আধুনিক বাংলা থিয়েটারের ইতিহাসে ১৯৬৯ সালে শ্যামল ঘোষের পরিচালনায় নক্ষত্র প্রযোজিত নয়ন কবিরের পালা একটি মাইল ফলক। এই নাটকে যে বিশিষ্ট নাট্যভাষা নভেন্দু সেন উন্মোচন করেন, তা শ্যামল ঘোষ, বাদল সরকার, অসিত মুখোপাধ্যায়, দ্বিজেন বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো নির্দেশকদের আকৃষ্ট করলেও উদ্ভট, কিমিতিবাদী, বিপ্রতীপ ইত্যাদি পোশাকি অভিধায় চিহ্নিত হয়ে তা অনেকটাই অনাদৃত হয়ে থেকেছে। তাঁর অকালমৃত্যুর চার বছর পর তার নাট্যসংগ্রহের প্রথম খণ্ডের এই প্রকাশে পাঠক ও নাট্যকর্মীরা আবিষ্কার করবেন সেই একান্তই স্বকীয় নাট্যভাষার স্বরূপ। ব্যক্তিজীবন, ব্যক্তিসম্পর্ক, সমাজসত্তা ও রাজনীতি যখন টালমাটাল সংঘাতে জটিল ও বিপর্যস্ত, তখন স্বভাব-স্বাভাবিক থিয়েটার সেই অভিজ্ঞতাকে ধরতে পারে না, দরকার হয় অন্য নাট্যভাষার যা কবিতার গভীর থেকে টেনে আনে ব্যঞ্জনাঋদ্ধ রূপক ছবি। সেই ছবিতে ধরা পড়ে আগ্রাসী ক্ষমতার বিরুদ্ধে প্রতিরোধের স্ফূরণ, আবার সেই প্রক্রিয়ারই মজ্জাগত ব্যর্থতাবোধ, গ্লানি, কখনও বা অসহায়তাও। নভেন্দুর নাট্যভাষার প্রাত্যহিক কথ্যবাণী থেকে কবিতার উড়ালে সাবলীল উত্তরণে চলচ্ছবির যে সহজাত দ্যোতনা তৈরি হয়, তারই মধ্যে থিয়েটারের অধিষ্ঠান।