“গোয়েন্দা অশোক ঠাকুর সমগ্র -২য় খণ্ড” বইয়ের প্রথম ফ্ল্যাপ এর লেখা : প্রকাশিত হল অন্যতম শ্রেষ্ঠ কথা। সাহিত্যিক সমরেশ বসুর কলমে রচিত গােয়েন্দা অশােক ঠাকুরকে নিয়ে লেখা উপন্যাস ও গল্পের দ্বিতীয় খণ্ড।। বাংলা সাহিত্যে এত কম বয়সী গােয়েন্দা চরিত্র প্রায় নেই বলা যায়। অশােকের রহস্য উদঘাটন পদ্ধতি পাঠককে টানে বিশেষত তার স্বাধীন চলাফেরা, স্বাভাবিক জীবন যাপন এবং বন্ধুত্বের পরিমণ্ডল সৃষ্টির জন্য। লেখক সাধারণ মানুষের সাধারণ জীবন যাপনের মধ্যে থেকেই তুলে এনেছেন রহস্যের বীজ। এখানে স্থান পেয়েছে তিনটি উপন্যাস এবং একটি গল্পগ্রন্থ। স্বর্ণচঞ্চ’ উপন্যাসে ফুটে উঠেছে ছােটখাটো শহরতলির ডাক্তার প্রদ্যোৎ রায়ের স্ত্রী অমিতা রায়ের অন্তর্ধান রহস্য। একটি অস্পষ্ট স্বর’ উপন্যাসেও দেখি ছােট শহরতলির । স্পুটনিক ক্লাব মেম্বারদের পিকনিকের আসর থেকে উধাও হয়ে গেছে উজ্জ্বল এবং উচ্ছল তরুণী জিনা। অশােকের দায়িত্ব নিরুদ্দিষ্ট মেয়েটিকে খুঁজে বার করা। ম্যাকবেথ ও রঙ্গমঞ্চ কলকাতা’ উপন্যাসে আর সি আই এম-এর ম্যানেজিং ডিরেক্টর মিঃ প্রবীর রায়চৌধুরির হত্যা রহস্যকে কেন্দ্র করে ঘণীভূত হয়ে উঠেছে কাহিনী। এছাড়া ‘হ্রেষাধ্বনি’ সংকলনভুক্ত গল্পগুলির পরতে পরতে জড়িয়ে আছে রহস্যের কালাে মেঘ। লেখক সৃষ্ট তরুণ এই গােয়েন্দাটির নানা। মুন্সিয়ানা পাঠককে মানব জীবনের কুয়াশা ঢাকা দিকগুলিকে নতুন করে চেনায়।
সমরেশ বসু (১৯২৪-১৯৮৮) প্রখ্যাত ভারতীয় বাঙালি লেখক, ঔপন্যাসিক। কালকূট ও ভ্রমর তার ছদ্মনাম। তার রচনায় রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড, শ্রমজীবী মানুষের জীবন এবং যৌনতাসহ বিভিন্ন অভিজ্ঞতার সুনিপুণ বর্ণনা ফুটে ওঠে। ১৯৮০ সালে তিনি সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার লাভ করেন। তার শৈশব কাটে বাংলাদেশের বিক্রমপুরে আর কৈশোর কাটে কলকাতার উপকণ্ঠ নৈহাটিতে। বিচিত্র সব অভিজ্ঞতায় তার জীবন ছিল পরিপূর্ণ। এক সময় মাথায় ফেরি করে ডিম বেচতেন। বিচিত্র বিষয় এবং আঙ্গিকে নিত্য ও আমৃত্যু ক্রিয়াশীল লেখকের নাম সমরেশ বসু। দেবেশ রায় তাঁর মৃত্যুতে লেখা রচনাটির শিরোনামই দিয়েছিলেন, 'জীবনের শেষদিন পর্যন্ত তিনি লেখক এবং পেশাদার লেখক'। ১৯৪৩ থেকে ১৯৪৯ সাল পর্যন্ত তিনি ইছাপুরের গান ফ্যাক্টরিতে কাজ করেন। ট্রেড ইউনিয়ন ও ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির একজন সক্রিয় সদস্য ছিলেন তিনি। এ কারণে তাকে ১৯৪৯-৫০ সালে জেলও খাটতে হয়, জেলখানায় তিনি তার প্রথম উপন্যাস ‘উত্তরঙ্গ’ রচনা করেন। জেল থেকে মুক্তি পাওয়ার পর তিনি লেখালেখিকেই পেশা হিসেবে গ্রহণ করেন। কালকূট মানে তীব্র বিষ। এটি তাঁর ছদ্মনাম। 'অমৃত কুম্ভের সন্ধানে', 'কোথায় পাব তারে' সহ অনেক উপন্যাস তিনি এ নামে লিখেছেন। বহমান সমাজ থেকে বাইরে গিয়ে একান্তে বেড়াতে ঘুরে বেরিয়েছেন আর সে অভিজ্ঞতা নিয়ে লিখেছেন ভ্রমণধরমী উপন্যাস । হিংসা, মারামারি আর লোলুপতার বেড়াজালে আবদ্ধ থেকে যে জীবন দুর্বিসহ হয়ে উঠেছিল, সেখান থেকে বেড়িয়ে এসে অমৃতের সন্ধান করেছেন । তাই কালকূট নাম ধারণ করে হৃদয়ের তীব্র বিষকে সরিয়ে রেখে অমৃত মন্থন করেছেন উপন্যাসের মধ্য দিয়ে৷ “অমৃত বিষের পাত্রে”, “মন মেরামতের আশায়”, 'হারায়ে সেই মানুষে', 'তুষার শৃঙ্গের পদতলে' ইত্যাদি এই ধারার উপন্যাস। ছদ্ম নামে লেখা শাম্ব উপন্যাসের জন্য তিনি ১৯৮০ সালের আকাদেমি পুরস্কার পেয়েছিলেন। লেখক হিসেবে সমরেশ আমৃত্যু যে লড়াই করেছেন তার কোনো তুলনা নেই। তাঁর নিজের জীবনই আরেক মহাকাব্যিক উপন্যাস। 'চিরসখা' নামের প্রায় ৫ লাখ শব্দের বিশাল উপন্যাসে সেই লড়াইকে স্মরণীয় করে রেখেছেন তারই পুত্র নবকুমার বসু। ছোটদের জন্যে সৃষ্ট গোয়েন্দা গোগোল অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়। গোগোলকে নিয়ে বহু ছোটগল্প ও উপন্যাস লিখেছেন যা শিশুসাহিত্য হিসেবে সমান জনপ্রিয়তা পেয়েছে। গোগোলের দুটি কাহিনী চলচ্চিত্রায়িতও হয়।