ভুমিকা পরিবেশের উন্নতিকল্পে গোলাপের ভূমিকা অনস্বীকার্য। দেশে দ্রুত শিল্প-প্রসার ঘটার দরুন নগরকেন্দ্রিক সভ্যতায় অন্যান্য ফুলসহ গোলাপের চাহিদা যথেষ্ট বেড়েছে। গোলাপের সাহায্যে নগর ও শিল্পাঞ্চলের ভারসাম্যহীন পরিবেশের উন্নতির প্রচেষ্টা আজকাল বিশ্বের বহু জায়গায় শুরু হয়েছে। তাদের মধ্যে রুশদেশের ডনেক্স শহরের ঘটনা উল্লেখযোগ্য। কয়েক দশক পূর্বে ওই শিল্প-শহরটি ছিল প্রায় মনুষ্যবাসের অযোগ্য। কয়লার খনি, ধাতুনিষ্কাশন ও রাসায়নিক কারখানায় পূর্ণ শহরটির আকাশ ছিল চিমনির ধোঁয়া ও ধাতু চুল্লির আগুনের ঝলকে রক্তিম। বাতাসের শ্বাসরুদ্ধকারী ধুলো, ধাতুবিষ্ঠার (Sludge) স্তূপ ও পথের আবর্জনার আস্তরণ সৃষ্টি করেছিল এক অসহনীয় অবস্থা। কিন্তু আজকের ডনেক্স ওই দিনের নয় ৷ কিরূপে তা’হল ? শহরের মোট জনসংখ্যার সঙ্গে মিলিয়ে দশ লক্ষ গোলাপ চারা লাগানো হয় সেখানে। সবুজের পরিমাণ যথেষ্ট বেড়ে যাওয়ায় শহরের তাপ যথেষ্ট কমে যায়। কমে যায় বাতাসের ভাসমান ধূলিকণা ও কারখানার দূষিত গ্যাস উল্লেখযোগ্যভাবে। গোলাপ লাগানো শুরু করার আগে শহরের পৌর কর্মীদের উদ্যানবিদ্যা প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়। পৌরপিতা-সহ সমস্ত পৌরকর্মীকে প্রশিক্ষণের জন্য যেতে হয় গার্ডেনিং স্কুল-এ। এরূপে সবুজ নগর তৈরির পরিকল্পনা ও কাজের দায়িত্ব ছিল প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কর্মীদের হাতে। আমাদের শহর ও গ্রামগুলিতে গোলাপের মতো সুন্দর ফুলে ভরিয়ে দিতে চাই প্রথমে জনগণের গোলাপ সম্বন্ধে জ্ঞান। এই উন্নয়নশীল দেশে স্বল্প অর্থব্যয়ে তা সম্ভব হতে পারে আঞ্চলিক ভাষায় উপযুক্ত পুস্তক রচনার মাধ্যমে। স্বদেশের ও বিদেশের ভিন্নভাষীদের লেখা গোলাপের ওপর অনেক পুস্তকপুস্তিকা আজ সহজলভ্য। কিন্তু ওগুলি ভিন্নভাষায় লেখা বলে বাংলার খুব কম সংখ্যক লোকের কাছে তা সহজপাঠ্য। তা ছাড়া গোলাপ চাষে আঞ্চলিক সমস্যার সমাধান যা আমাদের সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন তা ওই ধরনের লেখা থেকে পাওয়ার আশা করা যায় না। আঞ্চলিক ভাষায় আঞ্চলিক সমস্যা নিয়ে প্রামাণ্য রচনার একান্ত অভাবই ‘গোলাপ বাগান' লেখার প্রেরণা যুগিয়েছে। বিগত চার দশক ধরে পশ্চিমবাংলার একাধিক অংশে সার্থক গোলাপ চাষের অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে পুস্তকটি রচিত হল।
তিনি ১০ মে ১৯৩৪ সালে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার বাসুদেববেড়্যা গ্রামে। ১৯৫৬ তে বি এ পাশ। গ্রন্থাগার বিজ্ঞানে এবং এনসিসি এর ইনফ্যান্ট্রি শাখায় প্রশিক্ষণ লাভ। সপ্তম বেঙ্গল ব্যাটালিয়নে অফিসার পদে যোগদান, ১৯৬৩; পরে ক্যাপটেন কমিশন লাভ, ১৯৬৯। ঝাড়গ্রাম পলিটেকনিকে এনসি সি অফিসার ও গ্রন্থাগারিকের পদ (১৯৬০-১৯৯২) থেকে অবসর গ্রহণ। ঝাড়গ্রামের সুপ্রসিদ্ধ গোলাপ নার্সারি ‘হর্কালচারাল এরিনা’র প্রতিষ্ঠাতা। মিউটেশন-ব্রিডিং পদ্ধতিতে লতানে ডালিয়ার উদ্ভাবক। দক্ষ উদ্ভিদ-প্রজননবিদ। সুগন্ধি ফুলকে বাণিজ্যিক পণ্য ও শিল্পের কাঁচামাল হিসাবে ব্যবহারের পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছেন। বিজ্ঞানভিত্তিক ফুলচাষ বিষয়ে বাংলা ও ইংরেজি ভাষায় একাধিক জনপ্রিয় বইয়ের লেখক।