ভূমিকা পশ্চিমবঙ্গ পঞ্চায়েত আইন, ১৯৭৩ পঞ্চায়েতীরাজ সংগঠনের ক্ষেত্রে তিনটি স্তরের ব্যবস্থা রেখেছে। সেই তিনটি স্তর হলো— গ্রাম পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতি ও জিলা পরিষদ। পূর্বেকার পঞ্চায়েতীরাজ ব্যবস্থা পশ্চিমবঙ্গে যে দুটি আইনের উপর প্রতিষ্ঠিত ছিল (যথা—পশ্চিমবঙ্গ পঞ্চায়েত আইন, ১৯৫৭ এবং পশ্চিমবঙ্গ জিলা পরিষদ আইন, ১৯৬৩) তাতে চারটি স্তরের ব্যবস্থা ছিল; যেমন- গ্রাম পঞ্চায়েত, অঞ্চল পঞ্চায়েত, আঞ্চলিক পরিষদ (ব্লক পর্যায়ে) ও জিলা পরিষদ। বর্তমান আইনের মাধ্যমে পশ্চিমবঙ্গের পঞ্চায়েতীরাজ ব্যবস্থাকে নূতন করে সাজিয়ে সর্বভারতীয় ধাঁচে ত্রিস্তর করা হয়েছে। সাধারণভাবে বোঝার সুবিধের জন্য বলা যায়, পুরাতন অঞ্চল পঞ্চায়েত স্তরকে বর্তমানের গ্রাম পঞ্চায়েত স্তরে আনা হয়েছে। তবে যেহেতু লোক সংখার ভিত্তিও হিসেবের মধ্যে আছে সেইজন্য যে সব পুরাতন অঞ্চলে লোকসংখ্যা পনেরো হাজারের বেশী ছিল সেখানে একের বেশী বর্তমানের গ্রাম পঞ্চায়েত তৈরী করা হয়েছে। ব্লক পর্যায়ে, অতীতের আঞ্চলিক পরিষদের বর্তমান নাম পঞ্চায়েত সমিতি। ১৯৭৩-এর আইনে তিনটি স্তরের প্রত্যেকটিতেই প্রত্যক্ষ নির্বাচনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। তার ফলে, পঞ্চায়েতী রাজ ব্যবস্থার অন্যতম মূল লক্ষ্য যা হলো, গণতান্ত্রিক ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ— তার বাস্তবায়ন সম্ভব হবে। পঞ্চায়েত ব্যবস্থার মাধ্যমে গ্রাম থেকে সুরু করে জেলাস্তর পর্যন্ত প্রশাসন ব্যবস্থা, বিশেষ করে সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে, জনকল্যাণমুখী হতে পারবে, কেননা নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিগণ এই পঞ্চায়েত ব্যবস্থার তিনটি স্তরেই স্ব স্ব ক্ষেত্রে স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গীভাবে মিলিত হতে পারবেন । এছাড়া, গ্রামের উন্নয়নের ব্যাপারে গ্রাম পঞ্চায়েত স্বয়ংশাসিত। উপরের স্তরের পঞ্চায়েত সমিতি নীচের স্তরের গ্রাম পঞ্চায়েতের উপর কর্তৃত্বের ভাব নিয়ে নয়, সহযোগী সাহায্যকারীর মনোভাব নিয়ে এগোবেন। যে সব ক্ষেত্রে উন্নয়ন কর্মপ্রকল্পগুলি একটি গ্রাম পঞ্চায়েতের এলাকার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয় এবং যেগুলির রূপায়ণের জন্য উচ্চতর যন্ত্রবিদ্যার প্রয়োজন সেগুলির রূপায়ণের দায়িত্ব পঞ্চায়েত সমিতি বা ক্ষেত্র বিশেষে জিলা পরিষদ বহন করবেন । ঐ একইভাবে জিলা পরিষদ জেলার গ্রামাঞ্চলের সামগ্রিক উন্নয়ন পরিকল্পনার দায়িত্ব বহন করবেন এবং সেই সঙ্গে পঞ্চায়েত সমিতি ও গ্রাম পঞ্চায়েতগুলিকে দেশ গড়ার কাজে সবল ও অর্থবহ অংশগ্রহণে অনুপ্রাণিত করবেন। এই আইনের ব্যাপক প্রচার শুধু যে প্রতিনিধিদের জন্যে তা নয়, গ্রাম বাংলার প্রতিটি নাগরিকের জন্য প্রয়োজন এবং বাংলা ভাষার মাধ্যমেই তা সম্ভব। এই গ্রন্থটি ব্যাপক প্রচলন হলে আমাদের পরিশ্রম সার্থক হবে ।