"ভূগোল অভিধান" বইয়ের ভূমিকা ইতিহাস যদি নাটক হয় তবে ভূগােল তার মঞ্চ। ইতিহাস, রাজনীতি এমনকি ভ্রমণ কাহিনী পাঠেও সঠিক উপলব্ধি হয় না, যদি না যে দেশ বা মহাদেশ নিয়ে আলােচনা সে সম্পর্কে পাঠকের সঠিক সুস্পষ্ট ধারণা থাকে। তাছাড়া স্কুল কলেজে ভূগােল পড়তে হয়, জানতে হয় সূর্য তারা, গ্রহ উপগ্রহ থেকে শুরু করে পৃথিবীর সাগর উপসাগর, নদী, হ্রদ, পাহাড়, আগ্নেয়গিরি, মহাদেশ দেশ নগর জনপদের কথা, খনিজ পদার্থ ও বাণিজ্যিক তথ্য সম্পর্কিত অনেক কিছু। কিন্তু এমন অভিধান বাংলা ভাষায় ছিল না যাতে বর্ণানুক্রমে উল্লেখিত সব তথ্য সবিস্তার জানা যায়। হাজার হাজার বছর ধরে মানুষের বিশ্বপরিচয় এত গভীরতা ও বিস্তৃতি লাভ করেছে যে ভূগােলও আর এখন একটি অখণ্ড বিষয়বস্তু নয়। রাজনৈতিক ভূগােল, বাণিজ্যিক ভূগােল, প্রাকৃতিক ভূগােল, ভূবিজ্ঞান, জ্যোতির্বিজ্ঞান ইত্যাদি ভাগে ভাগ হয়ে গেছে। এই অভিধানে উল্লিখিত সকল বিষয়ই বিস্তারিত ভাবে আলােচিত ও বর্ণানুক্রমে সন্নিবিষ্ট হয়েছে। সূর্য-গ্রহ-তারা, নদী-সমুদ্র-পর্বত-মরুভূমি, খনিজ সম্পদ, বনজ সম্পদ, কৃষি ও শিল্প মূলত এক থেকে বহু বলেই এই সাযুজ্য ঘটানাে সম্ভব হয়েছে। আশা করি সাধারণ ভূগােল, বাণিজ্যিক ভূগােল, ভূতত্ত্ব ও জ্যোতির্বিজ্ঞানের সকল ছাত্রছাত্রী এই কোষগ্রন্থ থেকে তাদের প্রয়ােজনীয় তথ্য খুঁজে পাবেন। ইতিহাস, রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও সাংবাদিক বিভাগের ছাত্রছাত্রীদেরও অভিধানটি কাজে লাগবে। একটানা চল্লিশ বছর দেশ, অমৃত, যুগান্তর, প্রবাসী, বসুধারা ও সম্প্রতিকালে দৈনিক ও সাপ্তাহিক বর্তমান পত্রিকায় যেসব প্রবন্ধ লিখেছি তার সবেরই বনিয়াদ ভূগােল। হাতের কাছে কিছু ভূগােলের বই তাই সবসময় আমাকে মজুত রাখতে হয়। আমার ইতিহাস অভিধান, রাষ্ট্র অভিধান প্রভৃতি আকর গ্রন্থগুলিও ভূগােলের সনিষ্ঠ পাঠক না হলে লেখা সম্ভব হত না। এই অভিধান লিখতে যেসব গ্রন্থ থেকে তথ্য যােগাড় করেছি তার বিস্তৃত তালিকা বইয়ের শেষে লিপিবদ্ধ হয়েছে। স্কুল কলেজের পড়ুয়াদের কথা মনে রেখে বইয়ের ভাষা সরল ও সহজবােধ্য করেছি। আবার সাধারণ জ্ঞান সমৃদ্ধ করতে বা বিশ্বভূমণ্ডলকে জানার আগ্রহে যাঁরা এই অভিধান পড়বেন তাদেরও পূর্ণ পরিতৃপ্তির চিন্তা মনে রেখেছি।