯৫৫ সালে শিশিরের বিবাহের পর তাঁর স্ত্রী কৃষ্ণা বসু এমিলিয়ের একান্ত স্নেহধন্য ও ঘনিষ্ঠ হয়ে পড়েন। কৃষ্ণা দীর্ঘকাল এমিলিয়েকে ব্যক্তিগতভাবে চেনার ও জানার সুযােগ পেয়েছেন। এই বইতে লেখিকা এক সংগ্রামী নারীর নীরব আত্মত্যাগের কথা লিখেছেন, আর। তুলে ধরেছেন এক মহান বিপ্লবী ও এক বিদেশিনীর অনন্য প্রেমকথা।
কৃষ্ণা বসু ২৬ ডিসেম্বর, ১৯৩০-এ ঢাকায় জন্মগ্রহন করেন। তার পিতা হচ্ছেন চারু সি. চৌধুরী এবং মাতা ছায়া দেবী চৌধুরানী। তার পিতা ছিলেন সাংবিধানিক অধ্যয়ন বিশেষজ্ঞ এবং পশ্চিম বঙ্গীয় আইন পরিষদের সচিব। ১৯৫৫ সালের ৯ ডিসেম্বর তিনি শিশির কুমার বসুকে বিয়ে করেন এবং তাদের দুই পুত্র, সুমন্ত্র বসু, সুগত বসু এবং এক কন্যা শর্মিলা বসু। শিশির বসু শরৎ চন্দ্র বসুর পুত্র, সুভাষ চন্দ্র বসুর বড় ভাই। তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যের উপর বি.এ ও এম.এ ডিগ্রী লাভ করেন। ভাটখন্দ সঙ্গীত ইনস্টিটিউট, লখনউ, উত্তর প্রদেশ থেকে সম্মানিত সঙ্গীত-বিশারদ ডিগ্রী লাভ করেন। তিনি কলকাতা সিটি কলেজে ৪০ বছর শিক্ষকতা করেন, যেখানে তিনি ইংরেজি বিভাগের প্রধান ছিলেন এবং আট বছরের জন্য কলেজের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। বসু সক্রিয়ভাবে জনস্বার্থে কাজ করেছেন। তিনি কলকাতা ইনস্টিটিউট অব চাইল্ড হেলথ ট্রাস্টের প্রেসিডেন্ট এবং নেতাজি গবেষণা ব্যুরো কাউন্সিলের চেয়ারম্যান, "বিবেক চেতনা" এর প্রেসিডেন্ট – যেটি হচ্ছে অনগ্রসর নারী ও শিশুদের জন্য একটি অলাভজনক সংস্থা এবং আর্ন্তজাতিক পি.ই.এন এর একজন সদস্য।[স্পষ্টকরণ প্রয়োজন] কৃষ্ণা বসু ইংরেজী ও বাংলা ভাষার কিছু পত্রিকার কলামিস্ট ছিলেন। যেমন: দেশ, আনন্দবাজার পত্রিকা, যুগান্তর, অমৃত বাজার পত্রিকা, দ্য স্টেটসম্যান, টেলিগ্রাফ, ইলাস্ট্রেড উইকলি অব ইন্ডিয়া। তিনি নারী ও শিশু উন্নয়ন এবং প্রতিবন্ধীদের কল্যাণের জন্যও কাজ করেছেন।